X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে নতুন করে ভাবতে হবে

বিভুরঞ্জন সরকার
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৩১আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৩৪



বিভুরঞ্জন সরকার এবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জনতার ঢল নেমেছিল। আওয়ামী লীগ এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও এবার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে এবং কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে জাতির জনকের প্রতি তাদের অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বলা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিন উপলক্ষে দেশে যতটা মাতামাতি হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলে তা হয় না। যারা এটা বলেন তারা খুব একটা ভুল বলেন না হয়ত। আমাদের দেশের বাস্তবতা এখন পর্যন্ত এটাই যে, জাতির জনক হিসেবে, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনটি সব দল-মতের মানুষ যথাযথ মর্যাদায় পালন করে না। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত আয়োজন তা মূলত আওয়ামী লীগই করে থাকে। তাছাড়া আরও কিছু ছোট দল, যারা অসাম্প্রদায়িক- গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করে তারাও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং আরও কিছু দল আছে যারা ১৫ আগস্টকে শোক দিবস হিসেবে পালনে কুণ্ঠা বোধ করে। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ নেই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর যারা বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের সবারই অবস্থান ছিল বঙ্গবন্ধুবিরোধী। তারা চেয়েছে বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। তার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে এদেশে কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক সেটা তারা চায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর কয়েক বছর ১৫ আগস্ট পালনে ক্ষমতাসীনরা বাঁধা দিয়েছে। অবশ্য রাষ্ট্রশক্তির লালচোখ উপেক্ষা করেও অনেকেই প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছেন, দু ফোটা চোখের জল ফেলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু নিজেই যেহেতু ইতিহাসের স্রষ্টা সেহেতু ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে দেওয়ার কোনও অপচেষ্টাই সফল হয়নি। দিন যত যাচ্ছে, বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু ততই উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন। সব বিভ্রান্তি কেটে যাচ্ছে। জীবিতকালে তিনি যেমন ছিলেন অপরিহার্য, মৃত্যুপরবর্তী সময়েও তিনি রয়েছেন তেমনি প্রাসঙ্গিক। একাত্তর- পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিপরীতে, তার সমকক্ষ অথবা প্রতিপক্ষ হিসেবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলেছে। বলা হয়েছে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বাঙালি জাতিকে অসহায় ফেলে রেখে তিনি ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ঘোষণা না দিলে নাকি বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। যারা এসব বলেন তারা ভুলে যান যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর চরম বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পিলখানা ও রাজারবাগে ইপিআর ও পুলিশের বাঙালি সদস্যরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বাধীনতাকামী বাঙালি ছাত্র-শিক্ষক- কর্মচারী জীবন দিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেছিলেন জিয়ার ঘোষণা না শুনেই। কারণ ৭ মার্চ থেকেই মুক্তিকামী বাঙালির কানে বাজছিল সেই বজ্রকণ্ঠ ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি,... তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করবা’। কাজেই জিয়া ঘোষণা না দিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না- এটা একটা অবান্তর কথা।

একটি মিথ্যা বার বার বললেই সত্য হয়ে যাবে- হিটলারের প্রচারবিশারদ গোয়েবলসের এই তত্ত্বে আস্থা রেখে যারা নানা অপপ্রচার ও মিথ্যাচারে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে চেয়েছে তারা শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি। এবার ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্যাপক জনগণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনই তার প্রমাণ।

আজকের তরুণদের কাছে রয়েছে তথ্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার। কোনও ধরনের কল্পকাহিনী ছড়িয়ে আজকের তরুণদের বিভ্রান্ত করা সহজ নয়। হাতের কাছে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই তারা এটা জানতে ও বুঝতে পারছে যে, শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ হয়নি। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কথা কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশের সব কিছু জুড়েই রয়েছের তিনি। এমনকি জিয়াউর রহমান যে জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেছেন সেটাও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই, তার বদন্যতাতেই।

যদি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করতো, যদি বাঙালিদের অধিকার বঞ্চিত রাখার ফন্দিফিকির না করতো, যদি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত না হতো, যদি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত না হতো, যদি চুয়ান্নর নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি না ঘটতো, যদি শাসক গোষ্ঠী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে মেতে না উঠতো, যদি ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল না করতেন, যদি  গত শতকের ষাটের দশক জুড়ে এই ভূখণ্ডের ছাত্র-জনতা গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে না যেত, যদি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ছিষট্টি সালে শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচির ঘোষণা না করতেন, যদি শেখ মুজিবকে দমিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রজু না করেতেন, যদি ১৯৬৯ সালে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান না ঘটতো, যদি ১৯৭০ সালে নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করতো, যদি ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা না করতেন,যদি বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে না তুলতেন, যদি ৭ মার্চ থেকে ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসনকে কার্যত অস্বীকার করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত না করতেন তাহলে কিভাবে জিয়াউর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা সম্ভব হতো? শেখ মুজিব ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন বলেই জিয়া ঘোষণা পাঠ করতে পেরেছিলেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে যে নবযাত্রা তার পথরচনার পুরো কৃতিত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের। তাছাড়া এটা এখন আর কারো কাছেই অজানা বা অস্পষ্ট নয় যে,স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শুধু সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেননি, তার পারিবারিক জীবনের বিপর্যয় রোধেও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জিয়াকে এক পর্যায়ে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে বিদেশে পাঠানের ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধু মনস্থির করেছিলেন। নানাভাবে তদবির করে জিয়া বিদেশ যাওয়া ঠেকিয়েছিলেন। জিয়ার এই বিদেশ না যাওয়া কোনও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ ছিল কিনা, কে বলতে পারে?

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় বসেছিলেন খন্দকার মোশতাক। মোশতাক ক্ষমতায় বসতে না বসতেই জিয়াকে সেনাবাহিনী প্রধান করেন। তারপর নব্বই দিনের মধ্যেই মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে বসেন জিয়া। জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপত্তা দিয়েছেন, বিদেশে চাকরি দিয়েছেন। এটা সত্য যে, জিয়া প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নিজ মুখে কিছু বলেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার, তাকে বিতর্কিত করার কাজ যারা করেছে তাদের প্রতি জিয়ার সমর্থন ছিলো পুরোমাত্রায়। জিয়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধুর অনুসারিদের ১৫ আগস্ট পালনে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ আর যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন জিয়া । আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরানো, আওয়ামী লীগ থেকে লোক ভাগানোর চেষ্টা জিয়া করেছেন।

জিয়া ভক্তরা এটা বলেন যে, দেশের চরম দুঃসময়ে জিয়া রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলেন।  কিন্তু দেশের ওই ‘দুঃসময়’ তৈরির পিছনে জিয়ার হাত ছিল কিনা সেটা তারা বলেন না। বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু একদলীয় শাসন কায়েম করে গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। জিয়া সেই মৃত গণতন্ত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রথম দিকে এসব কথা কাউকে কাউকে আকৃষ্ট করলেও এখন আর তা করে না। জিয়ার যদি গণতন্ত্রের প্রতি দরদ থাকতো তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দেশে সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আন্তরিক হতেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার ছিল একটি নির্বাচিত সরকার। হত্যা -ক্যুয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কোনওভাবেই গণতন্ত্র সম্মত হতে পারে না। জিয়া ক্ষমতায় বসে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে মজবুত না করে বরং নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। হ্যাঁ -না আওয়ামী লীগের ভোটের আয়োজন করে নির্বাচনকে একটি তামাশায় পরিণত করা হয়েছিল।

এবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আবেগময় বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতেও তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা অত্যন্ত সংযতভাবেই পুনরুল্লেখ করেছেন। ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়েছে, চোখ হয়েছে সজল। সব হারানোর বেদনার কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়েছেন। তার বক্তব্য সবার মর্মস্পর্শ করেছে। ১৫ আগস্ট কেবল বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল তার জীবনসঙ্গী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ, ভাইসহ বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে। যাদের অনেকে সঙ্গেই রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না। কী দোষ করেছিল ১০ বছরের শিশু রাসেল? কী দোষ ছিল কামাল -জামালের নববিবাহিত স্ত্রীর? রাষ্ট্রপতি হিসেবে, একজন শাসক হিসেবে শেখ মুজিবের যদি কোনও ভুলত্রুটি থেকেও থাকে তাহলেও তাকে হত্যা করার অধিকার খুনিদের দিয়েছিল কে? আসলে গণতন্ত্র কিংবা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা নয়, খুনিদের মূল লক্ষ্য ছিল জাতির জনককে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া! প্রাথমিকভাবে তারা সফল হলেও বাঙালি জাতি ধীরে ধীরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ শত বাঁধা-প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু  পরাজিত শত্রুরাও বসে নেই । তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্রমাগত কৌশল বদল করে আঘাত হানতে উদ্যত হচ্ছে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এবং তাদের উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার ধারক বাহকরা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চেহারা নিয়ে নিজেদের হাজির করছে। তবে এরা বাংলাদেশের মাটিতে শিকড় গাড়তে পারবে না মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে এরা অবশ্যই নির্মূল হবে।

এবার ১৫ আগস্টের  একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কেক কেটে জন্মদিন পালন না করা। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন কিনা তা নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক আছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়া হঠাৎ করে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন শুরু করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর হত্যার শোকাবহ দিনটিকে বেগম জিয়া কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব হিসেবে পালন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, এমনকি বিএনপি- দরদি কেউ কেউ এতদিন বেগম জিয়াকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন  না করার আহবান জানিয়ে আসলেও তিনি এতদিন তা কানে তুলেননি। কিন্তু এবার ঘোষণা দিয়ে তিনি কেককাটা থেকে বিরত থেকেছেন। এটাকে অনেকে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ মনে করছেন বেগম জিয়ার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছেন। অবশ্য শেখ হাসিনা এটাকে খালেদার রাজনৈতিক উদারতা বলে মনে করছেন না। কারণ খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেক কাটা থেকে বিরত থাকেননি, তিনি কেক কাটা থেকে বিরত থেকেছেন গুলশান ট্র্যাজেডি ও বন্যার কথা বলে। বেগম জিয়া যদি দেশে চলমান অবিশ্বাস ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে সত্যি সাদা পতাকা দেখাতে চান তাহলে তাকে পরের বছর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করার ঘোষণা দিতে হবে। কোনও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে যদি বেগম জিয়া রাজনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে চান সেটা আর পারবেন বলে অনেকেই মনে করেন না। নিজের দলের ওপরই বেগম জিয়ার নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ছে। তার ঘোষিত কমিটি নিয়েই দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। তার জনপ্রিয়তায় হয়তো ভাটা পড়েনি কিন্তু বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি যে দুর্বল হয়ে পড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নয়, যুদ্ধজয়ের জন্য প্রয়োজন সুশৃঙ্খল যোদ্ধাদল। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বেগম জিয়াকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কৌশল সম্পর্কে  অনেক কিছুই ভাবতে হবে নতুন করে, পুরানো ধারায় চললে তাকে ক্রমাগত হোঁচট খেতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

[email protected] 

 

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ