X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’

বিভুরঞ্জন সরকার
২১ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৪আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৮

বিভুরঞ্জন সরকার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার ঘটনার পর কিছুটা আকস্মিকভাবেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তার এই ঐক্য-ডাক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এবং ক্ষমতা হারানোর পরও জঙ্গিবাদের বিপদ সম্পর্কে কখনও কোনও কথা বলেননি। বরং দেশে জঙ্গি আছে এই সত্যটি তিনি স্বীকার করতে চাননি। তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েই ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, বিএনপি এবং তার জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই দেশে জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছিল। তাছাড়া বিএনপি মুখে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বললেও দেশে সবচেয়ে পুরনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের মনোভাব একেবারেই গণতন্ত্রসম্মত নয়। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সন্ত্রাস-সহিংসতার পথ বেছে নিয়েও সফল হতে পারেনি বিএনপি। ফলে বিএনপি এখন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে খাদে পড়েছে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের যে ডাক খালেদা জিয়া দিয়েছেন সেটা কতটা আন্তরিক আর কতটা খাদ থেকে পাড়ে ওঠার কৌশল সে প্রশ্ন সবার মধ্যেই আছে। সুসময়ের দেখা পাওয়ার জন্য খালেদা জিয়া এখন উপায় খুঁজছেন। আওয়ামী লীগ তথা সরকারের সঙ্গে বৈরিতা কমিয়ে আনার চিন্তাও হয়তো তার মধ্যে আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ‘নিশ্চিহ্ন’ করার যে রাজনীতির চর্চা তিনি করে এসেছেন তা থেকে সরে আসতে হলে অতীতের অনেক কিছুর জন্যই ভুল স্বীকার করে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে তিনি যা করবেন তা নিয়েই জনমনে সন্দেহ দেখা দিবে।
বিএনপি যে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্নকরণের রাজনীতি অনুসরণ করে এসেছে তার বড় দৃষ্টান্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও তিনি সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ কমপক্ষে ২৩জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। এদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনও শরীরে অসংখ্য স্প্রিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন। ২১ আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এতবড় অপরাধ যারা করেছিল তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি, বরং ঘটনা প্রবাহ অন্যখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টাই চালানো হয়েছে। অপরাধীরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে কৌশলে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। নিরপরাধ নিরীহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে ধূলা দেওয়ার জন্য যে নানা অপচেষ্টা-অপপ্রয়াস বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নিয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
এখন এটা অনেকের কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায় যে, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে, তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেফতার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেফতার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল। ২১ আগস্টের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে সংবাদপত্রে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানোর সূত্র ধরে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পার্থই ওই ই-মেইল বার্তাটি পাঠিয়েছিল তার কোনও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলেও সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর নির্ভর করে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে প্রথম চারদিন অজ্ঞাতবাসে রাখে এবং পরে তিন দফা রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর প্রচণ্ড শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালায়। দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান পার্থ সাহা একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত কষ্ট করে উচ্চ শিক্ষা শেষে যখন চাকরি খুঁজছিলেন, তখনই তার ওপর নেমে আসে জোট সরকারের ভয়াবহ থাবা। পার্থ সাহার প্রথম অপরাধ তিনি ‘হিন্দু’ এবং দ্বিতীয় অপরাধ তিনি ভারতের মাদ্রাজে গিয়ে বিবিএ ও এমবিএ পাস করেছেন। এমন একজন মানুষ ‘র’-এর এজেন্ট না হয়ে পারেন! তার কাছ থেকে যেমন সন্দেহজনক কোনও গোপন তথ্য পাওয়া যায়নি, তেমনি মারপিট করে প্রায় পঙ্গু বানিয়েও কোনও স্বীকারোক্তি আদায় করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও সরকারিভাবে তাকে ‘র’-এর এজেন্ট বানিয়ে প্রচারের কোনও কমতি দেখা যায়নি। ই-মেইলে হুমকি দেওয়ার জন্য অন্য কাউকে সন্দেহের তালিকায় না এনে পার্থর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো থেকেই বোঝা গিয়েছিল জোট সরকার ২১ আগস্টের ঘটনা তদন্তে কোন নাটকের মহড়া দিতে চেয়েছে।

কোনও ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদঅভ্যাস। ২১ আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে’! এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপি নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরষ্কৃততো করেনইনি উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছিলেন, ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’। তারপর ৩০ আগস্ট, ২০০৪ বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন। তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানুল্লাহ্ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করবো। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেবো। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আব্দুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ এবং মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ফেঁদেছিল সেটা আমানুল্লাহ্ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কী থাকবে সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কি ধারণা হতে পারে সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।

বেগম জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন সেটাও বলা যায় না। ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে ‘বোমা’ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বেগম জিয়ার এই বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে- এমন বক্তব্য সরকার প্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর ২১ আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্ত কাজ অগ্রসর হয়নি, বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার কসরৎই চালানো হয়েছিল।

শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নয়। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন মাসে এমন একটি দিন ছিল না যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। শারীরিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, ঘর-বাড়িতে আগুন লাগানো, জোরপূর্বক চাঁদা আদায় এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিল। সিরাজগঞ্জে কিশোরী পূর্ণিমাকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। অথচ তার বাবা-মা নির্বাচনে ধানের শীষেই ভোট দিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন অনেকেই। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ জন সদস্যকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। বর্ষীয়ান কলেজ অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মহুরী, বৌদ্ধ ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি মহাথেরো, হিন্দু পুরোহিত মদনমোহন গোস্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল, যদিও তাদের কারই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল না। দেশজুড়ে শত শত সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আটক এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে জঙ্গিদের বোমা হামলার ঘটনা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকারের সমালোচনায় অত্যন্ত মুখর। তিনি এই সরকারের কোনও কিছুই ভালো দেখেন না। একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার তার আছে। কিন্ত তিনি যখন ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করেন তখন বিনীতভাবে জানতে ইচ্ছে হয়, তিনি কি আয়নায় নিজের মুখ দেখেন না? তার শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল সেসব কি তার মনে আছে? তিনি কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তারতো বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়। রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের একবারের মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে-এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্ত মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দের পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব অত্যন্ত প্রকটভাবেই লক্ষ করা যায়।

রাজনীতিবিদদের অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমাগত বাড়ছে। বেগম জিয়া  নিজের শাসনামলের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য একবারও দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ না করে বর্তমান সরকার আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কিংবা আইনের শাসনের অভাব নিয়ে কথা বলেন তখন দেশের মানুষ সে বক্তব্য খুব ভালোভাবে গ্রহণ করে বলে মনে হয় না। সমালোচনা যদি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর না হয় তাহলে সেটা মানুষের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হয় না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে সংসদীয় রাজনীতিতে এখন বিএনপির কোনও ভূমিকা নেই। তার মানে অবশ্য এটা নয় যে বিএনপি ভবিষ্যতেও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী না করেও বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে দেশের মানুষ জানতে চাইতে পারে, আগামীতে তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবেন কি? এখনই তিনি যেভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হবে। তার কাছে আরও জানার বিষয় যে, তিনি ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকার যেসব বিচার কাজ শুরু করেছে সেসব অব্যাহত থাকবে কি না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ কি চলবে? যাদের ইতিমধ্যে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তা কি কার্যকর করা হবে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা কিংবা দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলারই বা পরিণতি কি হবে? দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল তার শাসনামলে। অথচ তিনি বলেছেন, দেশে কোনও জঙ্গি নেই। জঙ্গিদের তিনি আড়াল করতে চেয়েছেন কেন সে প্রশ্নের জবাব তাকে একদিন দিতে হবে বৈকি! ভবিষ্যতে আবার ক্ষমতায় গেলে জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেবেন কিনা সেটাও তাকে এখন স্পষ্ট করে বলতে হবে।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি একদিকে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিচ্ছে, অন্যদিকে দলের সদ্যঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে জায়গা করে দিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের নাম বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটা মনে করা কঠিন যে দলটি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে চায়। যে লুৎফুজ্জামান বাবর ‘লুকিং ফর শত্রুজ’ উক্তি করে রাজনীতিতে কৌতুকের জোগান দিয়েছিলেন তার নামও কমিটি থেকে বাদ দিতে পারেননি খালেদা জিয়া। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাবরকে কমিটিতে রেখে যে বার্তা খালেদা জিয়া দিয়েছেন তাতে তার ঐক্যের ডাকে আওয়ামী লীগের সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই তিরোহিত হয়েছে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট       

[email protected]

আরও খবর: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: আসামিরা কে কোথায়

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ