X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সার্কে বিপর্যস্ত পাকিস্তান

নাদীম কাদির
০৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৪৪আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৪৮

নাদীম কাদির নিজের ভুলের জন্য সবসময়ই মূল্য দিতে হয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রয়েছে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা—সার্কের সম্মেলন। এটা বলা চলে যে, আঞ্চলিক এ সংস্থাটি এখন দাফনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।
এটি তৈরি হয়েছিল অর্থনীতি ও সামাজিক কল্যাণের মতো নানা ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের জন্য। এখনও দক্ষিণ এশিয়া দুনিয়ার সবচেয়ে অশিক্ষিত ও দরিদ্রতম এক অঞ্চল। সার্ক গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক আঞ্চলিক সম্মেলন ও চুক্তি হয়েছে। যদিও এতে করে এই অঞ্চলের কোনও বাস্তব উন্নতি হয়নি। সার্ক স্পষ্টভাবে একটি ব্যর্থতা কিন্তু রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের বার্ষিক ছুটি কাটানোর জন্য এটাকে জীবন্ত রাখা হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা হচ্ছে পাকিস্তানের ভুল কাজের পরিণাম এবং তাকে এর মূল্য দিতে হয়েছে। এই মূল্য হচ্ছে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। এর ব্যতিক্রম শুধু নেপাল ও মালদ্বীপ। এখনও পর্যন্ত তারা পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে সম্মত রয়েছে। এর মধ্যে আবার নেপালে সার্কের সদর দফতর অবস্থিত।
বাংলাদেশ ও ভারত কিন্তু জোরালোভাবে পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করার পরও ইসলামাবাদ চেষ্টা করেছে বাংলাদেশি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের হিরো বানাতে। পাকিস্তান ১৯৭১ সালে তার সহযোগী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছে। এমনকি বিষয়টি তাদের পার্লামেন্টেও তুলেছে।
দৃশ্যত, পাকিস্তান এটা উপলব্ধি করতে পারছে যে, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ ১৯৭১ সালে তাদের পরাজিত করেছে। এখন বিভিন্ন দেশের কমিটিতে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গর্বের সঙ্গে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
পুলিশের তদন্তে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলামি মৌলবাদীদের মতো সরকারবিরোধীদের অর্থায়নেও পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তারা ভারতের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে বাংলাদেশকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। ওই প্রভাবের বহু নিদর্শন রয়েছে।
ভারত একের পর এক পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। মুম্বাইয়ের হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল। সর্বশেষ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। যে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান যদি এটা মনে করে যে, তারা এটা চালিয়ে যেতে পারবে, তাহলে সেটা হবে অপরিণামদর্শিতার চূড়ান্ত প্রকাশ।  এরইমধ্যে পাকিস্তানকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বলা হচ্ছে। আমি মনে করি, প্রতিবেশীদের ইসলামাবাদকে যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে ইসলামাবাদের জন্যই প্রতিবেশীদের অধিক প্রয়োজন।
সার্কে আসার মাধ্যমে পাকিস্তান যতটা না সমস্যার সমাধান করেছে, তার চেয়ে বেশি সমস্যা তারা তৈরি করেছে। আঞ্চলিক সংস্থাটি দক্ষিণ এশিয়ার মূল ইস্যুগুলো তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সংঘাতের ফলে সদস্য দেশগুলো পরস্পরের প্রতি আস্থা তৈরি কিংবা সন্তোষজনক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে সক্ষম হয়নি। সাফটা ছাড়া সার্ক প্রায় কিছুই করতে পারেনি। ১৯৮৫ সালে সার্ক প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত এটাই করতে পেরেছে দক্ষিণ এশিয়ার এ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। এ অঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচনে এটা কিছুই করতে পারেনি। সার্কের মতো আঞ্চলিক সংস্থার অকার্যকারিতার ফলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান হয়নি।
সার্কের আরেকটি লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করা। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিশ্বের অন্য অংশের তুলনায় সার্কভুক্ত দেশগুলো এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়নি। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, এ অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত কোনও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার মতো মৌলিক ইস্যুগুলোতে সহযোগিতামূলক উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারেও সার্ক অগ্রসর হতে পারেনি।
এটা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শান্তি ও শিষ্টাচারেরও উন্নয়ন করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আঞ্চলিক সংস্থাটি তার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আস্থা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছে। সার্কের প্রধান সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি রয়েছে।
একজন বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, সদস্য দেশগুলো নিজ দেশের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে। যৌথভাবে সমস্যা মোকাবিলার চেয়ে সদস্য দেশগুলো বরং পরস্পরের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন মৌলিক ইস্যু ও সংঘাতজনিত অচলাবস্থা সমাধানে সার্ক ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান যখন নাকাল অবস্থার মধ্যে পড়ে ব্যর্থ হতে চলেছে, তখন সার্কও অঘোষিতভাবে অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ