X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিঠি ও বাস্তবতা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৪ আগস্ট ২০১৬, ১১:৫৯আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এখন সেই চিঠির চুল চেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনীতির নানা স্তরে।
প্রথমেই যে বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে তা হলো জাফরুল্লাহ চৌধুরী কেন মনে করেন খালেদা জিয়ার হাতে বড়জোর নয় মাস সময় আছে? খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়া পরিশ্রম করলে বিচারের রায় তার পক্ষে যাবে এমনটা কেন ভাবলেন সেটা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাই ভালো বলতে পারবেন। তারেক রহমানের সাজার বিষয়টিও জাফরুল্লাহ মনে করেন সুষ্ঠু বিচারের রায় না হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই অভিমত বিচার করতে পারবে কেবলমাত্র আদালতই।
প্রতিটি পরামর্শে একটি করে উপ-শিরোনাম রেখেছেন জনাব চৌধুরী। ‘কর্মীদের সাক্ষাৎ দিন’ বলে যেকথা তিনি বলেছেন তা বেগম জিয়ার জন্য সত্যি কঠিন। খালেদা জিয়াকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ভবিষ্যৎ আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিতভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত বাড়িতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাৎ দিতে হবে। যে নেত্রীর কোনও কার্যক্রম শুরু হয় না রাত ছাড়া তার জন্য এক অসম্ভব পরামর্শ বলেই মনে হচ্ছে এটি। বেগম জিয়ার দীর্ঘদিনের সিস্টেম জেনেই হয়তো ডা. জাফরুল্লাহ রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করার কথা বলেছেন।
কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনূর্ধ্ব উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সঙ্গে পরিচিত কিন্তু খয়ের খা নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার যে পরামর্শ এসেছে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কি সম্ভব? হলে ভালো। বিএনপি’র রাজনৈতিক দর্শন বুঝেই তিনি ভারত প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছেন চিঠিতে। বলেছেন- বেশি করে জোরে শোরে ভারত বিরোধিতার কথা বলতে হবে। এখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী হয়তো ভুলে গিয়েছেন এক সময় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন- বিএনপি কখনও ভারত বিরোধী রাজনীতি করেনি, আর ভবিষ্যতেও করবে না। কংগ্রেসকে পরাজিত করে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি’র বিজয়ে মহা উল্লাস দেখা গিয়েছিল বিএনপি শিবিরে। মোদিকে আগাম অভিনন্দন আর বিজেপি সভাপতির সঙ্গে বেগম জিয়ার সেই কথিত টেলিফোন আলাপের কথা কি মনে আছে জনাব চৌধুরীর?

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে বেগম জিয়ার কথিত জন্মদিন পালন না করতে পরামর্শ ছিল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। এবার বন্যার কথা বলে বেগম জিয়া কেক না কাটায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন বেগম জিয়ার বিজয় হয়েছে। কিছুটা বাহবা বেগম জিয়া পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু জন্মদিনের রাজনীতি থেকে সরে আসেননি তিনি। উছিলা দেখিয়েছেন বন্যার। তাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু বলতে আরও অপেক্ষা করতে হবে জাতিকে।
বিশিষ্ট জনদের বিএনপি’র বিভিন্ন কমিটিতে কো-অপ্ট করার কথা বলে তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন এদের মধ্যে একমাত্র আসিফ নজরুল ছাড়া বাকিদের কাউকেই বিএনপি’র রাজনীতির প্রতি সমর্থন আছে বলে মনে হয় না। তিনি কি এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন? জানা গেছে তিনি তা করেননি। এমন বিশিষ্টজনদের যুক্ত করতে পারলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার সুবিধে হবে, একথা সত্য। কিন্তু কাজ করতে দেবে কি রাজনীতিকরা?
সাহস করে তিনি বেগম জিয়াকে কূপমণ্ডূকতা পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন- ‘আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন, আপনার গঠনতন্ত্রের নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি সমূহ, নারীদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সমূহে দুই বৎসর পরপর যথাযথ ভাবে নির্বাচন করে উৎসাহী কর্মীদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভিত না নিলে জাতির জন্য গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না’। সত্য উচ্চারণ করেছেন যে, ‘ঘরকুনো কর্মীরা সন্ধ্যায় আপনার গুলশান অফিসে ভিড় করবে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাকে মাঠে নামবে না’। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বড় দুটি দলে, এই পরামর্শ আসলে কোনও কাজে আসে না। তারপরও তিনি যে বলেছেন তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
বিএনপি জাতীয় কমিটিতে 'পরিবারতন্ত্র জিন্দাবাদ', এমন এক কথা বলে জাফরুল্লাহ একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন যে, বিএনপি জাতীয় কমিটিতে পরিবারতন্ত্র জিন্দাবাদ- ১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাই-বোন স্থান পেয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় কমিটিতে ‘৭১ যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তানদের অন্তর্ভুক্তি করায়। প্রশ্ন করতে পারেন, তবে এতে দলটির যে রাজনৈতিক দর্শন প্রকশিত হয়েছে, তা নিশ্চয়ই জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনুধাবন করতে পারবেন। ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি বিএনপি’র রাজনীতিতে বিশেষভাবে সমাদৃত, যেমনি সমাদৃত একুশে আগস্টের সঙ্গে জড়িতরাও। তাই কমিটিতে আছেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি আবদুস সালাম পিন্টু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।

জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ আবার দিয়েছেন যা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও জামায়াতের দুই নেতা, মতিউর রহমান নিজামী এবং আলি আহসান মুজাহিদকে যে কারণে, মন্ত্রী করেছিলেন বেগম জিয়া, সেই একই কারণে দলটিকেও ছাড়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের গাটছড়া তার চিঠিতে শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করলে ভুল করবেন তিনি।
দলের ভেতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহবানকে স্বাগত জানাতে হয়। তবে জামাত বিহীন রাজনৈতিক যে ঐক্যের কথা বলেছেন, সেখানে কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রবের নাম উল্লেখ করেছেন। রাজনীতির গতি প্রকৃতি খেয়াল করলে বাসদের খালেকুজ্জামানের কোনও সম্ভাবনাই দেখা যায় না এই জোটে যোগদানের। এদিক ওদিক ছুটে চলা বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী আর আ স ম আবদুর রব ছাড়া বাকিদেরও নিশ্চিত করা যায় না যে বিএনপি’র সঙ্গে জোট করবে। কারণ জামায়াত ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যা, একুশে আগস্টের মতো ইস্যুগুলো রাজনীতির সমীকরণে বড় ফ্যাক্টর।
তবুও জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ধন্যবাদ দিতে হয় বিষয়গুলোকে সাহসিকতার সঙ্গে সামনে নিয়ে আসার জন্য, যদিও বাস্তবায়নের পথ খুব বন্ধুর।
লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: জ্বালানি ব্যবসার আড়ালে চলতো নারীদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ!

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ