X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিকা ভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

আশরাফ মাহমুদ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৩আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৯

আশরাফ মাহমুদ ১.

জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অনেক দেশে ইতোমধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারী পর্যায়ে চলে গেছে বা যাচ্ছে (যেমন- ব্রাজিল, কলম্বিয়া)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে, ইবোলার পরে এখন জিকা ভাইরাসের  সংক্রমণ মহামারীর আকার  ধারণ করতে পারে।  সংস্থাটি অনেক দেশকে বিশেষভাবে সর্তক করে দিয়েছে সংক্রমণের আশঙ্কা বিষয়ে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ অথবা পরিকল্পনা নির্দেশনাও দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশ জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি এক গবেষণাপত্র মতে আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক দেশ, বিশেষ করে ভারত, চীন, ফিলিপিনস, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দেশের প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মানুষের বিশাল অংশ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গবেষকরা ওপরে উল্লেখিত দেশগুলোতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য আকাশপথে মাসিক ভ্রমণের হার, দেশগুলোর গত ৫০ বছরের জলবায়ুর উপাত্ত, জনসংখ্যার পরিসংখ্যান এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গাণিতিক মডেল তৈরি করে ঝুঁকি নির্ণয় বা অনুমান করেছেন। এছাড়া তারা জিকা ভাইরাসের সঙ্গে মিল থাকা ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণকেও মডেল করে জিকা ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। গবেষকরা আশা করছেন, আতঙ্ক সৃষ্টি নয়, বরং এসব উপাত্ত ও ফলাফল এসব দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনবে।  পাশাপাশি এই রোগ মহামারী রূপ ধারণ করলে আক্রান্ত দেশগুলোর সরকার ও স্বাস্থ্যখাতকে তাদের সীমিত সম্পদ কীভাবে কাজে লাগাবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ ও পরিকল্পনার বিষয়েও কাজে লাগবে। যদিও বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে যে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রামণের আশঙ্কা কম। তবে তারা এর পেছনে যেসব যুক্তি দিয়েছে (যেমন- বিমানবন্দরে জিকা ভাইরাস-আক্রান্তদের শনাক্ত করার জন্য থারমাল ক্যামেরা বসানো) তা রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নয়, বরং রোগী শনাক্তকরণের অতি প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।

২.

সিঙ্গাপুর কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। কারণ এখানের গড় তাপমাত্রা অনেক বেশি এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এমন যা জিকা ভাইরাস বহনকারী দুই ধরনের এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এছাড়া বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিভিন্ন কারণে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে প্রচুর লোক আসেন। বাংলাদেশের জনগণ কর্মসংস্থান ও অন্যান্য কারণে আক্রান্ত দেশগুলোয় আছেন অথবা ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশে ঘনবসতির কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি। ভয়ংকর কথা হচ্ছে, আশঙ্কা সত্যি হলে এতো বড় দুর্যোগ বা মহামারী মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, অর্থ ও স্বাস্থ্য সম্পদ আমাদের নেই। বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষের পেছনে গড়ে মেডিক্যাল সেবা বাবদ সরকারি খরচ (সবধরণের খরচ মিলিয়ে) ২০১৪ সালে ছিল মাত্র ৩০.৮৩ ইউএস ডলার বা ২২৫০ টাকা। এই সংখ্যা তুলে ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দ ও বিনিয়োগ। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই ব্যাপারটি সহজে চোখে পড়ে। ১৯৯৯-২০০২ সালে যখন ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রামণ বেড়ে গিয়েছিলো তখনও ব্যাপারটি চোখে পড়েছিল। অর্থাৎ, ওপরে উল্লেখিত কারণগুলো, বিশেষ করে জলবায়ু এবং ভাইরাস বহনকারী মশার উপস্থিতি এবং কারণগুলোর সমন্বয় বা মিথস্ক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

৩.

১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা বনে প্রথম শনাক্ত করা জিকা ভাইরাস মূলত দিনের বেলায় সক্রিয় দুই ধরণের (Aedes aegypti  ও Aedes albopictus) এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামণের দিক থেকে এটির ডেঙ্গু, পীতজ্বর, ওয়েস্ট নাইল রোগের ভাইরাসের সঙ্গে মিল রয়েছে। ১৯৫০ এর দশক থেকেই এই ভাইরাসে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে-ও মূলত ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালে এই ভাইরাস প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকের দেশসমূহ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমিত হতে থাকে। ২০১৫-১৬ সালে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করে। ব্রাজিলে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ জিকায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু অক্টোবর ২০১৫ থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত এই চার মাসেই প্রায় ৩৫০০ জন শিশু জন্ম নিয়েছে মাইক্রোসেফালি নিয়ে। মাইক্রোসেফালি হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট আকৃতির মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করার একটি অবস্থা। জিকা ভাইরাস গর্ভবতী সন্তানের মস্তিষ্কের গঠন ও স্নায়ুকোষের বিন্যাসব্যবস্থাকে ব্যাহত করে, ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে পূর্ণবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাস গিলেন-বারে সিন্ড্রোমের (দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রান্তিক স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণের ফলে সৃষ্ট পেশি দুর্বলতাজনিত অবস্থা) কারণ হয়। তবে জিকা ভাইরাসের প্রতি পাঁচটি সংক্রমণের চারটিতেই কোনও বিশেষ উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। যেসব ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যায় সেইসব উপসর্গসমূহ হচ্ছে জ্বর, হালকা মাথাব্যথা, অস্থিসন্ধি অথবা কোমরের কাছে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি হওয়া। উপসর্গগুলো বেশ মৃদু হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তিরও দরকার হয় না কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কাও খুবই কম।

তবে প্রশ্ন হতে পারে জিকা ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কী আছে? প্রথমত, মশা দ্বারা সংক্রমিত অন্যান্য ভাইরাসের (যেমন, ডেঙ্গু) তুলনায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত মশা গর্ভবতী মহিলাদের কামড়ালে গর্ভের শিশুর মাইক্রোসেফালি হতে পারে এবং অন্যান্য মস্তিষ্ক-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে; পঙ্গুত্ব বা কম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মানো শিশুরা পরবর্তিতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না।  অর্থাৎ এই ভাইরাস পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।

দ্বিতীয়ত, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের জন্য কোনও টিকা অথবা ওষুধ নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র ভরসা। মশার কামড় না খাওয়া (মশারি ব্যবহার করা এবং দীর্ঘ পোশাক পরা), মশার বংশবিস্তার রোধ করা (জমাট পানি যেমন টবে জমানো পানিতে মশা বংশবিস্তার করতে পছন্দ করে) প্রয়োজন। এই ভাইরাস বাতাসবাহিত নয়, অর্থাৎ বাতাসের মাধ্যমে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি বা সংস্পর্শে এলেই ভাইরাস সংক্রামিত হবে না, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তগ্রহণ অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনের ফলে সংক্রামিত হয় (যা ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয় না)।

সাধারণত ৫-১২ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো এমনিতেই সেরে যায়, তবে ভাইরাসটি দীর্ঘদিন (প্রায় ৭২-৯০ দিন পর্যন্ত) আক্রান্তের শরীরে টিকে থাকতে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ, প্রচুর পানি ও সুষম খাবার খাওয়া। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনও করা যায় উপসর্গ দেখা দিলে।

৪.

জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রামণের মিল রয়েছে। তাই ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রামণের উপাত্ত ও অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জিকা ভাইরাস থেকে কিছু অনুমান করতে পারি। বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রামণ ঘটে ১৯৯৯-২০০২ সালের দিকে। তৎকালীন সরকার ও স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তখন ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রামণের ঝুঁকিকে কমিয়ে দেখেছিলো (এখন যেমন জিকার ভাইরাসের ক্ষেত্রে হচ্ছে) এবং সরকার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ কর্মসূচির অভাব ছিল। এক গবেষণা মতে, সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে রিপোর্ট করা উপাত্ত মতে, শুধু ঢাকা, চট্রগ্রাম ও খুলনায় ২০০০ সালে ৫৫৫১ জন ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাদের ১.৭% মৃত্যুবরণ করেন। এই হার ২০০২ সালে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৬১৩২ জনে এবং আক্রান্তদের ১.০% মৃত্যুবরণ করেন। যদিও গবেষকরা ধারণা করছেন যে সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে রিপোর্ট না করা সংক্রমণ মিলিয়ে এবং সারা বাংলাদেশে আক্রান্তদের সংখ্যা যোগ করলে এসব সংখ্যা আরও কয়েক গুণ হতে পারে। অর্থাৎ, যেসব এলাকায় অবকাঠামো ও জনবল নেই, তথ্যউপাত্ত সংগ্রহের (যেমন, গ্রামীণ কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল) সুযোগ ও সামর্থ্য নেই কিংবা যারা দায়িত্বাধীন সংস্থায় রিপোর্ট করেন না তাদের সংখ্যা যোগ করলে ডেঙ্গু মহামারীর পরিসংখ্যান আরও ব্যাপক হবে। ডেঙ্গু সংক্রমণের এই ইতিহাস আমাদের ভাবিয়ে তোলে যে সরকার যদি এবারও ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে হিসাব করে কিংবা সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করলে কী করা হবে সেসব পরিকল্পনা না করে অথবা প্রয়োজনীয় বিকল্প ব্যবস্থা না রাখে তবে আমরা আরেকটি মহামারীর সম্মুখীন হতে পারি।

অন্য আরেকটি গবেষণা মতে, ডেঙ্গু ভাইরাসের সময়ে জলবায়ু ও আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন কারণ, যেমন, বৃষ্টির পরিমাণ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ইত্যাদি কারণগুলো ব্যাপক প্রভাব রেখেছিলো। বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো এই বিষয়গুলো সত্য, তাই ধারণা করা যায় জিকা ভাইরাসের সংক্রামণ যদি হয় তবে এই ব্যাপারগুলো আবারও প্রভাব ফেলবে। ডেঙ্গু ভাইরাসের সময়ে প্রাথমিক দিকে এই ভাইরাস, রোগ, উপসর্গ ইত্যাদি বিষয়ে জনগণের, বিশেষ করে গ্রামীণ ও শিক্ষা ও তথ্য পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিতদের সচেতনার অভাব ছিলো। ফলে মশার বংশবিস্তার রোধে ও ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যেসব দায়িত্ব ব্যক্তি নিজে পালন করতে পারেন সেইসবে যথেষ্ট পদক্ষেপ ছিল না। তাই জিকা ভাইরাসের সংক্রামণ রোধে এবং আক্রান্তদের জীবনমান যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য আমাদের জিকা ভাইরাস ও রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেহেতু জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রচুর মিল তাই ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যায় (রোগীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে ও রোগ প্রতিরোধে) সেগুলো জিকা ভাইরাসের ক্ষেত্রে নেওয়া যায়। আপনি যদি সন্দেহ করেন যে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেন। তবে যেসব নারী গর্ভধারণ করেছেন বা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া উচিত।  ভাইরাস-জনিত রোগের উপসর্গ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন। যেহেতু ভাইরাস-সংক্রামিত অনেক রোগেরই উপসর্গে মিল আছে, তাই হালকা সর্দি কাশি হলেই ভয়ে আতঙ্কে ভোগার কিছু নেই। মনে রাখা দরকার যে সচেতনতার অভাব ও নিয়ন্ত্রণহীনতা বোধ থেকেই ভয় ও অসহায়ত্বের সৃষ্টি। তাই জিকা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের ভীত নয় বরং সচেতন হয়ে তথ্যভিত্তিক উপায়ে একে মোকাবিলা করতে হবে।

৫.

বাংলাদেশে সম্প্রতি জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে কখনও অন্যত্র ভ্রমণ করেননি এমন এক লোকের রক্তে।  ফলে ধারণা করা যায় যে তিনি অন্যজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা জিকা ভাইরাস বাংলাদেশে রয়েছে। দুটো ক্ষেত্রেই সংক্রমণের সুযোগ থাকে। সিঙ্গাপুরে আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। তাই সরকার ও স্বাস্থ্যসংস্থাগুলোকে শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নয়, বহিরাগত উৎস অথবা অন্য মাধ্যম দ্বারা জিকা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া যেহেতু জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের চারজনই কোনও উপসর্গ দেখায় না তাই আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে রিপোর্ট করা সংখ্যা থেকে। সিঙ্গাপুর, যে দেশটি তাদের প্রাত্যহিক জীবন ও অবকাঠামো ইত্যাদি দিকে শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বিখ্যাত, সেই দেশটিতে জিকা ভাইরাসের সংক্রামণ বেড়ে যাওয়া নির্দেশ করে যে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, জনবল থাকলেও অনেক সময় ঘটনা অপ্রত্যাশিত দিকে বাঁক নিতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নিত্যনতুন দেশ, যেগুলোয় আগে সংক্রমণের কোনও ইতিহাস নেই, এমনকি জিকা ভাইরাসের অস্তিত্বের হদিস ছিল না, সেইসব দেশে (যেমন, মালয়েশিয়া) এর নতুন সংক্রমণ নির্দেশ করে যে বাংলাদেশও ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের জনগণ যেসব দেশে জিকা মহামারী আকারে বিস্তারিত (যেমন, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ইত্যাদি) সেসব দেশে ভ্রমণ বেশি হারে না করলে-ও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশ ভৌগোলিক দিক থেকে অনেক কাছেই এবং এইসব দেশে জনগণের ভ্রমণ কম নয়।  বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। সরকারি সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে যে বেনাপোল ও বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, এখানে বলা দরকার যে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন এতে যাত্রীরা (সে যাত্রী আক্রান্ত হলেও)  ভোগান্তির শিকার না হন, কিংবা অন্যান্য যাত্রীরা অসুবিধার সম্মুখিন না হন। কারণ যেকোন রোগ ও দুর্যোগ মোকাবিলার একটি বড় অংশ হচ্ছে সহমর্মিতা ও মানবিকতা।

এমন-ও হতে পারে যে বাংলাদেশ বা কিছু দেশের মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা রয়েছে। তাই এইসব দেশে বিস্তারের গভীর আশঙ্কা থাকলেও ব্যাপারটি মহামারী আকার ধারণ করবে না, আমরা এটি আশা করতে পারি। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের সচেতন থাকবে হবে অন্যান্য আশঙ্কা সম্পর্কে এবং সেইসব ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

লেখক: গবেষক, কবি ও লেখক।

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ