X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

নো ফ্রি লাঞ্চ

প্রভাষ আমিন
২৭ আগস্ট ২০১৬, ১৪:০৬আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৬, ১৫:০৪

প্রভাষ আমিন হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তত তিনবার তার সঙ্গে দেখা করেছেন, টেলিফোনে কথা বলেছেন বেশ কয়েকবার। সে সময় ড. ইউনূস বিভিন্ন দফায় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে প্রায় ৩ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এপি পরিবেশিত এই খবরে এখন তোলপাড়। সে সময় হিলারির সঙ্গে দেখা করা ১৫৪ ব্যক্তির মধ্যে ৮৫ জনই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন। এর পরিমাণ ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
হিলারির সঙ্গে ইউনূসের সাক্ষাৎ ও অনুদানের ঘটনায় এখন এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। ড. ইউনূস কেন দেশের বন্যার্তদের জন্য কোনও টাকা না দিয়ে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে কেন অতগুলো টাকা দিলেন, এটা নিয়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আর হিলারি তার সঙ্গে দেখা করার বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে অনুদান নিতেন, এমন ইঙ্গিত দিয়ে অনেকই তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হিলারি বলছেন, ইউনূসের মতো বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে যে কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীই দেখা করতে চাইবেন। বলা হচ্ছে, ড. ইউনূসের দেওয়া অর্থের পুরোটাই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বার্ষিক 'গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ'এর অংশগ্রহণ ফি।
পআমি অবশ্য বিষয়টাকে একটু উল্টো করে দেখতে চাই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যখন তখন কথা বলা, দেখা করা চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশে একমাত্র ড. ইউনূস ছাড়া আর কারও পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ড. ইউনূস তো পরে টাকা দিয়েছেন। আগে টাকা দিয়েও কি বাংলাদেশের কেউ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা করতে পারবেন? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভিক্ষা (অনুদান তো আসলে একধরনের ভিক্ষাই) দেওয়ার মতো উদার, বড়লোক একজন মানুষ বাংলাদেশে আছেন, এটা ভাবতেই গর্বে আমার বুক ফুলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড খুব হিংসুটে। তারা কিনা এখন ড. ইউনূসের মতো একজন বড় মানুষের আয়ের উৎস নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। এমনকি আয়টা বিদেশে হলেও তা আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকতে হবে। তা না হলে নাকি ড. ইউনূসের অনুদানের অর্থ খাস বাংলায় পাচার, আইনের ভাষায় মানি লন্ডারিং বলে বিবেচিত হতে পারে। ছি! ছি! এটা খুব অন্যায়, ড. ইউনূসের মতো একজন সম্মানি লোক, বাংলাদেশ ছাড়া গোটা বিশ্বই যাকে মাথায় তুলে নাচে, তার বিরুদ্ধেই কিনা মানি লন্ডারিংয়ের মতো নিচুস্তরের অভিযোগ! আওয়ামী লীগ সরকার কেন ড. ইউনূসের ওপর এত ক্ষ্যাপা, তা নিয়ে আমার দারুণ কৌতুহল ছিল।

এই কৌতুহলের জবাব পেয়েছি গত সপ্তাহে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে লেখা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিঠিতে। সেখানে তিনি লিখেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে তিনজন ব্যক্তি সহায়তা করেছেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্য দুজন ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচিত-বিতর্কিত মাহবুবুল আলম চাষী এবং সাবেক আমলা ড. এম এ সাত্তার। সেটা ছিল ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাস। তার মানে ড. ইউনূসের আওয়ামী বিরোধিতা এবং আওয়ামী লীগের ইউনূস বিদ্বেষের শেকড় অনেক পুরোনো। তবে তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকমাত্র ছিলেন। আর এখন তিনি দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী, বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাইনবোর্ড। সরকারের উচিত হবে না তাকে কারণে-অকারণে হেনস্তা করা। তবে নোবেল জিতেছেন বলেই ড. ইউনূস আইনের ঊর্ধ্বে, এমনটা ভাবারও কোনও কারণ নেই।

যে যাই বলুক, ক্লিনটন দম্পতির সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক অনেক পুরানো। ১৯৮৩ সালে আরকানসাস রাজ্যের গভর্নর থাকার সময় বিল ক্লিনটন ড. ইউনূসকে ডেকে নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে শুনেছিলেন। সেই থেকে ক্লিনটন দম্পতির সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তাই বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ঝামেলায় পড়ার পর ড. ইউনূস বারবার ছুটে গেছেন প্রিয় বান্ধবীর কাছে; ধর্না দিয়েছেন, আবদার করেছেন, বিচার দিয়েছেন। মানুষ তো বিপদে পড়লে বন্ধুর কাছেই ছুটে যায়। আর বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।

হিলারি ক্লিনটনও তাকে সাহায্য করার পথ খুঁজে বের করতে সহকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বলে হিলারি তার বন্ধুকে সাহায্য করার চেষ্টা হয়তো করেছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। হিলারি তদবির করে দেওয়ার জন্য তার এত পুরানো পারিবারিক বন্ধুর কাছ থেকেও টাকা নেবেন, এটা আমার কাছে বিশ্বাস হয়নি। এপির খবরের পর বিশ্বাস করতে হচ্ছেই।

কারণ হিলারিও স্বীকার করেছেন। আমি আবারও বিশ্বাস করলাম মার্কিনিরা স্বার্থ ছাড়া এক পা-ও ফেলে না। আমেরিকানদের দর্শন- নো ফ্রি লাঞ্চ। ফেলো কড়ি, মাখো তেল।  তবে ড. ইউনূসকে আমি ফ্রি একটা পরামর্শ দিতে পারি। যেহেতু হিলারি আপনার কাজটা করে দিতে পারেনি, তাই আপনি টাকাটা ফেরত চাইতে পারেন। তিন লাখ ডলার কম টাকা নয়। তবে আপনার বান্ধবী এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই সময় চাইলে টাকাটা তাকে দানও করে দিতে পারেন। শেখ হাসিনা  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলে হিলারি কাজটা করতে পারেননি, তবে চেষ্টা তো করেছেন। সেই বিবেচনায় টাকাটা মাফ করে দিতে পারেন। আর প্রমাণ করতে পারেন, বাঙালি দিতে জানে, নিতে জানে না।

লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

আরও খবর: মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর আদ্যপান্ত

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
থাইল্যান্ড ও ভারতের বক্সারকে হারিয়ে সুরো কৃষ্ণর ৬০০ ধাপ উন্নতি
থাইল্যান্ড ও ভারতের বক্সারকে হারিয়ে সুরো কৃষ্ণর ৬০০ ধাপ উন্নতি
রেকর্ড বৃষ্টিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো পানির নিচে দুবাই
রেকর্ড বৃষ্টিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো পানির নিচে দুবাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ