X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যা কখনও স্থায়ী হয় না

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১৮ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৩৩আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৪৫

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের স্মরণে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য, কষ্টের মধ্যে আমাদের আঘাত করতে সেজে-গুজে তিনি এ দিনটিতে ভুয়া জন্মদিনের উৎসব করতেন। তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট নয়। খুনিদের বোঝাতেন, তিনি তাদের সঙ্গে আছেন।’ এবার জন্মদিন পালনে খালেদা জিয়ার বিরতি দেওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এবার সেটা পালন না করায় অনেকে এর মধ্যে রাজনৈতিক উদারতা দেখার চেষ্টা করেছেন। আমি তো জানি মূল কারণ। ১২ আগস্ট কোকোর জন্মদিন, সেদিন কোকোর জন্মদিন পালন করতে পারবেন না বলে নিজের জন্মদিন পালন করেননি। তাছাড়া এটা তো তার জন্মদিন নয়। এখানে কোনেও রাজনৈতিক উদারতা নেই।’
জন্মদিন পালন না করার কারণ যে যাই বলুন না কেন, প্রশংসার কথা শেষ পর্যন্ত তিনি ১৫ আগস্ট জন্মদিবস পালন করা থেকে বিরত ছিলেন। খালেদা জিয়ার বাবা তার স্কুলে ভর্তির সময় বলেছেন তার জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর। সরকারি নথিতে তার জন্মদিন আরেকটি। আসলে কবে কার জন্মদিন এ কথা কেউ জানে না, যদি না তিনি খ্যাতিমান মানুষ হন। আবার অনেক বড়লোক ইংরেজ কালচারের প্রভাবে অনেক সময় পারিবারিকভাবে জন্মদিবস পালন করতেন। এটাও ছিল নবাব, খান বাহাদুর, রায় বাহাদুরদের মাঝে সীমাবদ্ধ অর্থাৎ সমাজের উচ্চ মর্গে যাদের অবস্থান তারাই সাধারণত জন্মদিবস পালন করতেন।
বেগম খালেদা জিয়া এ সমাজের কোনও খ্যাতি সম্পন্ন পরিবারের জন্মগ্রহণ করেননি। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে অন্য দশ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো জন্মদিবস পালন করার প্রয়োজনীয়তা তিনিও অনুভব করেননি। এটাই ছিল স্বাভাবিক। সুতরাং তার জন্মদিন সম্পর্কে কারও কোনও সচেতনতা ছিল না। জিয়ার স্ত্রী হিসাবে অনেক সময় বিদেশে তার সফর সঙ্গী হিসেবে মানুষ তাকে দেখেছেন- এ ছিল যথেষ্ট। এদেশের মানুষ অনেক রাষ্ট্রপতি দেখেছেন অনেক সময় কিন্তু তাদের স্ত্রীকে দেখার কোনও ভাগ্যও হয়নি। আইয়ুব খান পাকিস্তানের দশ বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন কেউ বলতে পারবেন না কেউ তার স্ত্রীকে দেখেছেন। কোনও রাষ্ট্রপতির স্ত্রীকে দেখার কোনও কৌতূহলও কখনও কারও কাছে দেখা যায়নি। জিয়ার মৃত্যুর পর যখন বেগম জিয়া রাজনীতিতে যোগদান করলেন এবং বিএনপির চেয়ারপারসন হলেন তখন থেকে তার সম্পর্কে জাতির কৌতূহল জাগল।
প্রথম যেদিন তিনি জনসম্মুখে এলেন সেদিন তিনি নয়া বাজারের বিএনপির মহানগর শাখার অফিসের দোতলার বারান্দা থেকে রাস্তায় সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে একটা লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেছিলেন। তখন এরশাদ রাষ্ট্রপতি। তার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে আন্দোলন গড়ে উঠছে মাত্র। আওয়ামী লীগের জোট, বিএনপির জোট, বামপন্থীদের জোট আর জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন করেছিল দীর্ঘদিন। ১৯৯০ এর ৪ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলেন। সবাই আন্দোলন করলেও সবাইতো ক্ষমতায় যেতে পারে না- ক্ষমতায় যায় এক দল বা এক জোট। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন হলো তাতে ভোট বেশি পেল আওয়ামী লীগ, আর সিট বেশি পেল বিএনপি। জামায়াতের সমর্থনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলো। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন। প্রধানমন্ত্রী তো যেন-তেন ব্যাপার নয়। বিশিষ্টদের মাঝে বিশিষ্টজন। ধীরে ধীরে বেগম জিয়ার অন্তরে জন্মদিন পালনের বাসনা জন্ম নিল। সেই থেকে তার জন্মদিন পালন শুরু। তবে তিনি তার সঠিক জন্ম দিনে জন্মদিন পালন করলেন না, তিনি নিজেই নতুনভাবে জন্মদিবস স্থির করলেন ১৫ আগস্ট। যে দিন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়েছিল সেদিন।
দেশ যখন বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেন, শোক প্রকাশ করেন, তখন তিনি বানানো জন্মদিনে কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব পালন করেন। দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষ তার এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন কিন্তু তিনি তার মনগড়া তারিখে জন্মদিন পালন থেকে ক্ষান্ত হননি। তিনি বুঝেননি যে হিংসা দিয়ে প্রতিযোগিতা হয় না। বিবেকবান মানুষ এ সিদ্ধান্ত থেকে তাকে ফেরাতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগকে খুশি করার জন্য নয়, তার এ কর্মটা অসভ্যতা। এ কাজটা সভ্যতাকে বিতাড়িত করেছে। অনেকে চেষ্টা করেছে সভ্যতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু তিনি কিছু শুনেননি।
ব্রিটিশের সময়ে কিছু কমশিক্ষিত জমিদার ছিল। তারা কথায় কথায় বলতেন, ‘মাই সে মাই অর্ডার’। বেগম জিয়ার মাঝে সে রকম একটা আত্মগরিমা লক্ষণীয়ভাবে উপস্থিত। টান দড়ি বেশিদিন টেকে না। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর পুত্র কোকোর মৃত্যুতে বিএনপি নেত্রীর অফিসে গিয়েছিলেন শোক প্রকাশ করার জন্য কিন্তু তিনি অফিসের গেটে তালা দিয়ে ভেতরে তার সহকর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন। তার লোকজনেরা গেট খোলেননি। প্রধানমন্ত্রী বিফল মনরথে ফিরে গিয়েছিলেন। ঘৃণা, মিথ্যাচার ইত্যাদির কারণে ধীরে ধীরে যে জটিল সংকটের সৃষ্টি হয় তারাই মুখোমুখি হয়েছেন বেগম জিয়া এখন তার সংকটটা খুবই জটিল। বলবান হাতি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লে তাকে দাঁড় করানো বড়ই মুশকিল। বেগম জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর খুবই অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন। এ অহংকারই তাকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া করেছে। ‘অহংকার’ সীমা অতিক্রম করলে ‘বিনয়ভাব’ অনুশীলন করা প্রয়োজন। এখন তার সে পর্বের পালা।
প্রত্যেক জাতির মাঝে প্রেরণার উৎস থাকে। তা ব্যক্তিও হতে পারে আবার ঘটনাও হতে পারে। বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, সুভাষ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দীন। আর ঘটনার মাঝে প্রেরণা আহরণের ঘটনা হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ২১শে ফেব্রুয়ারি, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার যুদ্ধ, হাজী শরিয়তুল্লার জমিদার ও ব্রিটিশের অত্যাচার বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন।
বেগম জিয়া ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করে দীর্ঘদিনব্যাপী জাতীয় প্রেরণার উৎসের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে আসছিলেন। এটা ছিল তার উন্মাদ প্রবণ সিদ্ধান্ত। যে কোনও অজুহাত দেখিয়ে তিনি যে এবার ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন থেকে পিছু হটলেন এটা সদ্ভাবের জয় উন্মাদের পরাজয়। এবার তার দলের কিছু লোকও তাকে জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। প্রার্থনা করি অসৎ চিন্তা বিনাশ হোক। বিবেকের জয় হোক।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
[email protected]

আরও খবর: জিয়াকে এবার ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বললেন আ. লীগ এমপি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ