X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নতুন রূপ নিচ্ছে

আনিস আলমগীর
২৩ আগস্ট ২০১৬, ১২:০৩আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৬

আনিস আলমগীরইউরোপ-এশিয়ার সঙ্গমস্থলে তুরস্কের অবস্থান। অবস্থানের কারণে তুরস্কের শুরুত্ব বেশি। ১৯৫২ সাল থেকে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। কিন্তু প্রবল আগ্রহের পরও তুরস্ককে এখনও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য করা হয়নি। মনে হয়েছিল ব্রিটেনের ইউনিয়ন ত্যাগের পর তুরস্কের প্রবেশ সহজতর হবে। কিন্তু গত ১৫ জুলাই’র ব্যর্থ অভ্যুত্থান সে সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিয়েছে। তুরস্কের এ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কুশীলব হিসেবে তুরস্ক আমেরিকায় স্বনির্বাসিত তুরস্কের ধর্মীয় নেতা ও আল্ট্রা ধনী ফেতুল্লাহ্ গুলেনকে স্থির করে আসছে, যার পেছনে আমেরিকার সমর্থন রয়েছে।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন তাদের সংখ্যা ব্যাপক। সামরিক বাহিনীর বহু সদস্য, পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্য বিচার বিভাগের বহু বিচারক এমন কী বিদেশে দূতাবাস সমূহের বহু কর্মকর্তা এ অভ্যুত্থানের সঙ্গে নাকি জড়িত ছিল। সম্ভবতো অভ্যুত্থান সংঘটিত করার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। অভ্যুত্থান ঘটানোর সম্ভাব্য তারিখ ছিল নাকি ১৫ আগস্ট। কিছু সংখ্যক অতি-উৎসাহী সামরিক অফিসার তড়িঘড়ি করে ১৫ জুলাই সামরিক অভ্যুত্থানটি করে ফেলার উদ্যোগ নেওয়াতেই নাকি অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয়েছে।
এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা এখন ব্যাপক। সুতরাং তাদের বিচার শেষ করা তার পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে না। মৃত্যুদণ্ডের আইনি ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের কথাও এরদোয়ান বলেছেন। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে মৃত্যুদণ্ডের আইনি ব্যবস্থা যদি পুনঃপ্রবর্তন করা হয় তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের কথা তুরস্ক চিরজনমের মতো ভুলে যেতে পারে। এমন হুমকির পর এরদোয়ান কী ব্যবস্থা নেন তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়।
ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটিটি আমেরিকাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিল তুরস্ক। এই ঘাঁটিতে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী অবস্থান করছে। এই বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকার ৫০টা অ্যাটোমিক বোমাও মজুদ রয়েছে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৫ জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিদ্রোহীরা এই ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটিটি ব্যবহার করেছিল। এ থেকে এরদোয়ান গোষ্ঠীর বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে আমেরিকা এ অভ্যুত্থানের পেছনে সক্রিয়ভাবে ছিল। গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গুলেন নাকি মাল্টিবিলিনিয়ার আর তার নেটওয়ার্ক সুদূর ওয়াশিংটন থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এরদোয়ানের দাবি হলো গুলেনকে তুরস্কের হাতে তুলে দিতে হবে কারণ এ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে গুলেনের হাত রয়েছে। এরদোয়ান বলছেন আমেরিকা যদি গুলেনকে তুরস্কের হাতে তুলে না দেন তবে তারা ধরে নেবেন- এ অভ্যুত্থানের পেছনে আমেরিকারও হাত রয়েছে।

এ অভ্যুত্থানের সময় রাশিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন অভ্যুত্থানের মাঝেই এরদোয়ানকে বারবার টেলিফোন করেছিলেন। অথচ আমেরিকা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দাও করেনি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও নীরব ছিল। পাশ্চাত্য মিডিয়া যখন অভ্যুত্থানের সফলতার কথা বলছিল তখন রাশিয়া আর ইরানই বলেছিল যে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। এরদোয়ান অভ্যুত্থানের সময় রাশিয়া এবং ইরানের ভূমিকায় খুবই খুশি হয়েছেন।

৯ আগস্ট রাশিয়া পিটার্সবার্গে এরদোয়ান এবং পুতিনের মাঝে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যর্থ-অভ্যুত্থানের পর এটাই এরদোয়ানের প্রথম বিদেশ সফর। আমেরিকার জন্য এ বৈঠক দুশ্চিন্তার কারণ। ইনসিরলিক বিমানঘাঁটি আমেরিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিপাইন পার্লামেন্ট যখন সময় বাড়াতে রাজি হলো না তখন আমেরিকাকে গয়াম ঘাঁটি গুটিয়ে নিতে হয়েছিল। অথচ প্রেসিডেন্ট কোরাজন একিনো ঘাঁটি রাখার পক্ষে ছিলেন কারণ গয়ম ঘাঁটিতে ৩০ হাজার ফিলিফিনো চাকরি করতো। প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পার্লামেন্টের কথাই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়েছিল। সে রকম পরিস্থিতির শিকার তুরস্কে হবে না তা তো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তুরস্কের পাশে ইরান। শাহার দেশ ত্যাগের পর ইরানে মোসাদ্দেক সরকার আমেরিকার ইরানে অবস্থানে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি বলে ১৯৫৪ সালে নতুন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাহাকে পুনরায় ইরানের সিংহাসনে বসাতে পেরেছিল। আর মোসাদ্দেক জেলে ফাতিমিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিলেন। আমেরিকার কুকর্মের ফিরিস্তিতো খুবই লম্বা এবং আমেরিকা অনির্ভরশীল বন্ধু। আমেরিকাও প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের মতো- রোমে কখনও শৃঙ্খলা ছিল না।  এরপরও বিশ্বের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রোম সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল তার সুশৃঙ্খল এবং সুনিপুণ সেনা বাহিনী।  আমেরিকারও কোনও সুশৃঙ্খল পররাষ্ট্র নীতি নেই। সরকারের পররাষ্ট্র সচিব, পেন্টাগন, সিআইএ- এ তিন সংস্থাই পররাষ্ট্র বিষয়ে খেলোয়াড়। তাদের কাজের মাঝে কোনও সময় নেই। এরপরও পররাষ্ট্র বিষয়ে আমেরিকার একটা শক্তিশালী অবস্থান ছিল এর অন্যতম কারণ ছিল তার অঢেল অর্থবৃত্ত। এখন অবশ্য আমেরিকার সে অর্থবিত্ত নেই। এরপরও আমেরিকার প্রতিপত্তিতো একদিনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে না। সুতরাং তুরস্কে আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে এরদোয়ানের কঠিন ভূমিকাই হতে বাধ্য, না হয় আমেরিকার প্রতিশোধ গ্রহণের ষড়যন্ত্রের মুখে এরদোয়ানের অবস্থা ইরানের মোছাদ্দেক আর ফাতেমীর মতোই হতে পারে।

রুশ বিমান ধ্বংস করার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এবারের এরদোয়ানের সফর সে অচলাবস্থা কেটে গেছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এবং গ্যাসের পাইপ লাইন বসানোর কাজ রাশিয়া পুনরায় আরম্ভ করবে। আইএস-এর বিরুদ্ধে রুশ অভিযানকে এরদোয়ান সর্বতভাবে সমর্থন করেছেন। এখন রাশিয়া ইরানের ঘাঁটি থেকে আলেপ্পোতে বিমান আক্রমণ চালাচ্ছে। তুরস্ক, ইরান আর রাশিয়ার এখন জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে। এমতো অবস্থা সৃষ্টি হলে তুরস্ক বাশারের বিরোধিতা থেকে বিরত হয়ে যাবে কারণ ইরান ও রাশিয়া বাশারের পক্ষে বহুদিন আগে থেকে অবস্থান নিয়েছে।

আগামী নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। এর আগে আমেরিকা নতুন কোনও ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলে মনে হয় না। তবে তুরস্ক, ইরান, সিরিয়াকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্য সম্ভবতো আমেরিকা কুর্দ্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কুর্দ্দিদের প্রতি তার সমর্থন ও সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে যেন তুরস্ক, ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার মাঝে আরেক ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টি করা যায়।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

আরও খবর: সিরিয়া যুদ্ধ: ইরানের ঘাঁটি আর ব্যবহার করবে না রাশিয়া

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ