X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যদি কণ্ঠ রুদ্ধ হয়

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১২ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৪৪আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৩৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০ তম সম্মেলন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব। পদপ্রার্থীদের নানা ধরনের তৎপরতা লক্ষণীয়।

আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্ধারণ ছাড়াও সম্মেলনে দলটি জনগণের জন্য কী বার্তা দেবে সে নিয়েও চলছে আলোচনা। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে চলছে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব মেলানোর অংক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখা, জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে কী ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আসছে তা নিয়ে চলছে হিসেব নিকেস।

আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলটির দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন আগে বিএনপি’র বিরাট আকারের কমিটিতে নানাজনকে নিয়োগ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এখন দেখার বিষয় শেখ হাসিনা কী করেন।

কাউন্সিল বা সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় না। অন্তত বড় দুই দলে। কমিটির বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং সেটি এককভাবে করেন দুটি দলের প্রধানই। ফলে এসব কাউন্সিল আর সম্মেলন দলীয় কর্মীদের জন্য কিছু উৎসবের খোড়াক এনে দিলেও নেতৃত্ব পরিবর্তন, বা দলীয় শৃঙ্খলা বা দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় এর উপযোগিতা কতটা তৈরি করে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবুও তৃণমূলের কণ্ঠ কেন্দ্রে এসে কিছুটা উচ্চারিত হওয়ার সুযোগ এটিই।

গণতন্ত্র সবসময়ই সরবে উচ্চারিত হয় রাজনীতির মাঠে। কী ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে, সব দলই বলে, চিৎকারও করে। তবে রাজনৈতিক নেতারা যেখানেই থাকুন, ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে, সব ক্ষেত্রেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, তারা যা করেন সেটাই গণতন্ত্র।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল প্রধানের ব্যাপক ক্ষমতা। শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছেন তিনি পদ ছাড়তে চান, রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চান। তাঁর এমন চাওয়া হলেও বাস্তবতা হলো তাঁকেই থাকতে হবে দলের সভাপতির পদে এবং তাঁর ওপরই দায়িত্ব বর্তাবে নতুন কমিটি করার। এটাই হয়ে আসছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এবং একথাও খুব সত্য যে, শেখ হাসিনার বিকল্প এখনও নেই আওয়ামী লীগে এবং দেশের জন্যও।

বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যতদিন পারবেন খালেদা জিয়াই থাকবেন চেয়ারপারসন এবং তারপর দল চালাবেন তার ছেলে তারেক রহমান। একই অবস্থা এরশাদের জাতিয় পার্টিতেও। চেয়ারম্যান যা চাইবেন তাই হবে, কোনও ভিন্নমতের জায়গা নেই দলে।

সভাপতির পদ ছাড়া যদি অন্য পদগুলোতে নির্বাচনের নিয়ম করে দেওয়া হয় তাতেও কিছু যোগ্য মানুষ দলে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেতে পারেন। এতে করে নেতৃত্বে উঠে আসে অনেক যোগ্য মানুষ, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সংসদে ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে। সংসদ সদস্যদের মান ধীরে ধীরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা নিয়ে আফসোস আছে। শুধু কোরামের মান নয়, বিতর্কের মান নয়, আমরা এমন সংসদ সদস্য পাচ্ছি যাদের অনেকের আচরণ রীতিমত ভয়ংকর। এমনকি নিজ দলের লোকজন তাদের অত্যাচার অনেক স্থানে একঘরে হয়ে আছেন। মেঠো রাজনীতির সঙ্গে সংসদীয় রাজনীতির দূরত্ব বহু যোজন। কিছু কিছু সাংসদের আচরণ ইতোমধ্যেই এমন ধারণা দিয়েছে তারা চাচ্ছেন সংসদকে মাঠে নামিয়ে আনতে।

এই কাউন্সিল বা সম্মেলনও নিয়মিত হয় না। এদেশে রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল হয় না, কাউন্সিল হলে ভোট হয় না। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম এই কাউন্সিল বা সম্মেলন। বাংলাদেশ যে প্রায়শই গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুত হয়, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ক্ষমতার পালাবদলের পরও যে গণতন্ত্র দৃঢ় ভিত পায় না, তার মূলে রয়েছে প্রধান দলগুলোতে গণতন্ত্র চর্চার অভাব।

রাজনীতি রাজনীতিকদের হাত থেকে চলে গেছে অনেকদিন হয়। ব্যবসায়ী আর আমলারা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ, তৃণমূল থেকে উঠে আসা মানুষগুলো সংখ্যায় শুধু কমছেন না, অবহেলায়ও বিবর্ণ। ফলে দেখা যাচ্ছে, জীবনভর আরাম আয়েশে থাকা আমলারা এখন আরও বেশি আরামের জন্য রাজনীতি করেন। কর্মীর সাথে সংশ্রব নেই, দলের সঙ্গে সখ্যতা নেই, এলাকার সঙ্গে পরিচিতি নেই, তাতে কী? দলের দুঃসময়ে এরা থাকেন না, এদের পাওয়া যায় না, কিন্তু সুসময়ের মাখন এদের ঘরেই পৌঁছে যায়।

কাউন্সিল হলেই যে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে তা বলা যায় না। দলের মধ্যে বিভিন্ন মতের লোক থাকতে পারে। গণতন্ত্রের স্বার্থে সবার মতামত দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা শুনে থাকেন কী? কথা বললে বিরোধ হবে, কিন্তু এই বিরোধতো বিভেদ নয়। যারা দলের ভালো চান তারা কখনোই দলের বিভেদ চাইবেন না। দলের অগ্রগতি ও সুনাম রক্ষায় নেতাদের মতো কর্মীরাও সচেষ্টা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে ক্রমেই শক্তিশালী হয়েছে কেন্দ্র। আগেই বলেছি ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলারা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন রাজনীতিতে। ভোটারবিহীন অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যেকোনও নির্বাচনেই মনোনয়নের ক্ষেত্রে এরাই গুরুত্ব পাচ্ছেন। অর্থ আর ক্ষমতা এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘদিন দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেও যখন তৃণমূলের নেতারা বঞ্চিত হন তখন দলের গণতান্ত্রিক চর্চা কমে যেতে থাকে।

ক্ষমতায় থাকলে সরকারে বিলীন হয়ে যায় দল। আর বিরোধী দলে থাকলে সরকারি নিপীড়নে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। দল শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক করতে না পারলে এই প্রথা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যায়। কোনও রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রই পুরো গণতান্ত্রিক চরিত্র পায়নি। রাজনৈতিক দলগুলো তা অনুসরণেরও প্রয়োজন মনে করে না। নিম্নস্বরে হলেও গণতন্ত্রের আওয়াজটা শুরু করা দরকার। দলের ভেতরে যদি বহুমতে চর্চা হয়, তখনই গণতন্ত্রের পরিসরটি বিস্তৃত হয়। যাদের সংখ্যার জোর নেই, গলার জোর নেই, অর্থের জোর নেই তাদের ভেতরেও অনেক ভালো নেতৃত্ব থাকতে পারে। রাজনীতির খেলায় যদি মাঠের কর্মী অবহেলিত হয়, যদি কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তবে দলের শুধু নয়, দেশের জন্যও দুর্ভাগ্য।

লেখক: সংবাদকর্মী

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ