X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর সুরক্ষা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:০৪আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:১৬

একাত্তর টিভির পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা শহীদ কন্যা শাওন মাহমুদ গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেটি দিয়েই শুরু করছি। ‘পান্থপথে রাস্তায় দাঁড়ানো চারজন রিক্সাচালক অপর রাস্তায় একজন বিদেশি রিক্সাযাত্রীর দিকে যে পরিমাণ কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গী এবং অশ্লীল মন্তব্যের উৎসবে মেতে উঠেছিল তা আজ নিজের চোখে না দেখলে এবং কানে না শুনলে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতো না। কী ভয়াবহ সেসব কথা। কী বিশ্রী তাদের হাত মুখ নাড়ানো। ছি! কয়েক সেকেন্ডের সেই দৃশ্য ভুলবার নয়’।
শাওন বলছে, ‘আমরা আসলে শেষমেষ মনোবিকারগ্রস্ত জাতিতে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছি’।
গত কয়েকদিনে বেশ ক’টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনাও আছে। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে নানা প্রান্ত থেকে ধর্ষণ আর নারী নিগ্রহের খবর আসছে, এবং এখন অতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্ষণ, নির্যাতন বা হয়রানি ধাঁচটা যে রকমই হোক না কেন, নারীদের প্রতি এই আচরণ সরাসরি মানবিক মর্যাদার লঙ্ঘন, দুঃসহ লঙ্ঘন। ব্যক্তিগত আঘাত বা যন্ত্রণাকে কখনোতো মাপা যায় না। চিকিৎসার খরচ, মামলার খরচ, এসব অংক অর্থমূল্যে মাপা সম্ভব। কিন্তু কখনোই নারীদের প্রতি সহিংসতার দামতো শুধু এমন অংকের হিসেবে বের করা যাবে না। এসব হিংসার জেরে সমাজের প্রত্যেককেই আসলে কত দাম দিতে হয় তা কোনও গণিতবিদই বের করতে পারবেন না।
নারী নিগ্রহের প্রবণতা  হঠাৎ করে বেড়েছে এমনটা বলা যাবে না, বরং ভাব দেখে মনে হচ্ছে এ যেন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু নারী ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনায় আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপরতা দেখিয়ে অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে। আবার তনু হত্যার মতো ঘটনায় তাদের নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে হতাশ করেছে।

যখনই কোনও ঘটনা আলোচনায় আসে তখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় নারী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তির দাবিও ওঠে নানা স্তর থেকে। কিন্তু কোনটা আসলে বেশি জরুরি? নির্যাতনের শাস্তি নাকি নারীর সুরক্ষা? বিপন্ন নারীরা বা তার পরিবার খুব কম ক্ষেত্রেই মামলা করতে চান। এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ মেয়ে ও তাদের পরিবার ঘটনা চেপে যান। ফলে গণমাধ্যমে যেসব খবর আসে সেগুলো অনেক ঘটনার কয়েকটি মাত্র।

নারী সংগঠন বা সুহৃদয় বহু মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, প্রকৃত নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা করাও কঠিন। নিম্ন আদালতের উকিলদের একাংশ ও পুলিশ এর আচরণ কখনোই এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের পক্ষে থাকে না। তারা নানা আচরণে বারবার বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মেয়েদের একটু-আধটু দোষ না থাকলে কী করে এসব ঘটনা ঘটে?

প্রেমে সাড়া না দিলেই এসিড ছুড়ে মারা, চাপাতি দিয়ে কোপানো, মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা অনেকদিন ধরেই দেখছি আমরা। যেন, প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে মানেই, পুরুষের ডাকে সাড়া দিতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই। যে এলাকায় ঘটনা ঘটে, কখনও কি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, স্থানীয় সংসদ সদস্য কী ভূমিকা রাখছেন এসব ব্যাপারে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না, বা তাদের কোনও ভূমিকা চোখে পড়ে না। আসলে আমাদের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এমন একটা সিস্টেমের ভেতর দিয়ে অগ্রসরমান যেখানে অপরাধ করেও বড় পদে আসীন হওয়া যায়। রমণীর প্রতি অশালীন উক্তি করে পদস্থ কর্তা হওয়া যায়। আক্রান্ত মহিলাকে পোশাকবিধির শিক্ষা দিয়ে হিংসাকে সমর্থন জানান যে মানুষ তাকে সামাজিক কত অনুষ্ঠানেই না প্রধান অতিথি হিসেবে দেখা যায়। নারীর প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দিয়েও নেতা বৃহত্তর, উন্নততর নেতায় পরিণত হওয়া যায়। আমাদের কাজ কেবল মোমবাতি জ্বালিয়ে নিম্নস্বরে প্রতিবাদ করা। নেতাদের, আমলাদের তথা রাষ্ট্রের পায়ের কাছে কেবল জমা হয় আমাদের নিরস্ত্র অশ্রুবারি।

মূল অভিযুক্ত যেমন আইনের চোখে দণ্ডের যোগ্য, নারীর প্রতি সহিংসতাকে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে নিজের দায়বদ্ধতা পালন না করে অথবা কর্তব্যের সীমা লঙ্ঘন করে, তাদেরও প্রাপ্য অপরাধীর শাস্তি ও জনমানস থেকে নির্বাসন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। কারণ আইন আর ক্ষমতা তাদের হাতেই।

সমস্যাটা বড় ও জটিল, তাই সরকার নানা সময় নানা আইন করেছে। কিন্তু শুধু আইন কি কিছু করতে পারে? নজরদারি সংস্থা, নির্দেশিকা, অনেক কিছু করা দরকার। ভাবতে হবে, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে পারে কী না। কিংবা নারী নিগ্রহের ক্ষেত্রে থানায় কখন কোন আইনে অভিযোগ দায়ের করা যাবে, কোন ক্ষেত্রে কিভাবে এগোনো যাবে। সুস্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে নারীর হেনস্তা রুখতে যেমন কমিটি গড়তে হয়, তেমনই গার্হস্থ্য হিংসা রোধে কেন সারা দেশে কয়েক নজরদারি কমিটি থাকবে না? পাড়ায় পাড়ায় নাগরিক কমিটির মতো নারী সুরক্ষা কমিটি তৈরি হোক। তবে দেখতে হবে যাতে এ সব কমিটি পুলিশগিরির ফাঁদে না পড়ে, রাজনীতির বৃত্তে আটকে না যায়। কেবল আইন ও বিচার নয়, সমাজের নিজের নজরদারি দিয়েও লড়াইটা চালানো দরকার। শাওনের কথায় মনোবিকারগ্রস্ত জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই জেগে ওঠা দরকার।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: ঝিনাইদহে স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাত: প্রধান আসামি লিটু গ্রেফতার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
অ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগঅ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ