X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হিলারি না ট্রাম্প?

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
০৮ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৩১আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৪২

আজ ৮ নভেম্বর আমেরিকার ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আমেরিকার ইতিহাসে অনেক প্রেসি বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী ডেন্ট একাধিক টার্মে দায়িত্বে ছিলেন, সেই হিসেবে অবশ্য যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি হতে যাচ্ছেন দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। আর এ কারণেই সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আমেরিকার দিকে। আমেরিকার আর কোনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্বে এত আগ্রহ আর কখনও কেউ দেখেননি। অথচ প্রার্থীদের মাঝে ওল্ড গ্রান্ড রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন কেউই উপযুক্ত প্রার্থী নন।
আমেরিকা ছিল বিরান জনপথ। কিছু আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা বসবাস করতো। সেখানে-বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গিয়ে আমেরিকায় জনবসতি গড়ে তুলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করছে। আমেরিকায় যারা বসতি স্থাপন করেছেন তাদের মাঝে ইউরোপীয় আমেরিকান বেশি। দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হচ্ছে আফ্রিকান আমেরিকান। দাস ব্যবসায়ীরা আফ্রিকান আমেরিকানদের আফ্রিকা থেকে নিয়ে দাস হিসাবে ইউরোপীয় আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করেছে। তারা চাষাবাদের কাজ করতো। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আফ্রিকান-আমেরিকানরা সংখ্যায় নগণ্য ছিল না, তবু আমেরিকার স্বাধীনতার স্থপতিরা আফ্রিকান আমেরিকানদেরকে হিসাবে ধরেননি।
দাস প্রথা নিয়ে আমেরিকার ইতিহাস ভরপুর। লিংকনের সময় এ নিয়ে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধও হয়েছিল। লিংকন ছিলেন দাসপ্রথা বিলোপের পক্ষে। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলো কৃষি প্রধান তারা চেয়েছিল দাসপ্রথা বহাল রাখতে। গৃহযুদ্ধের পর দাস প্রথা শীতল হয়ে গেলেও আফ্রিকান আমেরিকানদের বহুদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে শ্বেতাঙ্গদের মতো সব অধিকার ভোগ করার পর্যায়ে আসতে। জন লুই, রোজা পার্ক মার্টিন লুথার কিং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। মার্টিন লুথার কিং কে তো গুলি করে শ্বেতাঙ্গরা হত্যা করেছিল। এখন মার্কিন নির্বাচনে সবাই ভোটার। এমন কী গত আট বছর দু’ দফা একজন আফ্রিকান আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বের একক ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বিশ্বরাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে অনুষঙ্গ বলে মনে করা হয়। বিশ্ব রাজনীতি সম্প্রতিক সময়ে দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ হলেও মার্কিন আধিপত্য শেষ হতে এখনও বিশ্বকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে। আজকের নির্বাচনে কে প্রেসিডেন্ট হবেন তা নির্ভরযোগ্যভাবে বলা মুশকিল।
নির্বাচনকে নিয়ে শতসহস্র জরিপ হলেও জরিপের ওপর নির্ভর করে বিশ্লেষকেরা কোনও চূড়ান্ত কথা বলতে অপারগ হবেন কারণ মিডিয়াগুলো দলকানা। সিএনএন হিলারিকে সমর্থন করে আবার ফক্স সমর্থন করে ট্রাম্পকে। দলবাজ পত্রিকা আমেরিকায় অগণিত। ডেমোক্র্যাটরা সব দলবাজ পত্রিকাগুলোর রাস টেনে নিজেদের হাতে রাখতে পেরেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টাকার বস্তার মুখ খুলে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে উভয় প্রার্থী কেউ কারও পিছিয়ে নেই।

এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সিনেটের ৩৪ কেন্দ্রে আর প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে প্রেসিডেন্ট অকার্যকর হয়ে যায়। তখন জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন অন্য যে কোনও বিষয়ে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন না।

ব্যবসায়ী হিসেবে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে ট্রাম্প যতটুকু সাজানো গুছানো হওয়ার কথা ততটুকু নন বরঞ্চ হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল। স্বেচ্ছা সেবক-এর সংখ্যাও হিলারির বেশি। মিডিয়ার সমর্থনও হিলারির পক্ষে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। হিলারির পরিচিতিও ব্যাপক। তিনি সিনেটর ছিলেন, সেক্রেটারি অব স্টেট  ছিলেন, ফার্স্ট লেডি ছিলেন। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা থাকার প্রয়োজন হিলারির তার চেয়েও বেশি আছে। এরপরও শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপী হিলারির সমর্থকদের মাঝে উদ্যোগ উৎকণ্ঠার সীমা নেই। কেন?

(১) ডেমোক্র্যাট দলের বারাক ওবামা ক্ষমতায়। তিনি গত ৮ বছর ক্ষমতায় থেকেও গরীব মধ্যবিত্তের কোনও উপকার করতে পারেননি। সুতরাং প্রতিষ্ঠানিক বিরোধিতার শিকার হবেন হিলারির ক্লিনটন।

(২) ট্রাম্প-দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন রাজনীতিবিদেরা দশকের পর দশক আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তারা আমেরিকার মানুষের কোনও উপকার করতে পারেননি বরঞ্চ তারা আমেরিকাকে দেউলিয়ার পর্যায়ে এনে উপস্থিত করেছেন। সুতরাং একজন ব্যবসায়ীকে ভোট দিয়ে দেখুন।

(৩) ট্রাম্প বলেছেন দুনিয়াব্যাপী তিনি অহেতুক আমেরিকার সর্দারি বন্ধ করবেন। ন্যাটোতে যদি ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রয়োজনে আমেরিকার সৈন্য থাকতে হয় তবে তার খরচ ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো বহন করবে। তাইওয়ানকে যদি আমেরিকার সপ্তম নৌবহরকে পাহারা দিতে হয় তবে তার সব ব্যয় তাইওয়ানকে বহন করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানকেও নিরাপত্তা দিতে হলে তার ব্যয় করা বহন করবে।

(৪) ট্রাম্প বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে আইএস- এর জন্মদাতা হচ্ছে ওবামা আর হিলারি। সত্যিকার অর্থে তারাই আইএস-এর জন্মদাতা। কারণ দেখা যাচ্ছে আইএস ও আল-নুসরার হতাহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদান করছে ইসরায়েল এবং অস্ত্রও সরবরাহ করছে ইসরায়েল।

(৫) ই-মেইল কেলেঙ্কারি সবচেয়ে বেশি বিব্রত করেছে হিলারিকে। হিলারির বিশ্বযোগ্যতা যা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের থাকা খুবই প্রয়োজন তা কোনওভাবেই আমেরিকান ভোটারদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। 
(৬) বেনগাজীতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হত্যা এবং লিবিয়ার কেলেঙ্কারির জন্য হিলারিকে দায়ী করা হচ্ছে। তখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

(৭) সর্বশেষ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা হচ্ছে যে সব আরবের শেখ আইএসকে অর্থবিত্ত দিয়ে সাহায্য করছে তারাই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে চাঁদা দিচ্ছে।

(৮) ২০০০ সালে জর্জ বুশ (জুনিয়র) ও আল গোরকে জেতানোর জন্য যুদ্ধবাদী এস্টাবলিশমেন্টের একটা বড় অংশ এবং সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নীতিবহির্ভূত পন্থা অনুসরণে দ্বিধা করেননি, এখনও ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি বিগ মিডিয়া ও এস্টাবলিশমেন্টের একটা অংশ সেই পায়তারা করছে। এফবিআই এর সর্বশেষ ভূমিকা তারই পরিণিতি।

(৯) ই-মেইল নিয়ে অভিশংসনের হুমকি।

(১০) হিলারি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বিপুল অংকের ডলার ছড়ানোর বিষয় নিয়ে।

ওপরের বিষয়গুলোর কারণে হিলারির সঙ্গে ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। এ লড়াইয়ে জেতা খুব সহজ নয়। আজকের নির্বাচনে যেই জিতুক তাতে বিশ্ববাসী যতটুকু উৎকণ্ঠায় রয়েছে ততটুকু উৎকণ্ঠার কিছু নেই। ট্রাম্প জিতলেও নরক ভেঙে পড়বে না বিশ্বের ওপর আর হিলারি জিতলেও স্বর্গের সু-বাতাস বইবে না বিশ্বে।

লেখক: কলামিস্ট
[email protected]

আরও খবর: যে অঙ্গরাজ্যগুলো হিলারি-ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ