X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তস্নাত ফুলবাড়ী জনবিদ্রোহ: প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান...

শুভ কিবরিয়া
২৬ আগস্ট ২০১৬, ১২:০২আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৩

শুভ কিবরিয়া আগস্ট মাস বাঙালির জাতির জীবনে নানান রক্তস্নাত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যা করা হয়েছে। আবার ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুন করতে চালানো হয় ঘৃণ্য গ্রেনেড হামলা। ২০০৬ সালের আগস্টের এই রকম এক দিনেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত এলাকায় রচিত হয় অন্যরকম এক রক্তস্নাত ইতিহাস। ২৬ আগস্ট ২০০৬ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৬০ হাজার মানুষের এক জনবিদ্রোহ দমন করতে নৃশংস হামলা করে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহত ও আহত হয় অনেক মানুষ। কিন্তু তারপরও স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্য মানুষ দেখেছে এই ফুলবাড়ী জনবিদ্রোহেই। স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৫ বছরে এতো বড় জনসম্পৃক্ততা জনবিদ্রোহও মানুষ আর দেখেনি।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উম্মুক্ত কয়লা খনি করতে সরকার চুক্তি করে এশিয়া এনার্জি নামের অস্ট্রেলিয়ার এক কোম্পানির সঙ্গে। জনমানুষকে উচ্ছেদ করে পরিবেশ বিনাশি এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানায় সেই এলাকার মানুষ। তারা শুরু করে আন্দোলন। ক্রমশ এর সঙ্গে যুক্ত হয় দেশের পরিবেশ সচেতন মানুষেরা। অন্যপক্ষে এশিয়া এনার্জিও চালায় নানা অপতৎপরতা। অর্থ আর প্রভাব খাটিয়ে দেশের ক্ষমতাধর একটি অংশকে তারা নিজেদের পক্ষে আনতে সমর্থ হয়। দুপক্ষইে চলতে থাকে নানান প্রচেষ্টা।
তখনকার সরকারে থাকা বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতাধররাতো তো বটেই বিরোধীদলে থাকা আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতারা এশিয়া এনার্জির পক্ষ নিয়ে উন্নয়নের জিকির তুলতে থাকেন। দেশের ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক-সুশিলসমাজ-উন্নয়নকর্মী-পরিবেশবাদী-বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ এশিয়া এনার্জির পক্ষে মাঠে নামেন। কিন্তু ফুলবাড়ী’র লোকজনকে বাগে আনা যায় না। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এক বড় কর্মসূচি দেয় এই আন্দোলনের পক্ষে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এই কর্মসূচি বানচালের সকল প্রচেষ্টা যখন বিফলে যায় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অকাতরে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন দমাতে চেষ্টা করে। এই সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। জনবিদ্রোহ জনঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে তৎকালীন সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২৬ আগস্ট ২০০৬ এই আন্দোলনের সময় ফুলবাড়ীতে উপস্থিত থেকে এই জনবিদ্রোহ কাভার করার সুযোগ ঘটে আমার। সেদিনের সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতার পুরনো নোট খুলে দেখি আমি নিজেও এই ইতিহাসের অংশ। ফুলবাড়ী জনঅভ্যুত্থানের সেই  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কিছু অংশ বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
দুই.

২৬ আগস্ট শনিবার দুপুর ২টা থেকে মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে থাকে ফুলবাড়ী পৌরসভার সব রাস্তাঘাট। টুকরো টুকরো মিছিল প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আস্তে আস্তে জমায়েত বাড়তে থাকে। ফুলবাড়ীর, বিরামপুরের নানাম গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষের মিছিল আসতে থাকে ফুলবাড়ী শহর অভিমুখে। চলে পুলিশ-বিডিআরের মহড়াও। ১০-১২টি পিকআপ ভ্যান, চারটি ট্রাকে করে সারা শহর চক্কর মারতে থাকে বিডিআর-পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের দল। একটা কেমন যেন যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি। চারপাশের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রিকশা, ভ্যান সব চলাচল বন্ধ। মানুষ নামছে মিছিলে। ক্রমাগত মানুষের ভিড় বাড়ছে। দুপুর ২টার দিকে দিনাজপুর থেকে আসা একদল সংবাদকর্মীর সঙ্গে বসলেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতারা। সাংবাদিকরা জানতে চাইলেন আজকের এবং আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে।

ফটোকপি, কম্পিউটার কিছু না থাকায় হাতে লেখা একটা ছোট কাগজ পাঠ করে শোনালেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। পাশে উপস্থিত ঢাকা ও দিনাজপুর থেকে আসা নেতৃবৃন্দ এবং ফুলবাড়ীর এই কর্মসূচির আয়োজকরা। আনু মুহাম্মদ আস্তে আস্তে পড়ছেন, সংবাদকর্মীরা কাগজে টুকে নিচ্ছেন।

‘সমগ্র জনগণের রায় ঘোষণা করে বলতে চাই, আমরা মানুষ পরিবেশ জীবন জীবিকা ধ্বংস করে কয়লাখনি চাই না। লুণ্ঠন ও পাচারের জন্য আমরা আমাদের এক ইঞ্চি জমিও দেব না। তাই অবিলম্বে ধ্বংস ও লুণ্ঠনের ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প বাতিল করতে হবে।

কর্মসূচির দাবিসমূহ :

১. এই সমাবেশ থেকে জনগণের রায়, আজ থেকে এশিয়া এনার্জিকে এই অঞ্চলে এবং বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। ফুলবাড়ী ও পার্শ্ববর্তী সব অঞ্চলে এশিয়া এনার্জির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে একঘরে করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।

* তাদের কাছে কোনও দোকান-রেস্তোরাঁ কোনও দ্রব্য বিক্রি করবে না।

* তাদের কোনও এলাকায় কাজ করতে দেওয়া হবে না।

২. দেশ ও মানুষের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সর্বনাশ করে যারা এশিয়া এনার্জির দালালি করছে, যারা এশিয়া এনার্জির ঠিকাদার, তাদের সহযোগী- আজকের সমাবেশ থেকে তাদের আহ্বান জানাচ্ছি আজ থেকে এসব দালালি ত্যাগ করুন।

৩. আজকের এই ঘেরাও কর্মসূচির সুস্পষ্ট ঘোষণা-

ক. আগামীকাল সকালে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ত্যাগ করতে হবে এবং তারপর পাততাড়ি গুটিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হবে।

খ. এশিয়া এনার্জিকে দেশ ছাড়ার দাবিতে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬ বুধবার ফুলবাড়ী থানায় পূর্ণ দিবস এবং বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করা হবে।

গ. অবিলম্বে এশিয়া এনার্জি দেশ না ছাড়লে অক্টোবর মাসে অবরোধ, এশিয়া এনার্জির অফিস তালাবদ্ধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।

তিন.

প্রেসব্রিফিং শেষ করার তাড়া আসে। জনস্রোতে সয়লাব তখন পৌর-এলাকা। মিছিলের কণ্ঠস্বর তখন এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে, এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে, এশিয়া এনার্জির সপক্ষীয় সব দালালের বিপক্ষে সরব।

‘বসতভিটা দখল করে, কয়লা খনি চাই না/ ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, এশিয়া এনার্জি ঘেরাও হবে/ দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না/ ফুলবাড়ীর জনতা গড়ে তোলো একতা/ দালালদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে/ দালালদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও/ এশিয়া এনার্জির আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও।’

এসব স্লোগানে মুখরিত জনমিছিল, জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ফুলবাড়ী পৌরএলাকা থেকে হাঁটতে থাকে স্থানীয় ঢাকা মোড়ের দিকে। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। নারী পুরুষ শিশু যুবা প্রৌঢ় বৃদ্ধের মিছিলে ভরে যেতে থাকে পুরো সড়ক। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তখন মিছিল আর স্লোগান।

এ মিছিলেই কথা হয় ৪০ বছর বয়সী একজন নারীর সঙ্গে। নাম সূর্যমণি। ফুলবাড়ী খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার সূর্যমণি মিছিল আর স্লোগানের ফাঁকে বলতে থাকেন, ‘এখানে আমরা খনি করতে দেবো না। তারই জন্য উৎসাহ দিতে আমরা এই মিছিলে আসছি। আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি, আমাদের বাড়িঘর এগুলো নষ্ট করি খনি করতে দেবো না। অসম্ভব।’ আমি পাল্টা প্রশ্ন করি, এশিয়া এনার্জি’র চেয়ে ভালো ব্যবস্থা যদি করে দেয় তবে? সূর্যমণি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, ‘অসম্ভব। ওসব নেব না। বিদেশে (অন্য জায়গায়) কেন আমরা যাবো? এটা আমরা কোনও সময় হতে দেবো না। সবচাইতে বড় কথা- সরকার কে? আমাকে এটা বুঝান। সরকার কে? সরকার হলো জনগণ। ঠিক আছে! জনগণ যেটাই করবে সেটাই কিন্তু হয়ে যাবে।’ সূর্যমণিকে আবার প্রশ্ন করি, এশিয়া এনার্জির পয়সা খেয়ে আপনাদের মধ্যে অনেকেই তো খনির পক্ষে চলে গেছে। সূর্যমণি এবার দ্বিগুণ তেজে জ্বলে ওঠেন, ‘আরে ওই দালালগুলোকে ধরার জন্যই তো আমরা এতো উচ্চকিত হয়া গেছি।’

চার.

এবার মিছিল এগুতে থাকে। সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ জুড়ে মিছিলের অগ্রভাগে থাকেন নেতৃবৃন্দ। ঢাকা মোড় থেকে উর্বশী সিনেমা হলের এই লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে থামে মিছিল। নেতারা ঘোষণা করতে থাকেন কর্মসূচি। ছোটযমুনা নদীর ব্রিজের কাছে পুলিশের বিডিআরের ব্যারিকেড। নেতৃবৃন্দ ওই ব্যারিকেড পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায়। চলে বক্তৃতা, চলে কর্মসূচি ঘোষণা। আসরের আজান পড়েছে কেবল। হঠাৎ দেখি টিয়ার গ্যাস আর গুলির শব্দ। কিছু মানুষ আর পুলিশে তখন চলছে লড়াই। খুব আচানক কেন এই সংঘর্ষ বুঝে ওঠার জন্য একটা দোতলার উপরে ঠাঁই নেই। দেখি রক্তাক্ত জনস্রোত আর পুলিশি লড়াই। হঠাৎ পুলিশ-বিডিআরের আক্রমণ পেয়ে জনতা হতচকিত। কিছুটা বিক্ষিপ্ত। নেতারাও হতচকিত। জনতাকে শান্ত করার উদ্যোগ নিতে নিতে চলে আবার গুলি। খবর আসে দুজন মানুষ গুলিবিদ্ধ এবং মৃত। উন্মাতাল হয়ে ওঠে পুরো জনস্রোত। বিডিআর পুলিশ অবস্থান নেয় ছোটযমুনা নদীর ব্রিজের ওপাশে। এপাশে ব্যারিকেড জনতার। ছোটযমুনা নদীর হাঁটু পানি পার হয়ে জনতা ওপারে যেতে চায়। বিডিআর তা রুখতে নির্বিচারে আবার গুলি চালায়। বিকেলের গোধূলি আলোতে গুলি আর টিয়ার সেলের ধুম্রতায় এক বিক্ষিপ্ত-বিধ্বস্ত-বিভ্রান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জনতা হাতে তুলে নেয় পরিস্থিতি। পথে পথে আগুন ধরিয়ে ব্যারিকেড গড়ে ওঠে। খবর আসতে থাকে মৃত্যুর, হতাহতের। ঠিক জানা যায় না, বোঝা যায় না কতজন মানুষ খুন হলো বিডিআর পুলিশের গুলিতে?

গুজব বাড়তে থাকে। ভীত সন্ত্রস্ততা চলতে থাকে। এলোমেলো হয়ে যায় সব। হঠাৎ কিছু মানুষকে দেখি লাঠি হাতে আয়োজকদের খুঁজতে। এরা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে খুঁজতে থাকে। তাদেরই হাতে স্থানীয় একজন কলেজ শিক্ষককে লাঠিপেটা হতে দেখি। এরা চড়াও হতে থাকে স্থানীয় আয়োজক কর্মীদের ওপরও। দু’একজনের কাছে শুনি এরা স্থানীয় আনোয়ার চেয়ারম্যানের লোক। এশিয়া এনার্জির দালাল বলে মিছিলে নাম ওঠা কথিত আনোয়ার চেয়ারম্যানের লাঠিয়াল বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখে এক ভয়ংকর উদভ্রান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট জুড়ে জটলা গড়ে ওঠে। মানুষ পিছু হটতে থাকে আপাতত। শুনতে পাই আমরা যে হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেখানে গিয়েও হামলা চালিয়েছে কিছু লোক। এরা ঢাকা থেকে আসা লোকজনদের খুঁজতে থাকে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সরে আসতে থাকি। পায়ে হেঁটে ঢাকা মোড় এবং তারপর রিকশায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিরামপুর সদরে এসে পৌঁছি। খোঁজ নিতে থাকি এই কর্মসূচিতে ঢাকা থেকে আসা পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিনভয়েসের দলনেতা আলমগীর কবিরের মাধ্যমে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক আকমল হোসেন প্রমুখের।

পাঁচ.

এরপর একটু থিতু হয়ে পুরো পরিস্থিতির কথা ভাবতে চেষ্টা করি। সকালে যাদের যাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল নোট বই খুলে তা দেখতে থাকি। ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় পৌরসভা চেয়ারম্যান শাজাহান সরকার পুতুর সঙ্গে সকাল ৯:৩০ মিনিটে যে টেলিফোন আলাপ হয় নোটবুক খুলে তা আবার পড়ি।

জাতীয় কমিটির ডাকা এই কর্মসূচির সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কী- প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর ‘অনুষ্ঠানের আয়োজক তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি। এটা সেন্ট্রাল থেকে আয়োজন। ওনাদের স্থানীয় ব্রাঞ্চ এটাকে ম্যানেজ করছেন। আমাদের মৌন সমর্থন আছে। কোনও বিরোধিতা নাই’। পাল্টা প্রশ্ন ছিল, এলাকায় অভিযোগ শুনেছি এশিয়া এনার্জির পয়সা খেয়ে আপনারা নাকি তাদের পক্ষে আছেন? শাজাহান সরকার পুতু বলেন, ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। মানুষ নানারকম কথা বলে। মিথ্যা প্রচার এটা’। শাজাহান সরকার পুতুর এই উত্তর এই উত্তর পড়তে পড়তে পকেট খুঁজে আরেকটা কাগজ পাই। জনস্রোতে কে যেন এই কাগজটি দিয়েছিল মনে নাই। ভালো করে আবার দেখি। ফুলবাড়ী থানার ওসি বরাবর একটা জিডির আবেদন। আবেদনকারী মো. শাজাহান সরকার পুতু, আহ্বায়ক ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি এবং মোঃ খুরশিদ আলম মতি, যুগ্ম আহ্বায়ক ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি। ১০ আগস্ট ২০০৬ তারিখের এই চিঠির বয়ান হুবহু এ রকম

‘আগামী ২৬-০৮-২০০৬ তারিখে আহ্বানকৃত এশিয়া এনার্জি দেশ ছাড় এবং এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও’ কর্মসূচি যাহা ফুলবাড়ী শাখা তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে, উক্ত কর্মসূচি ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির কর্মসূচির এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মসূচি।

অতএব, উক্ত ঘোষিত কর্মসূচির তারিখে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি কোনোভাবেই দায়ী নহে’।

তাহলে কি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার কথা আঁচ করেছিলেন শাজাহান সরকার গং? তারা কি জানতেন খুন, গুলি, হামলা চলবে? ‘ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি’র এই নীরবতা এবং পূর্বপ্রস্তুতি কিছু প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। ভেসে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি-পরবর্তী তাণ্ডবের দৃশ্য। ফুলবাড়ীর দেয়াল লিখনগুলো ভাসতে থাকে চোখে। ‘খনির দালালরা সাবধান।’ কানে ভাসতে থাকে স্লোগান মুখরিত দালাল বিরোধী সেইসব জনমিছিলের উচ্চারণ।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক

আরও খবর: আজ ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস: ১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি চুক্তি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ