X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার সোনার বাংলা এগিয়ে যাবেই

আনিস আলমগীর
০১ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:১২আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:২৫

আনিস আলমগীর তাকে বালকই বলতে হবে। একজন বিস্ময়কর বালক। সে বালক মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়টা দুই দিন বাকি থাকতেই চলে এসেছে। ১০৮ রানের বড় ব্যবধান সেটিতে পরিয়ে দিয়েছে গৌরবের সোনালি মুকুট। নিজের জন্যতো কত রেকর্ড করলো সে- সেসব অনেকে হয়তো জেনে গেছেন। তার বীরত্ব আর টাইগারদের হাত ধরে আসাকে বাই চান্স নয়, সত্যিকারের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছে ইংল্যান্ডের পত্রিকা গার্ডিয়ান। আমি খুব বিস্মিত না হলেও অবাক হই যে এই বিজয়ীদের অভিনন্দন জানানো হয় পরদিন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। এটিই আমার সোনার বাংলা। সামান্য এক বিজয়কেও আমরা দেখি কত আবেগে। এটিই আজকের বাংলাদেশের তিল তিল করে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের গল্প।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সহজ সরল মানুষ। তার কথার মাঝে না ছিল ফাঁকি, না ছিল চালাকি। কখনও তিনি বাংলাকে বাংলা বলতেন না, বলতেন সোনার বাংলা। সত্যের জোরে যা প্রতিষ্ঠিত তা কেউ কখনও মুছে দিতে পারে না। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এর বক্তব্য থেকে তাই প্রতীয়মান হয়। জিম বলেছেন, ‘এত ছোট আয়তনের একটা দেশ, যার অনেকখানি জুড়ে পানি। এত লোক বসবাস করার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং  প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষের কাজ করার যে উদ্যম সেটি আমাকে সবচেয়ে বেশি অবিভূত করেছে’।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের নেতারা জাতির মাঝে সফলভাবে উন্নয়নের একটা স্পৃহা সৃষ্টি করতে পেরেছেন যা দেশটাকে টেনে ওপরের দিকে তুলে নিচ্ছে। সত্যিই আগে বাঙালি ছিল অলস, আড্ডাবাজ, গপু-সুলতান। এখন ধীরে ধীরে সে সব বদ গুণ থেকে জাতি মুক্ত হয়ে নিজেকে এবং নিজের উন্নয়নকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে উন্নয়নের চেষ্টা করলেই তো সমষ্টিগতভাবে জাতীয় উন্নয়ন সফল হয়ে ওঠে এবং তা একবার গতি পেলেই উন্নয়ন সার্বিকভাবে সফল হয়ে যাবে।

যে বিশ্ব ব্যাংক দু’বছর আগে ১২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুর ঋণ নিয়ে এত টালবাহানা করলো, দু’বছরের মাথায় এসে সে বিশ্বব্যাংক তিন শত কোটি ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়ে গেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মর্যদা এনে দিয়েছে। গত ৭/৮ বছরব্যাপী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছয়ের উপরে। এ বছর সাতে গিয়ে পৌঁছেছে।

বিশ্বমন্দার মাঝে প্রবৃদ্ধি টানা ৮/৯ বছর ঊর্ধ্বমুখী রাখা কৃতিত্বের কথা। এখন বাংলাদেশের প্রয়োজন উন্নয়নকে স্থায়ীত্বের পথে এগিয়ে নেওয়া। উন্নয়নকে সমন্বিত করা। এক তরফা উন্নয়নে যেন সমাজের ভারসাম্য বিঘ্নিত না হয়, সে প্রচেষ্টা শুরুতে না করলে শেষে তা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। কোনও শ্রেণির কাছে যেন কোনও শ্রেণি বলী না হয়। উন্নয়ন যেন জাতীয় জীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি না করে।

আমরা সামান্য মাত্র অগ্রসর হয়েছি। অসংখ্য বাধা বিপত্তি জয় করে আরও সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় এখনও আসেনি। এখনও অনেক যুদ্ধ পড়ে আছে। যে কোনও বিশৃঙ্খলা জাতিকে আশাহত করার পথে নিয়ে যেতে পারে। জাতিকে প্রতিটি পদক্ষেপ সুবিবেচনার সঙ্গে দিতে হবে। সাতবার নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে আমার এ কাজটা জাতীয় উন্নয়নে কোনও বাধার সৃষ্টি করবে কিনা। প্রতিটি কাজ যখন কোনও জাতি উত্তম বিবেচনায় করতে শিখে তখন সে জাতি আর নিস্ফলা থাকে না। চূড়ান্ত সমৃদ্ধি তার অনুকূলেই আসে। রাষ্ট্রের থেকে সার্বিক কল্যাণ যদি আশা করি তা হলে আমাকে আইনের প্রতি অনুগত নাগরিক হতে হবে। বিশৃঙ্খলার মাঝে কেউ কিছু করতে পারে না। রাষ্ট্রের পক্ষেও তখন কিছু করা সম্ভব হয় না।

কিছু লোক বের হয়েছে ধর্ম নিয়ে অর্ধমের খেলায়। কোথাকার কে কাবা ঘরের ছবির ওপর ফটোশপে কারও মূর্তি বসিয়ে দিল তাতেই তাদের নাকি ধর্ম চলে যায়! ধর্মের মহান সৈনিক সেজে তারা মন্দির আক্রমণ করে। হিন্দুর বাড়ি লুট করে। বুদ্ধের মূর্তি পুড়ে সওয়াব অর্জন করে। আবার কিছু লোক আছে চাপাতি হাতে নেয় ধর্মের নামে। তারা নাকি ধর্মকে আদি ও অভ্রান্তরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখন যেভাবে ধর্ম প্রতিষ্ঠিত আছে সে অবস্থার ওপর তারা সন্তুষ্ট নয়। শত শত বছরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে চাপাতি দিয়ে উচ্ছেদ করা কি সম্ভব? ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ইসলামে মুতাজিলা, আশারিয়া কত মতবাদের জন্ম হয়েছিল কেউ কাউকেতো চাপাতি নিয়ে হত্যা করতে যায়নি। মতবাদের সংঘাত হয়েছে যা সত্য বলে মানুষ বুঝেছে তা মানুষ গ্রহণ করেছে। অসত্য বলে যা প্রতিপন্ন হয়েছে তা মানুষ গ্রহণ করেনি।

এইসব বক ধার্মিকদের পেছনে ফেলে এগিয়ে নিতে হবে সোনার বাংলাকে। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনাকালেও কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা অনুরূপ কাজে মুসলমান সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে সমগ্র উপমহাদেশে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল। ঠিক অনুরূপভাবে একবিংশ শতকে কিছু মুসলমান নেতা বিশ্বব্যাপী অনুরূপ একটা পাগলামির হাট বসিয়েছে আর এদের কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলমানেরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কাছে নিগৃহীত হচ্ছে। হয়তোবা কিছু দিন পর ইউরোপ আমেরিকায় মুসলমানদের উপস্থিতি অসহ্য হয়ে উঠলে কোনও এক হিটলারের আবির্ভাব হলে আর গ্যাস চেম্বার তৈরি করে মুসলমান নিধন আরম্ভ করবে। তখন মুষ্টিমেয় কিছু মুসলমানের জন্য সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নেমে আসবে।

ইহুদিরা ইউরোপে কম শক্তিশালী ছিল না, সংখ্যায়ও কম ছিল না। শুধু জার্মানিতেই ৬০ লক্ষ্য ইহুদিকে হিটলার হত্যা করেছিল। বাড়াবাড়ির পরিণতি কখনও শুভ হয় না। ইহুদিদের ব্যাপারেও হয়নি হয়ত আগামীতে মুসলমানের ব্যাপারেও হবে না। কোনও জাতির আত্মউপলব্ধির বিষয় কোনও খারাপ কিছু নয়, তবে এতে বিকারগ্রস্ত হলে বিনাশ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। মুসলমানতো বিশ্বে একক সম্প্রদায় নয় এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ আরও বহু সম্প্রদায় বসবাস করে।

আমাদের দেশে প্রতিটি দল প্রতিটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী পাকিস্তানের সময় থেকে আজ পর্যন্ত গত ৭০ বছরব্যাপী খাঁটি ও অভ্রান্ত গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে। যেই ক্ষমতায় যায় সেই নাকি গণতন্ত্রকে বন্দি করে ফেলে। এটা অভিযোগ, আমি কিন্তু কখনও খাঁটিও অভ্রান্ত গণতন্ত্র দেখিনি। কারণ ভেজালের মাঝেই আমার জন্ম ভেজালের মাঝেই আমি গড়ে উঠেছি। আমাদের দেশের প্রধান দুই নেত্রী তাদের যা বয়স তারাও কিন্তু আমার মতো খাঁটি ও অভ্রান্ত গণতন্ত্র কোনওদিন দেখেননি। এটা না দেখা ঈশ্বরের আরাধনার মতো। গণতন্ত্রের সন্ত্রাস না করে তাই আমি দেশের মানুষের ভালো থাকার, সুশাসনে থাকার, উন্নত জীবনযাপনে থাকার চিন্তা করি।

যাক, বলছিলাম দেশের কথা উন্নয়নের কথা। চীনের রাষ্ট্রপ্রধান গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দিয়েছেন। এ অর্থ আমাদের রিজার্ভ-এর চেয়ে ৩০০ কোটি ডলার বেশি আর ভারতের রিজার্ভ-এর দশ শতাংশ। ধীরে ধীরে এ অর্থে উন্নয়নের কাজ আরম্ভ হবে। এ ছাড়াও দেশের উন্নয়নের কাজ চলছেই। দেশে গ্যাস, বিদ্যুতের অভাব। সুতরাং এ অভাব পূরণ খুব দ্রুত করতে না পারলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

এক সময় বাংলাদেশে ২৯ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল তখন লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি আর এখন লোক সংখ্যা ১৬ কোটি অথচ কোনও খাদ্য ঘাটতি নেই। আবার ১ ইঞ্চি কৃষি জমিও বাড়েনি। এটা হচ্ছে প্রযুক্তি ও আমাদের কৃষক সমাজের মেহনতের ফসল। আমাদের ১ কোটি লোক বিদেশে কর্মরত। প্রতি মাসে নাকি গড়ে ৫ লক্ষ লোক বিদেশ যাচ্ছে। তাদের পাঠানো অর্থে রিজার্ভ বাড়ছে। এখন রিজার্ভ ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার। রিজার্ভ বাড়লে বিদেশে ঋণ দিতেও দ্বিধা করে না। আবার দেশের মর্যাদাও বিদেশে বাড়ে। আমাদের খুবই সৌভাগ্য যে একদল করিতকর্মা উদ্যোগতার অভ্যুদয় ঘটেছে দেশে। ভালো সহযোগিতা পেলে এরাই দেশকে টেনে ওপরে তুলে ফেলবেন।

বাংলাদশের ওষুধ এখন আমেরিকায় যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হতে প্রস্তুত সুতরাং দেশে এখন শান্তির পরিবেশ প্রয়োজন। ২০১৩ সালে একবার দেখেছি গার্মেন্টস নিয়ে ঢাকা থেকে ৫০০ ট্রাক চট্টগ্রামে গিয়েছিল মিলেটারি প্রহরায় জাহাজীকরণ-এর জন্য। এমন অস্বাভাবিকতা তো কখনও ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নয়। আমাদের দেশে রফতানি নির্ভর কারখানা গড়ে উঠছে বেশি। সময় মতো রফতানির কাজ সমাধা করতে হয়। না হয় রফতানিকারককে আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়।

গত ২০১৩ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ৪০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষা নিয়ে মুশকিলে পড়েছিল তখন বিরোধী দলীয় নেতা নেত্রীরা বলেছিলেন-পরীক্ষা পরে হবে। একি কথা! শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে কিসের আন্দোলন কিসের গণতন্ত্র। আমরা কি ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় আছি! কী মহান শাসন আমাদের অতীত শাসকরা দিয়েছেন, যারা এখন ক্ষমতায় আসতে চান! সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে আর বিরোধীদলকে কোনওভাবেই দেশের শান্তিময় পরিস্থিতিকে নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। উভয় পক্ষকে এমন সমঝোতায় আসতে হবে। তা হলে জায়গা ছোট আর মানুষ বেশি হলেও মানুষ অনাহারে মরবে না আমার সোনার বাংলায়।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ