X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাগ-ই-মোনায়েম এবং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ

নাদীম কাদির
১৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:৫২আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:৫৬

নাদীম কাদির পাকিস্তানি গভর্নর মোনায়েম খানের সম্পত্তির অবৈধ অংশের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ায় মেয়র আনিসুল হককে ধন্যবাদ। মোনায়েম খানের বাড়ি দখলমুক্ত করতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন,  যুদ্ধাপরাধী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না; এমন মানুষদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত।
এই দাবির কথাটি বড্ড দেরিতে শোনা গেল। তবে এখনও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। 
মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকান দূতাবাস তাদের আমেরিকান সেন্টারের জন্য মোনায়েমের বাড়িটি ভাড়া নিয়ে রেখেছিল দীর্ঘদিনের জন্য। আইনভঙ্গ করে তারা এটি ভাড়া নেয়। আমেরিকান সেন্টার পাকিস্তানপন্থী মতাদর্শের প্রতি সহমর্মী বলে অনেকেই মনে করেন।
আমার বাবা লে. কর্নেল আব্দুল কাদির  প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের আবাসন প্রকল্পের আওতায় (ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং স্কিম-ডিওএইচএস) করাচিতে একটি প্লট পেয়েছিলেন। তবে এখন তা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। কেননা পাকিস্তানিদের চোখে আমার বাবা একজন ‘সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনি আসলে একজন মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যিনি শহীদ হয়েছিলেন।
তবে অন্য কারও কারও করাচির ওইসব প্লট বিক্রি করে দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার বিধবা মা প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ওই আবাসন প্রকল্প থেকে কোনও ধরনের সুযোগ সুবিধা নেননি। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে করাচির ওই প্লট নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সে কথা থাক। আমার আজ অন্য কথা বলার আছে। 
মোনায়েম খান মুক্তি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তবে বিস্ময়কর হলো, তার পরিবার বাংলাদেশে সব বৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিলেন। তারা বনানীর মতো জায়গায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে রেখেছিলেন।
মোনায়েম খানের অবৈধ বাড়িটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় একটি হাসপাতালে রূপান্তর করার যে প্রস্তাব ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি করেছে, সেটি একটি যথার্থ দাবি।  বিহারিসহ যাবতীয় পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য এটাই মোক্ষম সময়। সম্পত্তি রক্ষায় বিহারিরা বাঙালিদের বিয়ে করেছে এবং তাদের সম্পত্তির দখলও নিয়েছে।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিহারিদের ভূমিকা কী ছিল, তা আমাদের ভোলা উচিত নয়। এখনও তারা পাকিস্তানের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জারি রাখতে পেরেছে। ক্রিকেট খেলায় তারা খোদ বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচের ক্ষেত্রেও তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে থাকে।
আমাদের এসব উপেক্ষা করা উচিত নয়। কেননা তারা আমাদের সমাজের মধ্যে মিশে আছে। সে কারণে আমাদের নীরব থাকার সুযোগ নেই। নীরব থাকলে আমাদের জাতীবোধের মূলনীতি ভয়ঙ্কর হুমকির মধ্যে পড়বে।

এইসব বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি দিয়ে আমরা কী করব? অবশ্যই আমরা একমত হবো যে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের মানুষদের জন্য এইসব সম্পত্তি কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমারও কোনও দ্বিমত নেই। তবে আরও কোনও কোনও খাতে এইসব বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি কাজে লাগানো যেতে পারে।

দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন, কিংবা একে প্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন; এমন বিভিন্ন পেশার সম্পত্তিহীন মানুষের জন্যও বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি কাজে লাগানো যেতে পারে।

পুরস্কৃত হওয়া এক শিক্ষককে চিনতাম আমি। তবে স্ত্রী-সন্তানের জন্য তিনি কোনও সম্পত্তি রেখে যেতে পারেনি। মাথার ওপরে একটা ছাদ পাওয়ার জন্য ওই পরিবারকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এমন অসংখ্য পরিবার আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের কাজ, এদের খুঁজে বের করা এবং তাদের সহায়তা দিতে সরকারকে আহ্বান জানানো।

মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে, ভিন্ন ভিন্ন সংযোগ ব্যবহার করে যেন একই পরিবার একাধিকবার সম্পত্তি না পায়।

চলেন আর সময় নষ্ট না করি। এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করি।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
চাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বাজেট
চাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বাজেট
লিঙ্গবৈচিত্র্য ও পুরুষতন্ত্রের মেনে নেওয়া-না নেওয়া
লিঙ্গবৈচিত্র্য ও পুরুষতন্ত্রের মেনে নেওয়া-না নেওয়া
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ