X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরুষের ধর্ষণ ভাবনা

লিপন কুমার মণ্ডল
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:৩৫আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৮

লিপন কুমার মণ্ডল সব পুরুষই কি সম্ভাব্য ধর্ষক? এ রকম একটি প্রশ্নের উত্তর এ পর্যন্ত সমাজ গবেষকরা মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের চেষ্টা করেননি। এছাড়া সমাজের সাধারণ স্থিতিশীল অবস্থায় যে ধর্ষণ সংঘটিত হয় তা নিয়েও মৌলিক গবেষণা অপ্রতুল। ব্রাউন মিলার, মিশেল ফুকো, আন্দ্রিয়া ডরকিন, সুশান বর্দো, র‌্যান্ডি থর্নহিলসহ হাতেগোনা কয়েকজন তাত্ত্বিকের মূল্যবান গবেষণা চোখে পড়ে ধর্ষণ নিয়ে। পৃথিবী সভ্য থেকে সভ্যতর হলেও ধর্ষনের মতো জঘন্য অপরাধ এখনও কেন ঘটছে এবং বেড়েই চলছে দিন দিন? পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উন্নত দেশে কেন ধর্ষণের হার বেশি? এবং পৃথিবীব্যাপী ৮০%-এর বেশি ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখার কারণ কী?
বিখ্যাত ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খাইম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (ধর্ম, বিবাহ, বয়স, জেন্ডার ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভক্ত) মানুষের আত্মহত্যার হার বিশ্লেষণ করে এর ধরন, কারণ, সমাজ এবং ব্যক্তির ওপর এর প্রভাব, ইত্যাদি খুঁজে বের করেন, যা মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। একবিংশ শতাব্দীতে গ্লোবাল সাউথ তথা বাংলাদেশের পুঁজিবাদের ধরন নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি অন্য একটি গবেষণায় আমি বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের ধর্ষণের হার এবং ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখার হার নিয়ে গবেষণা এগিয়েছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ধর্ষণের ধরন, কারণ ও সমাজ এবং নারীর ওপর এর প্রভাব ইত্যাদি জানার জন্য।
এছাড়া সম্প্রতি তনু ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পর মনে হয়েছে এ নিয়ে গবেষণা হওয়া জরুরি। তাই ১৯৮৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ধর্ষণের কারণকে তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি আমার গবেষণায়। উক্ত গবেষণা দুটির সূত্র ধরে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ লেখাটিতে দেখানোর চেষ্টা করেছি সমাজের বৃহৎ পরিসরে পুরুষের মধ্যে কিভাবে যৌন-চিন্তা তথা ধর্ষণের চিন্তা ঘুরপাক খায় এবং নারীর জীবনে তার প্রভাব কতটুকু।


পুরুষের ধর্ষণ ভাবনা

ধর্ষণের চিন্তা আর যৌনচিন্তা এক নয়, তবে একটি অন্যটির পরিপূরক। পুরুষ দিনে প্রায় ৮০০০ বার যৌন চিন্তা করে থাকে, এ রকম একটি প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টেরি ফিশারের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল গবেষণা করেন। তারা খুঁজে পেয়েছেন একজন পুরুষ দিনে গড়ে প্রায় ১৯ বার সক্রিয় যৌনচিন্তা করে থাকে, যেখানে নারীর যৌনচিন্তা দিনে ১০ বার। কিন্তু একজন পুরুষ দিনের কতবার ধর্ষণের চিন্তা করে থাকে, তার ওপর কোনও গবেষণা মেলা কঠিন। এই লেখাটির মাধ্যমে এ প্রশ্নের আংশিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

জগদ্বিখ্যাত সমাজ-মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছিলেন, আদিম-অবাধ যৌনাচার প্রথার ওপর সমাজ বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পেরেছিল বলেই মানুষের সমাজ আদিম খোলস ছেড়ে, বন্য-বর্বর জীবন ছেড়ে সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিল। যে সভ্যতা এখনও বহমান। এ রকম একটি তত্ত্বকে মাথায় রেখেই বলা যায়, অবাধ যৌনাচার রোধে সমাজ আরোপিত ‘শাস্তি-বিধান’ এবং সমাজ-সৃষ্ট ‘লোক-লজ্জার ভয়’—এ দু’টি কারণেই পুরুষ সভ্য হওয়ার অবিরাম চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু পুরনো স্বভাব সে ছাড়েনি। পুরনো অবাধ যৌনাচার প্রথার বিকল্প হিসেবে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ল ধর্ষণের মতো জঘন্য কর্মে। প্রাচীন-সমাজ গবেষকদের ধারণা—আদিম যুগে ধর্ষণ ছিল না, কারণ অবাধ যৌনাচার পর্বে পুরুষের ধর্ষণের দরকার হয়নি। সভ্যতার সূচনালগ্নেই ধর্ষণের উপস্থিতি। এ সূচনা পর্বে তাই প্রায় সব নারী হয়ে উঠল ‘সভ্য’ আর পুরুষের বড় একটি অংশ রয়ে গেল ‘বর্বর’, ‘অর্ধ-সভ্য’, ‘কৃত্রিম-সভ্য’ এবং সামান্য অংশ হয়ে উঠল ‘সভ্য’। যৌনতাড়না বা যৌনাচরণ যারা স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম (স্বেচ্ছায় অথবা বিকৃত-মানসিকতার কারণে) তারাই ‘বর্বর’, আর যারা মাঝে-মধ্যে এসব অনিয়ন্ত্রণ আচরণে অভ্যস্ত তারা ‘অর্ধ-সভ্য’, যারা এসব আচরণ নিয়ন্ত্রণের নামে নানা কৌশল অবলম্বন করে সম্ভাব্য ধর্ষকের তালিকায় থাকে তারা ‘কৃত্রিম-সভ্য’ এবং বাকিরা সভ্য বলে পরিচিত, কারণ তারা এসব দোষে দুষ্ট নয়।

উল্লিখিত পুরুষের ‘কৃত্রিম-সভ্য’ রূপই আধুনিক সমাজের মূলধারার পুরুষের প্রধান চারিত্রিক রূপ। আদিম (অবাধ যৌনাচারের অভ্যাস) এবং কৃত্রিম (নতুন সভ্য সমাজের ধর্ষকের রূপ) দুটি রূপই পুরুষের মধ্যে যুগপৎ বিরাজমান। সেই থেকে আদিম-বনাম-কৃত্রিম এই দুই সম্পূরক চারিত্রিক রূপের অদল-বদলই একটি পুরুষের তাবৎ-জীবনের যৌনাচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। পুরুষ তার আদিম এবং কৃত্রিম খোলসকে সভ্যতার মুখোশ দিয়ে ঢেকে রেখে সমাজের চোখে ‘ভালো-মানুষ’ সাজে। আসলে প্রায় প্রত্যেকটি পুরুষের মধ্যে এই মুখোশ-রূপটি ঘাপটি মেরে থাকে। যে যত এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে তত ভালো মানুষ সমাজের চোখে, যাকে বলা যায় ‘কলঙ্কের ভয়ে’ ভালো মানুষ সেজে থাকা। সমাজ এই ‘ভালো-মানুষ’ নামক উপাধি আবিষ্কার করতে না পারলে  পৃথিবী নামক সভ্যতাকে সামনের দিকে এগুতে দিত না পুরুষ এবং পৃথিবী হয়ত নারীর বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ত সভ্যতার সূচনালগ্নেই।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য—শতভাগ নারীই যে সভ্য এমন দাবি করলে সত্যকে অস্বীকার করা হবে, কারণ বহু দেশে নারী ধর্ষকের উপস্থিতি লক্ষণীয়, নারী কর্তৃক চুরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি তো আছেই।

ফ্রয়েডিয়ান তত্ত্ব মতে, পুরুষ তার আশে-পাশে কোনও নারীর উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই তার সমস্ত নগ্ন শরীর সে কল্পনা করে ফেলে মুহূর্তেই, নারীও পুরুষকে দেখলে এ রকম চিন্তা করে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করে যৌনচিন্তার ধরন, চিন্তা-প্রসূত তাড়না এবং তাড়না-উদ্ভূত কর্ম-প্রক্রিয়া নারী-পুরুষের মধ্যে ভিন্নভাবে বিরাজমান এবং ক্রিয়াশীল। আর এই ভিন্নতা জনিত কারণেই প্রায় সব পুরুষ একজন সম্ভাব্য ধর্ষক, নারী নয়। কিভাবে আরও বলছি।

নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন-তাড়না থাকবে এটাই স্বাভাবিক (সম-লিঙ্গের মধ্যে যৌন-তাড়নার ধরন এ লেখার বিষয়-বস্তু নয়)। কিন্তু এই তাড়না মাত্রা ছাড়ালেই সেখানে ধরা পড়ে কদর্য। তাই পুরুষ যখন নারীর কাছে পরিচিত বা স্বল্প পরিচিত তখন অনেক ক্ষেত্রেই সে ছলে-বলে, কলে-কৌশলে, লোভ-দেখিয়ে নারীকে ‘যৌন-কর্মে-সম্মতি’ আদায়ে বাধ্য করে, অথবা জোর-পূর্বক ‘যৌন-কর্মে-সম্মতি’ আদায় করে। মূল কথা জোর করে সম্মতি আদায় করে যৌন-কর্ম এক ধরনের ধর্ষণ (স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জোর-পূর্বক যৌন কর্ম হলে সেটা পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হলেও বাংলাদেশের আইন এটাকে ধর্ষণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না)।

সমাজে পুরুষের বড় একটি অংশ এই শ্রেণিভুক্ত। একটি শ্রেণি দৈহিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ নানা ধরনের অক্ষমতার কারণে এ কর্ম থেকে বিরত থাকে। আর একটি শ্রেণি সরাসরি ধর্ষণ/খুন-ধর্ষণের জন্য দায়ী। অন্য একটি গোষ্ঠী সদা ওঁৎ পেতে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। বাকি একটি অংশ যারা নিজেদের রিপুকে দমন করতে পারে, তারা এসব থেকে বিরত থাকে। মনে রাখতে হবে ষড়রিপু তথা কাম-রিপুকে দমনে রাখার নামই সভ্যতা, ভদ্রতা, তদুপরি ভালো মানুষের সমস্ত গুণের আধার। পৃথিবীর প্রায় সব সমাজের বেলায় এ সত্য প্রযোজ্য। সমাজের বৃহৎ পরিসরে কিভাবে বা কী কারণে যৌনচিন্তা তথা ধর্ষণচিন্তা পুরুষের মাথায় ঘুরপাক খায়, তা ব্যাখ্যা করতে নারীর ‘সামাজিক সৌন্দর্য্যকে’ একটি কারণ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

নারীর ওপর এর প্রভাব

উল্লিখিত পুরুষের ‘কৃত্রিম-সভ্য’ রূপ একটি নারীই ভালো জানে,  বিশেষ করে একটু সুন্দরী নারী। কারণ সে আন্দাজ করতে পারে তার পরিধির মধ্যে (পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কর্মক্ষেত্রসহ প্রত্যেকটি জায়গায়) যত চেনা, অল্প চেনা, অচেনা পুরুষ আছে তারা কে কেমন? তারা আসলে কে কী চায়? একটু সুযোগ পেলেই কে আগে, কে একটু পরে তাকে, তার শরীরকে পেতে চাইবে, সে ভালো করেই জানে। একটি মেয়ে সমাজে বেড়ে ওঠে এই জানা-অজানা ভয় নিয়েই। তাকে নিজের সঙ্গে সীমাহীন ‘আপস-যুদ্ধ’ করে পথ চলতে হয়। যেকোনও সময় যেকোনও বিপদের ভয়ে তার প্রতি নানা ধরনের যৌন-সহিংসতাকে সে চোখের জলে লুকিয়ে রেখেই পথ চলে। নিরূপায় হয়ে নারী এসব লুকিয়ে রেখে সে পুরুষকে পরোক্ষভাবে আরও উৎসাহিত করে, ফলে এক নারী থেকে অন্য নারীর দিকে পুরুষের যৌন-রথ ধাবিত হয় নিঃসংকোচে নিরন্তর। এমনকি কাছের কারও দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা সে বেমালুম চেপে যায় সমাজের ভয়ে, লোক-লজ্জার ভয়ে। প্রমাণ হিসেবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান দেওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ, বাংলাদেশে প্রায় ৮৭ ভাগ নারী পরিবারেই যৌন-নিপীড়নের শিকার (বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ঢাকা ট্রিবিউন, ৩১ মার্চ, ২০১৬)।

এছাড়া পরিবারে যৌন-নিপীড়নের শিকার যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪%, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৬%, ইথিওপিয়ায় ৫৯%।

অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেশনাল ভিকটিম সেন্টার দেখাচ্ছে ৮০% ধর্ষণের ঘটনা পরিচিত লোকদের দ্বারাই ঘটে এবং বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ৮০% বলে গবেষণায় উল্লেখ (ডেইলি স্টার, জুন ১৬ ২০১৫)। এছাড়া নওশের আলী ও তার গবেষকদল দেখান যে ৬১% ধর্ষণের ঘটনা পরিচিত লোকদের দ্বারাই ঘটেছে।   

কিন্তু নারী যদি পুরুষের এসব যৌন-সহিংস আচরণের বিরূদ্ধে জোর প্রতিবাদ করতে পারতো পুরুষ ভয়ে হলেও নারীকে সম্মান করতে শিখত এবং পুরুষের ধর্ষক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই হ্রাস পেত। কিন্তু নারী এটা করতে পারছে না কেন? কেন গোপন-রাখা ধর্ষণের হার পৃথিবীব্যাপী এত উচ্চ মাত্রায়, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৯%, ইতালিতে ৯১.৬%, যুক্তরাজ্যে ৮৫%, যুক্তরাষ্ট্রে ৮২%, এবং সুইডেনে ৮০%।

এ বিষয়ে নারীর না বোধক আচরণ কি সমাজের শান্তি বজায় রাখতে? নাকি নিজের সমূহ বিপদের আশঙ্কা কমাতে, নাকি পরিচিতদের সম্মান রক্ষার্থে? নিজে ভিকটিম হয়েও কেন সে পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে না? এসব প্রশ্নের গবেষণালব্ধ কোনও উত্তর জানা নেই। আর তাই নারী সমষ্টিগতভাবে তার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সমাজকে টিকিয়ে রেখেছে শত-সহস্র বছর ধরে। এটাকে বলতে পারি ‘কালেকটিভ স্যাক্রিফাইস ফর দ্য প্যাট্রিয়ার্কি’ অথবা ‘কালেক্টিভ সিম্প্যাথি ফর দ্য ফেলো মেন’। এই ‘কালেকটিভ সিম্প্যাথি’ই পুরুষকে ধর্ষক হওয়ার সরল পথ তৈরি করে দেয়। তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পুরুষের ইন্ধনে অথবা স্বেচ্ছায় কিছু নারী সমাজে পুরুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌন-হয়রানির অভিযোগ আনে, যা সত্যিকারে অনেক নির্দোষ পুরুষের জীবন ধ্বংস করে চলছে। এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এখন পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন সমাজে প্রতিপক্ষ দমনের একটি কুৎসিত হাতিয়ারও বটে।

পুরুষতান্ত্রিক এবং ধনতান্ত্রিক সমাজ নারীকে কিছু স্বাধীনতা দিলেও নারীর পায়ে সে ‘অদৃশ্য-কামনার-শিকল’ পরিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, চেতনে-অবচেতনে-অচেতনে, উষ্ণতায়-উত্তেজনায় সে এই শিকল ধরে টানে। আর এই টানা-টানিতেই নারীর সম্ভ্রমহানি এবং জীবনহানি ঘটছে নিঃশেষে অগনিত। এটাকে বলা যায় ‘ধ্বংসজাত-যৌন-জয়’ যাকে ইংরেজি ভাষায় আমি বলেছি ‘লেথাল-সেক্সুয়াল-ট্রায়াম্প’ অথবা ‘সেক্সুয়াল-ট্রায়াম্প-ওভার-ডেথ’। সিমি, ইয়াসমিন, তনুসহ জানা-অজানা হাজারো নারীর ধর্ষিত এবং ধর্ষিত-হত্যাকৃত শরীর তার প্রমাণ।

পৃথিবীর সে সব দেশেই সম্প্রতি ধর্ষণের হার কমেছে, (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে) যেখানে এ সব অপরাধ দমনে রাষ্ট্র জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। গবেষণা দেখাচ্ছে, নৈতিক বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এ সব অপরাধ দমনে অনেকটাই ব্যর্থ, রাষ্ট্র (অথবা সমাজ)কর্তৃক কঠোর শাস্তিই একমাত্র উপায়।

তনু ধর্ষণ ও হত্যা, সেটা তদন্ত নিয়ে কিছু মহলের অপতৎপরতা, রাষ্ট্র কর্তৃক সুষ্ঠু বিচার ও কঠোর শাস্তি দেওয়া ক্ষেত্রে টালবাহানা সমাজে অবশ্যম্ভাবীভাবে এ ঘৃণ্য অপরাধ আরও বাড়াবে। পুরনো বছরগুলোতে এ সব অপরাধের বিচার না হওয়া যেমন তনু’র এ ঘটনা জন্ম দিয়েছিল, তেমনি প্রতিনিয়ত কত যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে, তা তনু’র পরিবারের মতো অসহায় ভুক্তভোগীরাই জানেন। সমাজ, রাষ্ট্র, গণমাধ্যম, বিবাকবান মানুষ কে কতটুকু তার খোঁজ রাখছেন?

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (শিক্ষা ছুটিতে), পিএইচডি গবেষক, ভার্জিনিয়া টেক, যুক্তরাষ্ট্র

 [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ