X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারুণ্যই মূল শক্তি

এরশাদুল আলম প্রিন্স
১৮ আগস্ট ২০১৬, ১৪:০৪আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৩২

এরশাদুল আলম প্রিন্স সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে বিপর্যস্ত বিশ্ব। সে বিপর্যয়ের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। সন্ত্রাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর কোনও মানচিত্রভেদ নেই। সিরিয়া থেকে বাংলাদেশ, জাপান থেকে জার্মানি সর্বত্রই এখন সন্ত্রাসের বিস্তার। এটাই বাস্তবতা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জঙ্গিরা বন্দুকের নল এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশের দিকে ঘুরিয়েছে। এ বাস্তবতাকে বিশ্ব নেতৃত্ব যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই সন্ত্রাস নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ দ্রুত হবে।
আমরা মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত মানববিধ্বংসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে পরাশক্তির উপস্থিতি দেখেছি। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে ছিল যুক্তরাজ্য। ১৩ বছর পর যুক্তরাজ্য এখন বলেছে, ‘ইরাক যুদ্ধ অবৈধ ছিল’। আর যুক্তরাষ্ট্রতো বহু আগেই বলেছে, ইরাকে কোনও মানববিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেদিনের ইরাক যুদ্ধের পরিণতিতেই আজকের আইএস’র জন্ম। আর ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পরিণতিতেই আজকের তালেবান ও আল-কায়েদা।
বাংলাদেশ থেকেও তখন তালেবান ও আল-কায়েদায় শরিক হয়েছে কিছু যুবক। এরাই পরে এখানে হরকাতুল জিহাদ ও জেএমবি নামে কার্যক্রম শুরু করে।
ফলে আমরা দেখতেই পাচ্ছি, আল-কায়েদা বা আইএস শুধু ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আইএস’র যে বিস্তৃতি, তা সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার অন্যতম ফলাফল। গত ছয় মাসে আইএস ইরাক-সিরিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ১২% হারিয়েছে। জুলাই পর্যন্ত তা প্রায় ৫০% পর্যন্ত হয়েছে বলে ধরা হয়। তাই জমি হারিয়ে আইএস এখন মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করছে। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, বেলজিয়াম, জাপান, ভারত এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে যে হামলা হচ্ছে তা সিরিয়া-ইরাকেরই প্রতিক্রিয়া। এসব হামলার লক্ষ্য ও ধরনও বদলেছে। বাংলাদেশে চাপাতি (ভারি অস্ত্রও আছে), ফ্রান্সে ট্রাক, আবার কোথাও কুড়াল।

এরপরও সন্ত্রাস প্রতিরোধে পরাশক্তিগুলোর কাজের চেয়ে বাগাড়ম্বরই বেশি দেখা যায়। ফ্রান্সের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আইএস’র বিরুদ্ধে যৌথ-অভিযান পরিচালনার জন্য রাশিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সাড়া দেয়নি। কারণ, রাশিয়াও অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে এ প্রস্তাব দিয়েছিল। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রও তাতে কর্ণপাত করেনি।  

তাই এটা স্পষ্ট যে পরাশক্তিগুলো আইএস’র কথা বলে নিজ-নিজ আর্থ-সামরিক-রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেই বেশি তৎপর। সেকারণেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাক-সিরিয়ায় আইএসকে ধ্বংস করতে যতটা আগ্রহী, তার চেয়ে বেশি মনোযোগী বাশার-আল-আসাদকে সরাতে। শত্রুর বন্ধুও শত্রু (বাশার-পুতিন সম্পর্ক)। ওই অঞ্চলে পুতিনের ভালো বন্ধু বাশার। যুক্তরাষ্ট্র তাই আইএস’র আগে বাশারকে সরাতেই বেশি মনোযোগী। ওদিকে আইএস জঙ্গিরাও জানে যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তারা নির্মূল হলে পশ্চিমা বিশ্ব এটিকে সামরিক বিজয় হিসেবে দেখাবে। তাই আইএস জঙ্গিরা নিজ-নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানে এ প্রবণতা দৃশ্যমান। 

তুরস্কের অবস্থানও একই। তারা আইএসকে সহযোগিতা করছে বাশারের পতনের জন্য। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এরদোয়ান এখন তার বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করছেন। মাঝখানে ফায়দা নিচ্ছে তৃতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও উপদলগুলো।

ওই সন্ত্রাসী ভাবদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণ নেশায় নেমেছে ইরাক, সিরিয়া এমনকি আমাদের যুব সমাজ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সৈনিকদের ইয়াবা সেবন করানো হতো। এখন আইএস সদস্যরা নাকি ক্যাপ্টাগন সেবন করে। তাই মৃত্যুভয় তাদেরকে ভাবায় না। কল্পনায় ভেসে বেড়ায় বেহেশতি হুর-পরীদের সাথে। কিন্তু দুনিয়ায় নর-নারী-শিশুকে খতম করে বেহেশতের হুর-পরীর স্বপ্ন অলিক-অবান্তর!

বাংলাদেশ উদারপন্থী মুসলিম দেশ। এখানে হাজার বছর ধরে সাধু-সন্তুরা আধ্যাত্মিক ধ্যান-সাধনা করেছেন। নিজ-নিজ ধর্ম-কর্ম পালন করেছেন। একই রাস্তার এপার-ওপারে এদেশে আজও রয়েছে অগণিত মসজিদ-মন্দির। কোনোদিন সম্প্রীতি নষ্ট হয়নি। এই ঢাকার বুকেই রয়েছে হাজি শাহবাজের মাজার আর রমনা কালিমন্দির। দূরত্ব বড়জোর তিনশ’ গজ। পাশেই রয়েছে তিন নেতার মাজার। তিন নেতার মাজার জিয়ারত করে কালী মন্দির দর্শনে যায়নি এমন (ঢাকা) বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কমই আছেন।

কিন্তু আজ আমাদের কী হলো? কতিপয় বিপথগামীদের কাছে কি জিম্মি হয়ে পড়েছি আমরা? কোনও ধর্মই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। ইসলামতো নয়ই।

একথা সত্য, বাংলাদেশ সোমালিয়া-আফগানিস্তান হবে না। বাংলাদেশে জঙ্গিদের প্রতি মানুষের কোনও সমর্থন নেই। কিন্তু সমর্থন না থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে স্থানীয় জঙ্গিদের ভাবাদর্শগত যোগসূত্রকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

দেশের উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত তরুণরা কেন সন্ত্রাসী পথে পা বাড়াচ্ছে তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। কোনটি সঠিক তা আমাদের জানা নেই। একি শুধুই অজানা মতাদর্শের প্রতি ঝোঁক নাকি অন্য কিছু? তরুণদের এই অজানা মতাদর্শের প্রতি ঝোঁক ভিয়েতনাম যুদ্ধেও লক্ষ্য করা গেছে। নকশাল-সর্বহারা আতঙ্কবাদীদের কথাও এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। ভারতবর্ষে চারু মজুমদারের নকশালবাড়ির আন্দোলনও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু বর্তমান জঙ্গিবাদের ধরন ও মাত্রা পুরোপুরিই ভিন্ন।      

কিন্তু তারপরও আশা আছে। বিপথগামী তরুণরা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হলেও, এর বিরুদ্ধে মূল শক্তিও সেই তরুণ-যুবকরাই। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুব-সমাজ দেশব্যাপী মানববন্ধনে যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও ঐক্য প্রদর্শন করেছে তা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যেরই প্রতীক। একইভাবে ইরাকে নাজিহ শাকের’র কথাও আমরা অবশ্যই ভুলে যাইনি। ইরাকে এক আত্মঘাতি জঙ্গিকে জাপটে ধরে হামলার তীব্রতা কমান নাজিহ শাকের। জীবনের বিনিময়ে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে দেন ওই যুবক। এটাই ধর্ম। মানুষ বাঁচলে ধর্ম বাঁচে, বাঁচে দেবালয়।

লেখক: আইনজীবী ও গবেষক।

আরও খবর: ‘পাকিস্তানি না, আমরা বাংলাদেশি হতে চাই’

.

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ