X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাঙা-গড়ার ঢাকা!

নাদীম কাদির
০৮ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৮আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৬, ০৯:৫৪

নাদীম কাদির ওহ, ঢাকা! জঙ্গি হুমকি আর যানজট সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার একটি নিজস্ব আবেদন রয়েছে, রয়েছে স্বতন্ত্র এক ধরনের জীবনযাপন। লন্ডনে বসে আমি ওই জীবনটাকে মিস করি- হাস্যকর শোনালেও এটাই সত্যি। এই জীবনটা প্রায়ই বিশাল সব নির্মাণ আর ধ্বংসের মুখোমুখি হয়।
আমি মনে করতে পারি, এক সময় আমরা জানতামই না ঢাকাকে কেমন দেখানো উচিত। আমরা রাস্তা তৈরির জন্য শাহবাগের বেশ পুরানো একটি ফোয়ারা বিসর্জন দিলাম। শিশুপার্ক তৈরির জন্য উদ্যান নষ্ট করে ফেললাম। রমনা পার্কের একটা অংশ চলে গেল কাকরাইল মসজিদের মধ্যে। গাছ পড়ে গেলো, শিশুরা হারালো খেলার মাঠ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল, তাতে শিশুপার্ক নির্মাণের পেছনে কিছু গোপন রাজনৈতিক কারণ ছিল। এই ময়দানটি তিনটি কারণে ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবিদার।
প্রথমত, এই সেই স্থান যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনসমুদ্রের মাঝে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত, এই সেই স্থান যেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি বাংলাদেশ ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
এবং তৃতীয়ত, এই স্থানেই বঙ্গবন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে এক গণসংবর্ধনা দেন এবং ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের আগেই বাংলাদেশ থেকে মিত্র বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই সকল স্মৃতি জনগণের মন থেকে মুছে ফেলার জন্যই ওখানে শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়। সে না হয় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু ওসমানী উদ্যান এবং ওসমানী মেমোরিয়ালের ক্ষেত্রে?
সবসময়ই কারও না কারও খেয়াল বা কোনও না কোনও রাজনীতির খেলা চলেছে।
ঢাকার রাস্তাঘাট সবসময় এমনভাবে বদলাতে থাকে, দেখে মনে হয় নাগরিকদের করের টাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করার মতো কোনও কাজ নেই।
ঢাকার সড়কগুলো কতবার চেহারা বদলায় তা গুনে বের করা কঠিন। এমনও হয়েছে, ছয় মাস আগে নির্মিত সড়ক ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। কারণ মেয়র দক্ষিণ কোরিয়ায় একটা কিছু দেখে এসেছেন, যা তার মনে ধরেছে এবং তেমনটা ঢাকায়ও তার চাই। জনগণের করের টাকার তোয়াক্কা কে করে!

বর্তমানে জঙ্গি হামলার কারণে অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা প্রতিদিন নেমে যাচ্ছে। নাগরিকদের বিশেষত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের কর্তব্য। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সবসময় সুন্দর পুরনো বাড়িঘর ভেঙে দোকান ও রেস্টুরেন্ট স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। কে দেয় এই অনুমতি? এ কি কেবলই দলিল-দস্তাবেজের বিষয় নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণও আছে? যেভাবেই অনুমতি দেওয়া হোক না কেন, সত্য হচ্ছে তারা অনুমতি পাচ্ছে। এই স্থাপনাগুলো নিয়মিত করও দিচ্ছে। কিন্তু যদি স্থাপনাগুলোই অবৈধ হয় তাহলে সেটা কী করে সম্ভব হয়?

আমাদের চিন্তা করা দরকার, এভাবে বাড়িঘর ভাঙার ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক রয়েছে। এক মালিক বিনিয়োগের টাকা তুলে নিয়েছেন, হলি আর্টিজানের পর ব্যবসা মন্দা দেখিয়ে কর্মচারী ছাটাইও শুরু হয়েছে।

‘চাকরি ছেড়ে দিলে পড়ালেখার কী হবে?’ বললেন এক তরুণ। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ জোগাড় করেন ও ঢাকায় থাকা-খাওয়া চালান নিজের চাকরির আয়ে। এমন অনেকেই আছেন।  

এই হোটেল কর্মচারীরা কারা? এক অংশে আছেন যারা চাকরি করে পরিবারের অন্নসংস্থানের জন্য ঢাকায় এসেছেন, অন্য অংশ হলেন যারা চাকরি করে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ব্যয় করছেন।

তারা তাদের বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাচ্ছেন, যারা হয়তো তাদের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর ব্যয় ভার বহনে সক্ষম নন।

ফলে বর্তমানে এই সিদ্ধান্ত নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার জন্য হলেও যারা এই ব্যবসায় আছেন তাদের জন্য বিকল্প ভাবতে হবে। অনেক পরিবারই যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়েছেন, তাদের অবস্থা যেন আরও খারাপ না হয়ে পড়ে।

আমাদের নগর পরিকল্পনাকারীদের নিশ্চিত করতে হবে মালিক ও অনুমতি ফিরিয়ে দেওয়া ব্যবসায়ীর মধ্যে কে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীদের সহায়তা করবেন।

আমরা কি পুনর্বিবেচনা করে জঙ্গিবাদ দমনে সাহায্য করার সঙ্গে ঢাকার ওপর বুলডোজার চালানোর উন্মাদ খেলা বন্ধ করতে পারি না!

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

আরও খবর: আসন সংকটে সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগার, ১৪ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ