X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্যের করুণ পরিণতি

আনিস আলমগীর
০৯ আগস্ট ২০১৬, ১২:২৮আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৪৩

Anis Alamgirবিএনপি ও জামায়াত আপন সহোদরের মতো। ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী বা ড. এমাজউদ্দীন যত চেষ্টাই করুন না কেন বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াতে ইসলামী থেকে পৃথক করতে কখনও সক্ষম হবেন বলে মনে হয় না। ১৯৮৯ সাল থেকে তাদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
খালেদা জিয়ার জনসমর্থন রয়েছে আর জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন রয়েছে, অর্থবিত্ত রয়েছে। সুতরাং উভয়ের সমন্বয়ে বাংলাদেশকে তাদের কব্জায় রাখা তেমন কঠিন কোনও ব্যাপার নয়। তারা দুই দুই বার তাদের কব্জায় বাংলাদেশকে রেখে তার প্রমাণও অতীতে রেখেছেন। বেগম জিয়া বলুন বা তারেক জিয়া বলুন, কেউই জামায়াত ইসলামীকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত নন। তারেক জিয়া একবার শিবিরের সম্মেলনে গিয়ে শিবির ও ছাত্রদল একই মায়ের পেটের দুই ভাই বলে উল্লেখ করেছিলেন।
জিয়া স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে তার অবস্থান শক্ত করার জন্য পুনঃজীবিত করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী বেগম জিয়াকে ঘিরে তারা এখনও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলোর মাঝে জামায়াত ইসলামীই বেশ মজবুদ ভিত্তি সৃষ্টি করতে পেরেছে। তাদের আর্থিক ভিত্তিও মজবুদ। ওহাবী ভাবধারায় বিশ্বাসী ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন। গত ৪০ বছর তারা তাদের সংগঠনকে অর্থবহ সংগঠনের রূপ দিয়েছে। বিএনপি দুইবার ক্ষমতায় গিয়েছে। দুই বারই জামায়াত ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ম্যানডেট চেয়েছিল। তারা একক দলগতভাবে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতে ছিল। জোটগতভাবে আরও বেশি আসন পেয়েছিল। বিএনপি পেয়েছিল ২৯ আসন আর জামায়াত পেয়েছিল ৩ আসন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই জামায়াতের জন্য গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। গোলাম আজমের মৃত্যু হয়েছে জেলখানায়, নায়েবে আমির মুফতি ইউসুফেরও মৃত্যু হয়েছে বিচার চলাকালীন অবস্থায় জেলখানায়, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হয়েছে। সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানেরও ফাঁসি হয়েছে। মীর কাসেম আলী, মওলানা আব্দুস সোবহান, আজহারুল ইসলাম ফাঁসির অপেক্ষায় রয়েছে। এখন সিনিয়র নেতা অবশিষ্ট কেউ নেই। গোপনে সংগঠনের কাজ চললেও প্রকাশ্যে কিছুই নেই।
মনে হয় দৃশ্যত সংগঠনটা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের মালিকানাধীন পত্রিকা সংগ্রাম এবং নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক নয়াদিগন্ত এখনও নিরবিচ্ছিন্নভাবে বের হয়। জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো রয়েছে তার মূলধন নাকি ১২ হাজার কোটি টাকা।
পুরানো এক জামায়াতির লেখায় পড়েছিলাম জামায়াত ইসলামী করলে নাকি হয় চাঁদা দিতে হয়, না হয় ভাতা খেতে হয়। বিরাট এক কর্মযজ্ঞ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার এক লেখায় বলেছিলেন, ‘আমাদের ছেলেবেলায় আমরা যত বেশি ছেলেমানুষ ছিলাম এখনকার ছেলেমানুষেরা তাদের ছেলেবেলায় অনেক বেশি পরিপক্ক ছেলেমানুষ।’ সম্ভবতো জামায়াতের বাংলাদেশ প্রজন্মের কর্মীরা আগেকার কর্মীদের চেয়ে বেশি পরিপক্ক কর্মী। না হয় তাদের প্রকাশনাগুলো এত সুন্দরভাবে প্রকাশ হয় কিভাবে!
খবর নিয়ে জানা যায়, তাদের নেটওয়ার্কও খুব সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে। এতো ঝড় তুফানের পরও যে সংগঠন এখনও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে তাকে বাদ দেওয়ার মতো নির্বোধ খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই নন। বেগম জিয়া ২০১৩ সালের ৪ মাস আর ২০১৫ সালের ৩ মাস সন্ত্রাসী আন্দোলন করায় তার পক্ষে মাঠে নামা মুশকিল হয়ে পড়েছে। সেই জন্যই সম্ভবতো তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যর নামে বিরোধী দলীয় নেতাদের সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে।
দেশে কোনও ব্যাপক অভাব-অনটন নেই। শুধু গণতন্ত্রের নামে কোনও আন্দোলন সৃষ্টি সম্ভব নয়। দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রও দেখেছে আবার শেখ হাসিনার গণতন্ত্রও দেখছে। কে কত বড় উত্তম গণতন্ত্রী সেটাও তারা বুঝে। সুতরাং এমন একটা ইস্যু নিয়ে গণজাগরণ সম্ভব নয়। ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দজা চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান প্রমুখ নেতাদের পাবলিক ইমেজ ভালো তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারলে হয়তো সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত।
বিকল্পধারার মাহী বি. চৌধুরী বলেছেন, আন্দোলনে, নির্বাচনে, সরকার গঠনে সুস্পষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন ছাড়া তারা কারও সঙ্গে সঙ্গে ঐক্য করতে যাবেন না। গত ৩ জুন থেকে দীর্ঘ ১ মাস ৫ দিন চেষ্টা করার পর কাদের সিদ্দিকী বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি নাকি বলে এসেছেন তিনি জামায়াতের সঙ্গে জান্নাতে যেতেও রাজি নন। জামায়াতকে না ছাড়লে ডা. কামাল হোসেন মনে হয় না বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সম্মত হবেন। মান্না জেলে যাওয়ার আগে বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাসদের খালেকুজ্জামান বা কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনও সংলাপে বসতে সম্মত হবেন বলে মনে হয় না। উৎসাহ ব্যঞ্জক সাড়া না দেখলে নতুন জোট গঠনে মরিয়া হয়ে থাকা জাসদের আ.স.ম আবদুর রবও সংলাপে যাবেন না। যে কোনও নেতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করবে। কারণ দুই দুই বার বেগম জিয়া আন্দোলনে গিয়ে সফলকাম হতে পারেননি।
গত ১২ বছর শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয় সাধারণ মানুষ দেখেছেন। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের গুরুভার বইতে যে সফলতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বিকল্প কোনও নেতা না দেখলে জনসাধারণ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনও কথাই চিন্তা করবে না। আর বর্তমানে মানুষের বিবেচনায় শেখ হাসিনার বিকল্প কখনও খালেদা জিয়া নন।
ঐক্যের কথা বলেছেন, তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গোলিয়া সফর শেষে দেশে এসে বলেছেন, ঐক্য হয়ে গেছে। সম্ভবতো মানুষ যে মানসিকভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সে কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন। মানুষ এখন নিজ উদ্যোগে সন্দেহভাজন লোককে পুলিশের হাতে সোপর্দ করছেন।
কিছু কিছু রাজনৈতিকদল ফায়দা লুটার জন্য নয় সম্ভবতো দেশপ্রেমের তাগিদে বৈঠকের কথা বলেছেন। আমার মনে হয় রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এমন একটা বৈঠকের আয়োজন করা যায় যেখানে তারা সন্ত্রাস সম্পর্কে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন, প্রয়োজনে সরকারি দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এ বিষয়টা সরকার বিবেচনা করলে হয়তোবা ভালো ফলই বয়ে আনবে।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

আরও খবর: ডার্কনেটে চলছে ‘রাহমানী-আওলাকি’র দাওয়াত!

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ