X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকজন সৃজনশীল মানুষের কথা

তুষার আবদুল্লাহ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:০৬আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:০৪

তুষার আবদুল্লাহ বাংলাদেশ এখন নিজ রঙে রাঙানো। আশ্বিনে সবুজ হয়ে আছে। মাঠে মাঠে আমনের ফলন। সবুজ আমনের ওপর দিয়ে যখন সাদা বক উড়ে যায়, তখন মুগ্ধতায় নিমজ্জিত হতেই হয়। রাতে আলোতে, মাঠের সবুজ যেন জমিনে জোছনা ছড়ায়। এই ক্যানভাসের যারা শিল্পী, তাদের চোখেও মুগ্ধতা। চিলাহাটি, ডোমার, বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, পাগলাপীরে এমন কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে আড্ডা হলো। বৃষ্টিতে ভিজে, পূর্ণিমায় ভিজে।
বদরগঞ্জে কথা হচ্ছিল খোকা ও ইয়াসিনের সঙ্গে। দু’জনের জীবনযাপনের নির্ভরতা কৃষির ওপর। নিজেদের বিঘে চারেক জমির পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়েও তারা চাষ করেন। খোকা জানালেন, কোনও বারই তিনি ফলন ফলিয়ে লাভ করতে পারেন না। কখনও খরচ আর ফলনের দাম সমান সমান থাকে, কখনও খরচ ওঠানোই যায় না। ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া এখন তাদের কাছে অধরা স্বপ্ন। ইয়াসিন জানালেন, প্রতিবারই লোকসান দিতে হয়। তারপরও কেন ফলন করে যাচ্ছেন? সবুজ ধানের শীষে হাত বুলিয়ে খোকা বললেন, কী করব এই জমিন ফালায় যামু কই? কৃষি কাজ ছাড়া তো আর কোনও কাজ জানি না।
পাগলাপীরে তখন ঝুম বৃষ্টি। ছোট এক চায়ের দোকানে জড়ো হয়েছেন কয়েকজন কৃষক। এবারের বৃষ্টি নিয়ে তারা খুশি। আশ্বিনে প্রথম দিনে আমনের মাঠ যে অবস্থায় আছে, তাতে ফলন যে খুব ভালো হবে, এটা তারা বুঝতে পারছেন। জমির উর্বরতা বুঝে বিঘাতে কেউ কেউ ২৫ মন ধানও পাবেন। ফলন নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও, শঙ্কা আছে ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে। আজিমুদ্দিন নামের একজন কৃষক জানালেন, তাদের অনেকেই মাঠে ফলন রেখেই ধান বিক্রি করে দিতে হয়। উৎপাদনের জন্য তাকে যে টাকা কর্জ করতে হয়, তার সুদ আসল মেটাতে ফসল তোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করা চলে না। সঙ্গে আছে কৃষকের ভূমিহীন হয়ে যাওয়ার হুলিয়া। বর্গা নেওয়া জমির টাকা ফেরত না দিতে পারলে, জমিও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কৃষকের।
সেই সঙ্গে আছে পুত্র সন্তানের চাকরি, বিদেশ যাত্রা এবং কন্যার বিয়ের জন্য জমি বিক্রি, ধান অগ্রিম বেচে দেওয়া। আর একটি সমস্যা হলো ক্ষুদ্র কৃষকদের ধান মজুদ রাখার মতো নিজের গোলা নেই। এই নানামুখী সমস্যাচক্রে পড়ে কৃষক ফড়িয়া এবং চাতাল মালিকের কাছে ধান তুলে বাজারের মন্দা সময়ে। সরকার বোরো ও আমন মৌসুমে ধান চাল কেনার জন্য দাম ঠিক করে দেয়, তাতে ক্ষুদ্র কৃষকের কিছু যায় আসে না। এর যদি কোনও সুফল থাকে, তার ফল ভোগ করে চাতাল মালিক ও ফড়িয়া।

পীরগঞ্জের কৃষক মঞ্জুর মুখে হাসি দেখলাম। পাটচাষ করে তিনি ভালোই দাম পেয়েছেন। গত তিন মৌসুম তিনি পাটের ফলন করছেন। তার দুই বারের লাভ দেখে আরও অনেকে এবার পাট করেছেন। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে, লাভ হয়েছে বেশ ভালো। পীরগঞ্জ বাজারে আরও যাদের সঙ্গে কথা হলো তাদের বেশ কয়েকজনকে আগামীবার পাট করতে উৎসাহী দেখলাম বটে, তবে আগামীবারও দাম ঠিক পাওয়া যাবে কিনা, তার নিশ্চয়তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন তারা।
উত্তরবঙ্গের চাষিদের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এবারের কোরবানির বাজারে অনেক চাষি লাভ করতে পেরেছেন। এখন তাদের অনেকে গুছিয়ে গবাদী পশুর খামার করতে চান। কৃষি কাজের পাশাপাশি তারা গবাদী পশু পালনে ব্যস্ত হতে চাচ্ছেন।
চিলাহাটির মজনু বললেন, লোকসান হলেও আমাগো পালানোর জায়গা নাই। নিজেগো মুখে খাওন তুলোন লাগব, আবার আপনাগো মুখেও খাওন তুইলা দিতে হইব। আমাগো কথা কি আপনারা ভাবেন? এর উত্তর দেওয়া সহজ নয়। সহজ মানুষেরা যত সরলভাবে উৎপাদন করে যাচ্ছেন, আমরা ততটা জটিল ভাবেই হয়তো তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ভাবি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ