X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কী দিল আওয়ামী লীগের সম্মেলন?

আনিস আলমগীর
২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:০৬আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:৪৭

আনিস আলমগীর ২২ ও ২৩ অক্টোবর ২০১৬ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ৪০/৫০ হাজার কর্মীর উপস্থিতিতে সম্মেলন জমজমাট হয়েছে। বহু বিদেশি অতিথিও নিমন্ত্রিত হয়ে সম্মেলনে যোগদান করেছেন। অতিথিরা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরই নেতা। তারাও বক্তব্য রেখেছেন। তাদের বক্তব্য অবশ্য শুভেচ্ছা বক্তব্য।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দেশেরও প্রধানমন্ত্রী। তার সুন্দর ও সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশের অগ্রগতি হয়েছে বহু ক্ষেত্রে এবং দেশের অগ্রগতি দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ায় তিনি শুধু দেশে নন বিদেশেও বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। অতিথি বক্তারাও তাই তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাকে বিশ্ব জননেত্রী বলেছেন একজন।
বড় দলের মাঝে বিএনপি আর বড় ব্যক্তির মাঝে ড. কামাল হোসেন সম্মেলনে আসেননি। এছাড়া আমন্ত্রিত অন্যদলগুলোর প্রায় সবাই সম্মেলনে যোগদান করেছেন। আমাদের দেশের বড় দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পরস্পরের মাঝে আলাপ-সংলাপ এর কোনও সংস্কৃতিই লালন করেনি। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আবাসস্থলে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য যে তারা দরজায় তালা দিয়ে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢুকতেও পারেননি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিফল হয়ে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনের দুর্লভ মুহূর্তে যখন পরস্পরের সম্মিলন হলো না তখন জাতীয় জীবনের কোনও জরুরি মুহূর্তেও যে তারা পরস্পর আলোচনায় বসতে পারবেন তা কেউ আর বিশ্বাস করে না।
অথচ জাতির অভিন্ন কল্যাণের জন্য যে ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করা প্রয়োজন তাতে সব দলেরই অংশগ্রহণ জরুরি।
ক্ষমতায় না থাকলে জাতীয় কল্যাণে অংশগ্রহণ কখনও হারাম হয়ে যায় না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এ বোধটা দুর্বল। কোনও গাছের লাল হয়ে যাওয়া প্রাচীন পাতার মতোই রাজনীতির মাঝে কিছু বিজ্ঞ লোক রাজনীতির শোভা বাড়াতেন। এখন তারাও বিরল হয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম দিন অনুষ্ঠানাদি পালনের পর সভার সভানেত্রী এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক তার লিখিত বক্তৃতা না পড়ে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনিও কিছু সময়ব্যাপী এক হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য পেশ করেছেন। তার বক্তব্য শুনে মনে হলো যেন শেখ হাসিনাও কেঁদেছেন। তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বিদায় নিলেন। তাতে অনেকে ব্যথিত হয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। এমনকি বিরোধী দল বিএনপিও তার প্রশংসা করতো।
রাজনীতি করতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফ কখনও শালীনতাবোধকে উপেক্ষা করেননি। কাউকে খোঁচা মেরে কথা বলেননি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম বা নবাগত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে ভাষায় কথা বলেন তিনি কখনও সে ভাষায় কথা বলতেন না। রাজনীতি যে সুন্দরতম আর্ট তিনি তা মনে রেখে কথা বলতেন। তার পূর্ববর্তী সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল, সাজেদা চৌধুরী বা মরহুম জিল্লুর রহমান যে খুবই সফল, তিনি যে ব্যর্থ- তাও নয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতিকেন্দ্রিক দল। তার রাজনীতি আবর্তিত হয় সভাপতিকে কেন্দ্র করে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও তাই ছিল। গত ৩৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার সময়েও একই অবস্থা। জেলায় জেলায় সংগঠনও গড়ে ওঠে সভাপতির জোরালো মনিটরিং-এর ছায়ায় স্থানীয় নেতাদের দ্বারা।
আওয়ামী লীগ প্রাচীন দল। তৃণমূলে তার বহু কর্মী সমর্থক রয়েছে। এখন দলটি ক্ষমতায়। আগামী নির্বাচনের আগে তার একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ পূর্ণ হবে। সুতরাং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতারও সম্মুখীন হতে হবে। নির্বাচন এমন একটা পদ্ধতি তাতে সরকার অর্থনীতির হাল ফেরালেও ভোটের সময় ভোটারেরা তা বিবেচনায় নেয় না। জাতির জন্য কোনও গৌরব বয়ে আনলেও তাতে জাতির মন জোগানো যায় না। এ বিষয়ে আমি দুটা উদাহরণ দেব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চার্চিল। বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জিতেছিলেন। তিনি টোরি দলের লোক। যুদ্ধের পরে ১৯৪৫ সালে যখন ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন হয় তখন টোরি দল (কনজারভেটিব পার্টি) লেবার পার্টির কাছে পরাজিত হয়। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্র বাবু নাইডুর দল (১৯৯৫-২০০৪) দুইবার একটানা ক্ষমতায় ছিল। তিনি অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে ছিলেন। হায়দারাবাদকে সাইবারাবাদ বলা হতো। বিশ্বব্যাপী চন্দ্রবাবুর উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে এসে তার রাজ্যও সফর করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী বিধানসভার নির্বাচনে চন্দ্র বাবুর দল প্রায় সাফ হয়ে গিয়েছিল।
যারা গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করেন এবং যাদেরকে নির্বাচনের ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের উচিৎ এ সব বিষয়ে সতর্ক হয়ে কারণ অনুসন্ধান করা এবং বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। চন্দ্রবাবু আইটিতে প্রচুর উন্নতি করলেন রাজ্যে টাকা পয়সা আনলেন অথচ ২৫৯ জন কৃষক সেচের পানির জন্য, কৃষি ঋণের জন্য তার কৃষি ব্যবস্থায় টাকার অভাবে আত্মহত্যা করলো। অন্ধ্র প্রদেশ কৃষি নির্ভর। ৮০ শতাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শুধু মুখখানা তরতাজা হলেতো স্বাস্থ্যবান বলা যাবে না, শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ মুখের সঙ্গে সমন্বিত হলেই তবে স্বাস্থ্যবান বলা যাবে।
আওয়ামী লীগ এবং তার সভানেত্রী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন থেকে কী ম্যাসেজ প্রদান করলেন জাতিকে। যা বলেছেন তাতো প্রাত্যহিক কথাবার্তা। আমি আশা করেছিলাম তিনি জাতিকে একটা সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ম্যাসেজ প্রদান করবেন। আগামী  নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে আর কোনও কাউন্সিল হবে না। তিনি যা কিছু কথাবার্তা বললেন সবই তার কর্মীদের উদ্দেশ্যে। যথা সময়ে নির্বাচন হবে, নির্বাচনে জিততে হবে, ঘরে ঘরে গিয়ে উন্নয়নের কথা বলতে হবে। এসবতো দলীয় কর্মসূচি। এমন একটা বর্ণাঢ্য সম্মেলন থেকে জাতিকে সুস্পষ্ট একটা ম্যাসেজ প্রদান করা জরুরি ছিল। তা হলে সম্মেলনটা সর্বাঙ্গীন হতো।
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে তা কেউ অস্বীকার করবে না। জিডিপি বাড়ছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোক উপরে উঠছে- সবই সত্য কিন্তু আয়বৃদ্ধির সুফল কতদূর ছড়িয়ে পড়ল, দারিদ্র্য দূরীকরণের সাফল্য কতটা বিস্তৃত হলো- সবই সতর্ক পর্যবেক্ষণের ব্যাপার। আমরা উন্নয়ন মাপি, উন্নয়ন নিয়ে নাচানাচি করি কিন্তু বৈষম্যের প্রতি মনোযোগী হই না। উন্নয়ন সর্বাত্মক না হলে অনেক সময় উন্নয়ন জাতীয় জীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। নির্বাচন দুই বছর পরে হবে। আমি একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করব উন্নয়ন যেন জাতীয় জীবনে কোনও বিড়ম্বনা সৃষ্টি না করে।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে তার প্রথম দিনের বক্তৃতায় সাদাসিদে একটা প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি বলেছেন সমাজে যাদের এখনও ঘর নেই, খাওয়া পরার অনটনে ভুগছেন সে সব লোকের লিস্ট তৈরি করতে পারলে- তিনি তা বিমোচনের উদ্যোগ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী এতো বড় একটা বিপ্লবী কর্মসূচিকে এত সাদাসিদেভাবে পেশ করলেন কেন জানি না! আমি চিন্তা করে দেখেছি এ কর্মসূচি হবে একটা বিপ্লবী কর্মসূচি। এটা দলীয় ভিত্তিতে করলে এলোমেলো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠু পরিকল্পনা ভিত্তিক এ কর্মসূচিটা বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। তাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপকার হবে বেশি। দশ টাকায় চাল দেওয়ার কর্মসূচিটা আরও বিপ্লবী কর্মসূচি। চাল প্রদানের কর্মসূচিকে আরও স্বচ্ছভাবে চালু করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী টানা আটবারের মতো দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন- তাকে স্বাগত জানাই এবং সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প সৃষ্টিরও অনুরোধ করি। টানা ৩৫ বছর এক পদে থাকা নিশ্চয়ই উপভোগ্য নয়। হয়তো সে কারণেই তিনি বলেছেন যে জীবিত থাকতেই নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক
[email protected]

আরও খবর: আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরও ২২ সদস্যের নাম ঘোষণা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ