X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয়

তুষার আবদুল্লাহ
২০ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৮আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৬, ১২:৪৭

তুষার আবদুল্লাহ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ কতজন পেয়েছে, এই পরিসংখ্যান নিয়ে আমি আপ্লুত নই। উদ্বিগ্ন বলা যেতে পারে। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের সবাই একই মানের কিনা, তা নিয়েও আমার আপাতত সংশয় নেই। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে আছি- যারা এইচএসসি পাস করলো, তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ কতটা পরিকল্পিত হবে তা নিয়ে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র কোথাও উচ্চশিক্ষা নিয়ে সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। দূরদৃষ্টি নিয়ে উচ্চশিক্ষা বিষয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না।
আমাদের এখানে প্রচলিত ভাবনার মধ্যে থেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করে থাকে পরিবারগুলো। সন্তান যদি বরাবর ভালো ফলাফল করে, বিজ্ঞান শাখার মেধাবী শিক্ষার্থী হয়, তবে তাকে নিয়ে প্রধানত মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কথা ভাবা হয়। শিক্ষার্থীর নিজেরও প্রথম দিকের পছন্দ থাকে এদুটো দিকে। বিকল্প হিসেবে রাখা হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিতে বিজ্ঞান বিষয় বা অন্য কোনও সমাদৃত বিষয় নিয়ে পড়ার। যারা মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ভালো ফল করছে, তাদেরও লক্ষ্য থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারকা খচিত কোনও বিষয়ে পড়ার।
যারা মেধা ও ফলাফলেরর দিক থেকে উপরের দিকে আছে তাদের কথা বলা হলো। কিন্তু এই উপরের দিককার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নির্বাচনও পরিকল্পিত রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানে শিক্ষার্থীদের অনেকাংশেই নিজের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়।
শিক্ষার্থী নিজে হয়তো পড়তে চেয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নৃবিজ্ঞান, রসায়ন বা ব্যবসা প্রশাসন। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছাতে তাকে চিকিৎসক হতেই হবে। ফলে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না পেয়ে তাকে বেসরকারি অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হচ্ছে।
একই ভাবে সন্তান ভূগোল, ফার্মেসি, সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও, পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাকে শেষ পর্যন্ত নিচু সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করতে হচ্ছে।
মেধা বা ফলে মধ্যদিকে থাকে যারা, তারা দ্বিধার মধ্যে থাকে। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে এবিষয়ে তারা নিশ্চিত থাকে না। এক সময় তারা বিকল্প ভরসা রাখতো সরকারি ভালো কলেজের ওপর। এখন রাখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেদের যেমন প্রত্যাশা কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, পরিবারেরও সেই ইচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহজলভ্যতার জন্য, কেউ আর কলেজ নিয়ে ভাবছে না। কিন্তু সমস্যা হলো, সবারতো প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সক্ষমতা নেই। এই বাস্তবতায় অনেকেই যেনতেন বিষয়ে নিম্নমানের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।

সাধ্যে কুলোতে যারা পারেন না, তারা শেষ পর্যন্ত কলেজকে বেছে নেয়। আর মেধা ও ফলের দিক থেকে নিচের দিকে যারা, তাদের সরকারি না হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খায়েশ থাকলেও, কলেজেরই দ্বারস্থ হয় উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেও পরিবারের পছন্দ প্রাধান্য পায়।

উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচনে বরাবরই হুজুগের একটা বড় প্রভাব থাকে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের পর এসেছিল কম্পিউটার সায়েন্স। কে কতটুকু যোগ্য, কোন প্রতিষ্ঠান এই শিক্ষাদানে কতটুকু সক্ষম, তা বিচার বিবেচনা না করে সবাই ঝাঁপ দেয় কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে। ফলে দেখা গেল বুয়েট বা কাছাকাছি মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা এ বিষয়ে পড়ে বের হতে পেরেছিল, তার বাইরের অনেককেই চাকরির বাজার হতাশ করেছে।

একই ঘটনা চলছে বিবিএ, এমবিএর বেলাতে। হুজুগে এখন সবাই এই বিষয়ে পড়তে ঝাঁপ দিয়ে যাচ্ছে, যেমন খুশি তেমন কলেজ বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। বিবিএ, এমবিএ পাস করে চাকরি বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না অনেকেই।

সমস্যাটি যে শুধু পারিবারিক সনাতনধারায় আটকে আছে তা নয়। রাষ্ট্র নিজেই তার দীর্ঘমেয়াদে চাহিদাপত্র তৈরি করতে পারেনি।

পরের এক দশকে দেশে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবীদ, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, বিবিএ, এমবিএ কতজন প্রয়োজন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে এর যোগাযোগ থাকতে হবে।

আর সকল শিক্ষার্থীকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে স্নাতক- স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে হবে, সেটিও বিশ্ববাজারে এখন অচল ধারণা।

এখন দেশ ও বিশ্বের শ্রমবাজারের যোগ্য করতে দরকার কারিগরি শিক্ষা। উভয় বাজারেই কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে। কিন্তু এই দিকটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অবহেলিত। আমাদের উচ্চশিক্ষার সনাতন ধারণা ও চিন্তার সংস্কার প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা যে সকলের জন্য নয়, এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।

পাশাপাশি একথাও বিবেচনায় রাখতে হবে, যারা উচ্চশিক্ষা নেবে, তাদের সেই শিক্ষার মানে যেন সাম্যতা থাকে। কেবল সনদ বিক্রি যেন উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য না হয়।

মান রক্ষা করতে হবে কলেজের শিক্ষাপদ্ধতির। উচ্চশিক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্য শিক্ষক তৈরিও প্রয়োজন আছে।

তবে সব প্রয়োজন মেটানোর আগে বিশ্বাসে আনতে হবে সবার জন্য উচ্চশিক্ষা নয়। এই বিশ্বাস যত দ্রুত আয়ত্তে আনা যাবে ততই মঙ্গল।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও খবর: সনদের স্বীকৃতির পক্ষে কওমি আলেম-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ