X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিশ্র নগরীর ধারণা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১০ আগস্ট ২০১৬, ১২:৪৮আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৬, ১৩:০০

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাইন্টারনেটে নানা ধরনের গেম-এর সঙ্গে নগর পরিকল্পনা নিয়ে একটি গেম আছে যার নাম সিমসিটি। অনলাইন এই গেমে একজন তার মন মতো নগর বানাতে পারেন। সিমসিটি’র ব্লগে একটি লেখায় পাওয়া গেল এই বাক্যটি- In general, you want your ratio of residential to commercial & industrial to be 3:1:1. This means if you want to be balanced, you should have three times as much residential as commercial & industrial.
অর্থাৎ কোনও আবাসিক এলাকাই আসলে পুরো মাত্রায় আবাসিক নয়। এর সঙ্গে আনুপাতিক হারে মিশে থাকবে বাণিজ্যিক ও শিল্প স্থাপনা। 
ঠিক এই বাস্তবতায় কথা বলছেন, অভিমত রাখছেন স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদরা। গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে হবে। ইতিমধ্যে তিন মাস সময় পার হয়েছে। কিন্তু ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার পর থেকেই নগর জুড়ে আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজউক।
আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আকস্মিকতায় কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে এখন আতংকে ভুগছে মানুষ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তিন লাখ ২০ হাজার হোল্ডিংয়ের মধ্যে প্রায় পৌনে তিন লাখই আবাসিক ভবন। এর ৫৪ হাজার ভবনে চলছে বাণিজ্যিক ব্যবহার। তবে এর বাইরেও অনেক ভবন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। অনেক বাড়ির নিচে ছোট পান-সিগারেট, মোবাইল ফোন, সেলুন বা ওষুধের দোকান আছে। কোথাও রয়েছে ছোট মুদি দোকান, কোথাও আবার বিউটি পার্লার। এসব প্রতিষ্ঠানে কতজন কাজ করে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও আন্দাজ করা হয় যে, প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এসবে নানা কর্মে জড়িত।
আবাসিক এলাকার চরিত্র কী হবে তার কোনও স্পষ্ট ধারণা মানুষের সামনে নেই। ষাটের দশকে যখন ধানমণ্ডি বা গুলশান-বনানী বা মালিবাগ-খিলগাঁও গড়ে তোলা হয়, তখন কেউ হয়তো ভাবেননি যে এ শহরে এত মানুষ গাদাগাদি করে থাকবেন। মানুষ তার প্রয়োজনে আর চাহিদায় সবকিছু করে। তবে মানতেই হবে বৈধতার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনার ত্রুটিবিচ্যুতি বুঝতে আর ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশের জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, জনপ্রশাসন, জনসংখ্যাতত্ত্ব— সব কিছু নিয়ে আলোচনা করতে হয়। ১৯৭১-এ দেশ স্বাধীন হলো, ৪৫ বছর কেটে গেল। রাজধানী ঢাকা, এমনকি অন্য বড় শহরগুলোও বেড়েছে কলেবরে। কিন্তু স্বাধীন দেশে কতটা চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং করেছি সেটা ভাবনার বিষয়। আমরা কি পেরেছি কৃতী প্রযুক্তিবিদ ও পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত করে নগরগুলো সাজাতে? না পারিনি। শহরগুলো বেড়েছে যেনতেন ভাবে।

ঢাকা শহর নিয়ে আমরা ভাবি, বাংলাদেশ নিয়ে ভাবি খুব কম। এই রাজধানীতেই স্বাধীনতার পর কি সরকার কোনও স্কুল করেছে? সম্ভবত উত্তর না-ই হবে। স্কুল হয়েছে অনেক, কলেজ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়েছে। প্রায় সবই বেসরকারি উদ্যোগে, এবং বেশিরভাগই আবাসিক এলাকায়। কোনও কোনও সরকারি- আধা সরকারি সংস্থাও দু’একটি স্কুল-কলেজ করেছে, যেমন উত্তরার রাজউক স্কুল।

আমি গুলশান নিকেতনে থাকি। এখান থেকে শুরু করে গুলশান-১ ও ২, বনানী এবং বারিধারা মিলিয়ে বনানী বিদ্যানিকেতন ছাড়া একটি সাধারণ স্কুলও নেই। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পরিপূর্ণ এলাকাটি। একই অবস্থা ধানমণ্ডির। কর্তৃপক্ষ কি ধরেই নিয়েছেন যে সবাই ইংলিশ মিডিয়ামেই পড়বে? চিত্ত বিনোদনের জন্য মূল পরিকল্পনায় ধানমণ্ডি বা গুলশান বা অন্য আবাসিক এলাকায় কোনও চিত্রশালার কথা বলা নেই, নেই পাঠাগারের কথা, নেই কোনও নাটক বা সাংস্কৃতিক মঞ্চের কথা। নেই সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক। সময়ের বিবর্তনে সবই হয়েছে, তবে ব্যক্তি উদ্যোগে। আজ হঠাৎ করে আবাসিক চরিত্র ঠিক রাখার নামে সেগুলোকে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।

গুলশান হামলার পর রাজউকসহ সরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা আমাদের উৎসাহিত করে। কিন্তু যেকোনও সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে দেখা প্রয়োজন। প্রায়ই শুনতে হয় যে ঢাকা হচ্ছে পৃথিবীতে  সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী শহর বা নিকৃষ্ট শহর। এমন কথা কাউকে তৃপ্তি দেয়না নিশ্চয়ই। যানজট, জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শহরকে বসবাসের উপযোগী করতে সরকারের তদারকি নিয়ে প্রশ্ন অনেক।

পরিকল্পনা মাফিক যে করা যায় তার দৃষ্টান্ত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই এলাকায় নাগরিক সকল সুযোগ সুবিধা বজায় রেখেই আবাসিক চরিত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার ছাপ আছে ডিওএইচএসগুলোতেও। পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার বিকল্প নেই ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে।

পৃথিবীর বহুদেশেই আবাসিক এলাকার মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ নিশ্চিত করতে তার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এলাকায় ক’টি স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে, স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা কেমন হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাইপাতি, জরুরি ওষুধ, সেলুন বা পার্লার কয়টি হতে পারে, রেস্তোঁরা বা বুটিক হোটেল/গেস্টহাউস কয়টি থাকবে তার আনুপাতিক হার বিবেচনা করে রাজউক ও সিটি করপোরেশন পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করতে পারি।

ছোট দেশ, অনেক মানুষ। এখানে একটি সেবামূলক বা বাণিজ্যিক স্থাপনা মানেই কর্মহীন বিপুল পরিমাণ মানুষের জন্য কাজের সুযোগ। উঠিয়ে দিলে বা তাড়িয়ে দিলে এরা কোথায় যাবে সেটাও বিবেচনার বিষয়। তাই বলে এটাও বলা হচ্ছে না যে, যেভাবে গড়ে উঠেছে সেভাবেই সব থাকুক।

ভুল হয়েছে অতীতে অনেক। সময় এখন শুধরে নেওয়ার। হুটহাট কাজ না করে স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদসহ নানা স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নতুন যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে আর পুরোনো যেগুলো আছে, কিভাবে সবকিছুর একটি ভারসাম্যের মিশ্রণ রাখা যায় সেদিকটা চিন্তা করা হোক।

স্মার্ট শহর চাই যেখানে মানব ও সামাজিক বিনিয়োগ, ঐতিহ্যগত পরিবহণ এবং আধুনিক যোগাযোগের সম্মিলিত মেলবন্ধনে তৈরি হবে। জীবনের উচ্চ গুণগত মানের জন্য প্রয়োজন হয় নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে প্রাকৃতিক সম্পদের বিবেচনা প্রসূত ব্যবহার। একটি দক্ষ ও গতিশীল শহর চাই যার ভিত্তি হবে বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনা।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: গুলশান-বনানী-বারিধারায় নতুন বাস ও রিকশা চলাচল শুরু

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ