X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি হামলার পরও নিজ মহিমায় প্যারিস

নাদীম কাদির
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:০৫আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:০৮

Nadeem Qadirজঙ্গি হামলার প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে প্যারিসের নামটি। ফ্রান্সজুড়ে চলছে জরুরি অবস্থা। কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) অনুসারীদের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার শিকার এই নগরী, তবুও সেখানে জীবন এগিয়ে যাচ্ছে নিজ গতিতে।
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও অর্থহীন জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছিল, যার স্মৃতি এখনও তাজা আমাদের মনে। এখানে মনে রাখতে হবে, অনেক ক্ষেত্রেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-এর মানে দাঁড়াচ্ছে আইএস-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত মুসলিম তরুণদের উৎখাত। আর জঙ্গিবাদের বীজ সমূলে উপড়ে ফেলার আগে পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।
সপ্তাহ শেষে এক আকস্মিক সফরে প্যারিসে গিয়েছিলাম, যদিও মনের মাঝে এই আশঙ্কা ছিল, আমি সেখানে অবস্থান করার সময়েই যদি জঙ্গি হামলা চালানো হয়! এটা কিছুটা আতঙ্কের, যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি বুঝতে পারি, কেন আমার কিছু ব্রিটিশ বন্ধু বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে কিছুটা দো-টানায় থাকেন।
প্যারিস হলো আমার কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন এক শিল্পীর বাড়ি। তার একটি সাজানো বাড়ি রয়েছে প্যারিসে। আমরা ভালো-মন্দ সবই ওই গাছ-গাছালিতে পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টে বসে আলোচনা করেছি, সেখানে ঝুলছিল শিল্পীর অসাধারণ সব শিল্পকর্ম।
আমাদের বিভ্রান্ত মন বা অন্য কারও কথায় কান না দিয়ে ওই সফরে যাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে ভালো কাজ।
এয়ার ফ্রান্সের বিমানটি প্যারিসের চার্লস ডি গল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্পর্শ করা মাত্রই আমি নিজেকে বললাম, প্যারিসে আসায় অবশেষে একটা স্বপ্নপূরণ হলো, যেখানে নগরীটির সব সমেত তাকে অনুভব করছিলাম।
প্যারিসে আমাদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. শহীদুল ইসলাম এবং আমাদের সফরের প্রটোকল কর্মকর্তা। বিমানবন্দর থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সুসজ্জিত ‘বাংলাদেশ হাউসে’।
শহীদুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোচনা হয় প্যারিস হামলা নিয়ে। তিনি জানালেন, হামলার পর কয়েকদিন আতঙ্ক ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
শেষ বিকেলে আমরা গেলাম আইফেল টাওয়ারে। সুউচ্চ আইফেল টাওয়ারের সামনে বিশাল লম্বা টিকিটের লাইন। আহ! পুরো বিশ্ব থেকে লোকজন আসছে এখানে।

এরপর আমি চাপা আতঙ্কের দেখা পেলাম—ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনা সদস্যরা হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এর খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আছেন ভারি অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ সদস্যরা।

তারা অনিন্দ্য সুন্দর শেজ এলিসসহ নগরীতে ঘুরে বেড়ানো সবার দিকেই নজর রাখছিলেন। এই এলাকাটি অসম্ভব সুন্দর, সেখানে পর্যটকরা খাচ্ছেন, দামি ব্র্যান্ডের দোকানে কেনাকাটা সারছেন।

আমি একটি সুগন্ধীর দোকানে গেলাম। সেখানে লোকজনের ভিড়ে আমি নড়তেও পারছিলাম না। এরপরও নিরাপত্তারক্ষীরা চেক করে ঢুকতে দিলেন। আমি এজন্য কিছু মনে করিনি, বরং স্বাগত জানিয়েছি।

আমি এক সুন্দরী বিক্রয়কর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম, প্যারিসে জঙ্গি হামলার কথা তার মনে আছে কিনা? ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে তিনি জানালেন, তা ছিল বীভৎস, তবে ‘আমাদের বাঁচতে হবে আর কাজ করতে হবে... কিছুদিন ছিল খুবই বিব্রতকর।’

এক তরুণ বাংলাদেশি আমাকে বললেন, জাদুর নগরী প্যারিসকে অনুভব করতে পর্যটকদের অন্তত একটা দিন শেজ এলিস বা তার আশেপাশে কাটাতেই হবে। একদল বাংলাদেশি তরুণ ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে প্যারিসে এসে মিলিত হয়েছে, তারা এই নগরী ছেড়ে যেতে চান না।

তাদেরই একজন জানালেন, ‘চারিদিকে আতঙ্ক কিন্তু ফরাসি সরকার তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করেছে, আর এজন্য আমরা আর আতঙ্কিত নই... তবে আমরা সতর্ক।’

তিনি আরও জানান, ‘প্যারিস এখন তার পূর্বের অবস্থায় নিজ রূপে ফিরে এসেছে। আর সবাই তা উপভোগ করছে। তবে জঙ্গিবাদের সামনে মাথানত করতে কেউ রাজি নয়।’

তিন দিন প্যারিসে ঘোরাঘুরি করে আমি বুঝতে পারলাম, নগরীর বাসিন্দারা হামলার আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশেও আমরা একই অবস্থান গ্রহণ করেছি, আর কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী খুবই সাফল্য অর্জন করেছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করতে পারেন।

ঢাকার রেস্তোরাঁ আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে, যার জন্য ঢাকাবাসীদের খ্যাতি রয়েছে। জঙ্গিদের সামনে মাথানত না করে আমাদের অবশ্যই তাদের পদদলিত করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ