X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

প্রভাষ আমিন
০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১১:১৭আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩৪

প্রভাষ আমিন সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় পূর্ণাঙ্গ গঠন করে ফেলতে পারা আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় সংগঠনের জন্য অনেক বড় কৃতিত্ব। টানা আট বছর ক্ষমতায় থাকা এত বড় একটি দলের কমিটি করে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তবু কমিটি ঘোষণার পর দৃশ্যমান কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই। ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যায়নি মানে এই নয় যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই। কিন্তু সেই ক্ষোভ দৃশ্যমান না হওয়াটা প্রমাণ করে দলের ওপর শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
এবারের কাউন্সিলের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন ছিল, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কিনা? প্রথম সুযোগেই সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবার আসবেন নাকি নতুন কেউ, এই ছিল আলোচনা। ক্রাইসিস ম্যান হিসেবে পরিচিত সৈয়দ আশরাফের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সব মহলেই। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, তিনি কর্মীবান্ধব নন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার দেখাই পেতেন না। এটা নিছক অভিযোগ নয়, সত্যি। সৈয়দ আশরাফ অন্যরকম। আওয়ামী লীগের হাইব্রিড, ধান্দাবাজ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তদবির নিয়ে তার কাছ পর্যন্ত যাওয়ার সাহসই পেতেন না। কাউন্সিলের প্রথম দিনের বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি তার নিখাদ ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। এমনকি কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করে এক নতুন রীতি তৈরি করেছেন তিনি। হাইব্রিডরা তদবির করার জন্য সৈয়দ আশরাফকে পেতেন না বটে। তবে তার জন্য কোনও কাজ আটকে ছিল, এমন অভিযোগ কেউ করতে পারেনি, পারবেও না। দলের ক্রাইসিসের সময় তিনি সামনে চলে আসতেন, আগলে রাখতেন দলকে। বরং এই যে নিজের চারপাশে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছিলেন, তা দলের জন্য ভালো হয়েছে, হাইব্রিডরা বেশি বাড়তে পারেনি।
সৈয়দ আশরাফ না হলে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো যোগ্য লোক একজনই ছিলেন, তিনি ওবায়দুল কাদের। দলে গণতন্ত্র নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু এটা তো বাস্তবতা, সভাপতি পদে গোপন ভোট হলেও শেখ হাসিনাই শতভাগ ভোট পেতেন। ওবায়দুল কাদের শতভাগ না পেলেও পাস করে যেতেন। আর পরপর দুবারের পর সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তনটা অপ্রত্যাশিত নয়। তবে ওবায়দুল কাদের সৈয়দ আশরাফের মতো নন, বরং বিপরীত চরিত্রের মানুষ। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ওবায়দুল কাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সবাইকে চেনেন। কে ধান্দাবাজ, কে হাইব্রিড, কে ত্যাগী তা তিনি জানেন। ইতিমধ্যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, হাইব্রিডরা দলে আপারহ্যান্ড নিতে পারবেন না।
শুধু সাধারণ সম্পাদক নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর নানামুখী আলোচনা হচ্ছে সেটা নিয়েও। বেশকিছু ইতিবাচক দিক আছে এই কমিটিতে, তেমনি আছে কিছু নেতিবাচক দিকও। আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, সরকার থেকে দলকে আলাদা করার একটা দারুণ প্রচেষ্টা আছে এই কমিটিতে। ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভার মাত্র ১০ জন আছেন ৮১ সদস্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ঘোষিত ৭৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। উপদেষ্টা ধরলে এই সংখ্যা আরো তিন বাড়বে। মন্ত্রিসভার ৫ জন এবার বাদ পড়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। বাদ পড়া ৫ জন আ হ ম মোস্তফা কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, নসরুল হামিদ বিপু ও জুনায়েদ আহমেদ পলক মন্ত্রিসভায় ভালো পারফরমার হিসেবেই পরিচিত। তাই পারফরম্যান্সের বিবেচনায় নয়, তারা বাদ পড়েছেন সরকার আর দলকে আলাদা করার প্রচেষ্টা থেকেই। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমার ধারণা মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় দল থেকে সরকারকে আলাদা করার প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারতেন, এমন যোগ্য কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে আমি অবাক হবো না। তবে এই আলাদাকরণ প্রক্রিয়ায় উজ্জ্বল ব্যতিক্রম শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তিনি প্রেসিডিয়ামে প্রমোশন পেয়েছেন। এটাকে অনেকে নুরুল ইসলাম নাহিদের পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি বলেই মনে করছেন অনেকে। দল থেকে সরকারকে আলাদা রাখার এই চেতনা আওয়ামী লীগের অনেক পুরোনো। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সংগঠনের কাজ করার জন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন অনায়াসে। সেই বয়সে মন্ত্রিত্বের লোভ ছাড়তে পেরেছিলেন বলেই শেখ মুজিবুর রহমান পরে বঙ্গবন্ধু হতে পেরেছিলেন, হতে পেরেছিলেন একটি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো, নারী নেতৃত্ব। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা জানি না। তবে সেই পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ দৃশ্যমান ছিল এবারের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। ঘোষিত ৭৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ জন নারী, ২০ দশমিক ৭ ভাগ। শামসুন্নাহার চাপা, রোকেয়া সুলতানার মতো আনকোড়া নেতৃত্ব ঠাঁই পেয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীতে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদেও উল্লেখযোগ্য নারী নেতৃত্ব জায়গা করে নিয়েছেন। আশা করা যায় তারা নিজেদের কোটা নেতৃত্বের অপবাদ ঘুচিয়ে নিজ নিজ যোগ্যতায় দলকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবেন।
আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তির দিক হলো তৃণমূল নেতৃত্ব। ৭৫এর পর আওয়ামী  লীগকে যখন ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছিল তখনকার ক্ষমতাসীনরা, তখনও এই তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই বাঁচিয়ে রেখেছিল দলকে। ৮১ সালে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের পর থেকেও বারবার দলের বিপর্যয়ে আগলে দাড়িয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর তৃণমূলের এই অবদানের কথা সবসময় স্বীকার করেন শেখ হাসিনা। তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘এই দলের নেতারা ভুল করে, তৃণমূলের কর্মীরা নয়’। শেখ হাসিনার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবদান স্বীকার করেই বসে থাকেন না, তাদের মূল্যায়নও করেন।
এবারের কমিটি যার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। সত্য মিথ্যা জানি না, কয়েকদিন আগে বিএনপির ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণার পর বিএনপির বঞ্চিত নেতাকর্মীরাই বলাবলি করছিলেন, বেগম জিয়া অন্য জায়গা থেকে তালিকা পেয়ে কমিটি করেছেন, কিন্তু তিনি নাকি কেন্দ্রীয় কমিটির সবাইকে চেনেন না। এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বলতে হবে শেখ হাসিনাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির সবাইকে তিনি চেনেন তো অবশ্যই, সবার ঠিকুজিও তার মুখস্ত। নইলে ছাত্রজীবনে রাজনীতি করে পরে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া শামসুন্নাহার চাপা সম্পাদকমণ্ডলীতে ঠাঁই পেতেন না। হুট করে রোকেয়া সুলতানা চলে আসতেন না স্বাস্থ্য সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। এবারের কমিটির সবচেয়ে বড় চমক অবশ্যই নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। নাম শোনা তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের অনেকে এমনকি তার চেহারাও চেনেন না। ৭৩ সালের এমপি পীযুষ ভট্টাচার্য যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে নিরিবিলি জীবনযাপন করছিলেন। সেই নিরিবিলিতে দারুণ চাঞ্চল্য এনে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শুনেছি পীযুষ ভট্টাচার্য কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের রাতে যশোর ফিরে যাওয়ার জন্য বাসের টিকেট কেটে রেখেছিলেন। একহাতে যখন বাসের টিকেট, তখনই হঠাৎ লটারির টিকেট পাওয়ার মতো পেয়ে গেলেন প্রেসিডিয়ামের সম্মান। এমনকি তার ভালো পোশাকও ছিল না। ঘোষণার পর তিনি প্রথমেই ছুটে যান বসুন্ধরা সিটিতে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার মতো ভালো পোশাক কিনতে। পীযুষ ভট্টাচার্য বা রমেশ চন্দ্র সেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দারুণ কোনও গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসবেন, এমন আশা করার কোনও কারণ নেই। এটা নিছক তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি, দলের প্রতি আনুগত্যের সম্মান।
কমিটি করার সময় শেখ হাসিনার মাথায় অনেকগুলো বিষয় ছিল। মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়ে যান; তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিত ছাত্রনেতা আমিরুল ইসলাম মিলন, যাকে এখনকার আওয়ামী লীগের কেউই চেনেন না, তিনিও মূল্যায়িত হন। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেকেই আস্তে আস্তে সক্রিয় হচ্ছেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। তাই তো দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের কন্যা মেরিনা জাহান বা পিস্তল মহিউদ্দিন হিসেবে পরিচিত বরিশালের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে ড. শাম্মী আহমেদ ঢুকে পড়েন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আবার আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ অনেকদিন তৃণমূলে রাজনীতি করেও সুযোগ পাননি। তবে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সরাসরি সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে যাওয়া চোখে লেগেছে কারো কারো। কারণ আওয়ামী লীগের যে কোনও পর্যায়ে এটা তার প্রথম পদ। কোনও খুঁটিনাটিই যে শেখ হাসিনার চোখ এড়িয়ে যায় না, তার প্রমাণ ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বা বিরিশিরির কলেজ শিক্ষক রেমন্ড আড়েং-এর অন্তর্ভুক্তি।
সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢোকার লাইনে ছিলেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগের গত অনেকগুলো কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন। ইশবালুর রহিম, ইসহাক আলী পান্না, লিয়াকত শিকদাররা সক্রিয় থেকেও সুযোগ পাননি। তবে প্রমোশন হয়েছে সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাবেক সাধারন সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীমের। শোনা কথা, শেখ হাসিনা নাকি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দুটি প্রশ্ন করেছেন, ওয়ান-ইলাভেনের সময় তারা কোথায় ছিলেন? আর ছাত্রলীগ নেতা মানেই কি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক? আসলেই এমন প্রশ্ন করেছেন কিনা জানি না, তবে কমিটিতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের অনেকেই ঠাই না পেলেও ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, আহমেদ হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দেলোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, আানোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপুদের অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করেছে, ছাত্রলীগ উপেক্ষিত নয়।
তবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মূল্যায়ন করতে গিয়েই কিছু প্রশ্নও উঠেছে। আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেন অপু একসময়ের আলোচিত গ্রুপ ফাইভ স্টার, সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি থাকার সময় তার কমিটির সাধারণ সম্পাদককে মেরেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তখন কমিটি ভেঙে দিতে হয়েছিল।
তবে কমিটির সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি আব্দুল মান্নান খানের নাটকীয় প্রমোশন। আসলে এবারের কাউন্সিলের চমক আসলে সভাপতিমণ্ডলীতে পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য’র অন্তর্ভুক্তি আর মান্নান খানের প্রমোশন। সিপিবি থেকে আসা মান্নান খান গত মেয়াদে পূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় আওয়ামী লীগে দুজন মান্নান ছিলেন। একজন বগুড়ার আব্দুল মান্নান, আরেকজন এই আব্দুল মান্নান খান। চেনার সুবিধার্থে আমরা গায়ের রং দিয়ে তাদের আলাদা করতাম। বগুড়ার আব্দুল মান্নানকে বলতাম ‘কালা মান্নান’, আর মান্নান খানকে বলতাম ‘সাদা মান্নান’। এই ডাক ভালোবাসার, কোনও বর্ণবাদী মনোভাব নেই এখানে। গয়ের রঙের মতো সারাজীবন বাম রাজনীতি করে আসা মান্নান খানের ইমেজও ছিল সাদা। কিন্তু তার সেই ক্লিন ইমেজ ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় তার পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে। আমরা অনেকেই যে সুযোগের অভাবে চরিত্রবান, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন মান্নান খান।  এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলমান। ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনেও হেরে যাওয়া মান্নান খান দলীয় রাজনীতিতেও কোনঠাসা হয়েছিলেন বছরদুয়েক ধরে। কাগজে কলমে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হঠাৎ করে আব্দুস সোবহান গোলাপ অনানুষ্ঠানিকভাবে দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে নেন। এমনকি গত কিছুদিন ধানমণ্ডি তিন নম্বরের কার্যালয়ে গিয়ে সম্মানজনক আসনও পেতেন না তিনি। এবারের কাউন্সিলের আগেও তিনি সক্রিয় ছিলেন না। তিনি আসলে রাজনীতির হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সাবেক সিপিবি নুহ উল আলম লেনিন বাদ পড়েছেন। আর তার জায়গায় ঢুকেছেন দুর্নীতির মামলার আসামী সাবেক সিপিবি মান্নান খান। অনেকেই বলছেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্য কারিগর হওয়ার অপরাধেই বাদ পড়েছেন লেনিন। কিন্তু এই অপরাধে বাদ পড়লে আরও অনেককেই বাদ পড়তে হত। কারণ তখন অনেক বাঘা বাঘা নেতাকে রাতভর গণজাগরণ মঞ্চে দেখা গেছে। এমনকি শেখ হাসিনা নিজেও গণজাগরণ মঞ্চে যাওয়ার আকাঙ্খার কথা বলেছিলেন। আমার ধারণা এলাকায় নানা দখলদারির অভিযোগই লেনিনের কাল হয়েছে। তবে নুহ উল আলম লেনিনের অপরাধ বেশি না মান্নান খানের? কে জানে। দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা মৃনাল কান্তি দাসকে অনেকদিন আব্দুস সোবহান গোলাপের অধীনে উপ-দফতর সামলাতে হয়েছে। যেটা তার জন্য অনেকটা গ্লানির ছিল। এবার সেই গ্লানিমুক্তি হয়েছে।
নবীন-প্রবীণ, ভালো-মন্দে মেশানো এই কমিটিকেই স্বল্প মেয়াদে আগামী নির্বাচনে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কাউন্সিলে ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে হবে। শেখ হাসিনার দূরন্ত গতির সাথে কতটা তাল মেলাতে পারবে তার এই সঙ্গীরা, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ