X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেমিট্যান্সের জোগানদাতা মানুষগুলো অস্পৃশ্য নন

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৩৪আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৩৯

     তুষার আবদুল্লাহ মার্কিন মুল্লুকে উড়াল দিতে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি সব টার্মিনালের সামনেই দীর্ঘ লাইন। যাত্রীদের কেউ কেউ বিশেষ ইউনিফর্ম পড়া। নারীরাও আছেন। তাদের কারও গন্তব্য মালয়েশিয়া, কারও দুবাই। তারা এ দুই স্থানে যাচ্ছেন কাজের জন্য। বেশিরভাগই ছুটিতে এসেছিলেন, কিছু অংশ যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো। তারা এ দুই জায়গাতেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মূল টার্মিনালে তারা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।  একজনের পর একজন পাসপোর্ট-টিকিট দেখিয়ে ভেতরে যাচ্ছিলেন। ওনাদের বাইরেও আরও যাত্রী ছিলেন, যারা হয়তো ভ্রমণ, চিকিৎসা বা ব্যবসায়ের কাজে যাচ্ছেন, কেউ কেউ ছিলেন মার্কিন দেশে স্থায়ী বসবাসকারী। এই শ্রেণির যাত্রীরা এসে টার্মিনাল গেইটে গোল বাঁধালো। তারা সিরিয়াল ধরতে রাজি নন। সিরিয়াল যদিও বা ধরতে রাজি কিন্তু এই শ্রমিকদের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়াবেন না। তাদের পৃথক লাইন করে দিতে নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে আবদার এবং হুমকি দিতে লাগলেন। কেউ কেউ জোরপূর্বক আগে ঢুকেও পড়লেন। দাউদকান্দির  তরুণ রাজু বললেন- দেখলেন ভাই ভিআইপিরা আমগো লগে দাঁড়াইতেও চায় না। আমরা ময়লা।
আমি রাজুর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে তাকে অনুসরণ করি। সেই সঙ্গে ভাবতেও থাকি এই রাজু এবং তার মতো যারা মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়া, সিংগাপুর যাচ্ছেন, তারা নিজের আয়ের এক চিমটি রেখে বাকি পুরো টাকাই পাঠিয়ে দেন দেশে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে, আমরা বড়াই করি, স্বপ্ন দেখি মধ্যম আয়ের দেশের মাইল ফলকে পৌঁছার। কিন্তু যারা তাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়াতে চাচ্ছেন না, তারা দেশে আয় করা টাকা রেখে আসছেন দুবাই মালয়েশিয়া বা ইউরোপ- আমেরিকায়। যারা সেখানে আয় করেন, তারা সেখানেই বিনিয়োগ করেন। এক চিমটি রেমিট্যান্স হয়তো দেশে পাঠান কালে-ভাদ্রে। কিন্তু বিমান বন্দরে অহংকার বড়াই তাদেরই।

টার্মিনালের ভেতরে গিয়েও দেখি একই হাল। এই শ্রমিক শ্রেণিটি যেন অস্পৃশ্য  মানুষ। নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে শুরু করে বোর্ডিং পাস নেওয়া,  ইমিগ্রেশন সর্বত্রই তাদের অস্পৃশ্য ভাবা হচ্ছে। তারা হয়তো শিক্ষায় একটু পিছিয়ে, বা প্রথমবার বিমান যাতায়াত করতে গিয়ে হয়তো নার্ভাস। এমন নার্ভাসতো নিয়মিত যাতায়াতকারীদের অনেকেই থাকেন।

এই নার্ভাস মানুষগুলো, সরল কিন্তু একটু প্রথাগত শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোকে দিক নির্দেশনা দিতে, ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করে দিতে সাহায্যকারী  দল রাখা কি খুবই অসম্ভব?

রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস এই মানুষগুলো দেশে ফেরার সময় বা ছুটিতে বাড়ি এসেও তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কাস্টমসের তল্লাশি, ইমিগ্রেশন এবং টার্মিনালের বাইরেও তাদের স্বস্তি নেই। এই মানুষগুলোর জন্য বিশেষ পরিবহন সুবিধা, কাস্টমস সুবিধা দেওয়ার সামর্থ্য রাষ্ট্রের আছে বলেই বিশ্বাস করি। সম্পদ যারা পাচার করেন, দুই ভুবনে যাদের দুই পা, টাকা বিদেশের ব্যাঙ্কে রাখাটাই যাদের ব্রত তাদের সাধারণের করের টাকায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেওয়াটা রাষ্ট্রের জন্যও অনৈতিক। বরং এই সরল ও সাধারণ শ্রমিক মানুষদের বিড়ম্বনামুক্ত কাজের জন্য বিদেশ যাওয়া এবং ফিরে আসা নিশ্চিত করার বিনিময়ে, রাষ্ট্র কিছুটা দায় শোধের সুযোগ পাবে। জানি না রাষ্ট্রের সেই সদিচ্ছা কবে হবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ