X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নোবডি কিল্‌ড বুশরা

প্রভাষ আমিন
১৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:১৫আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৩১

প্রভাষ আমিন কলেজ শিক্ষার্থী রুশদানিয়া ইসলাম বুশরা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছে। নিম্ন আদালত এ মামলায় তিনজনকে ফাঁসি এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট ২ জনের ফাঁসি মওকুফ করেন। আর আপিল বিভাগ বাকি দুইজনের সাজাও মওকুফ করে দিয়েছেন। রিভিউ করার সুযোগ আছে বটে, তবে এটিই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়।
আমি নতমস্তকে এ রায় মেনে নিচ্ছি। আপিল বিভাগ ঠিক কাজটিই করেছেন। আইনের মূল চেতনাই হলো, ১০ জন দোষী ছাড়া পাক, তবু যেন একজন নিরপরাধী সাজা না পায়। বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগটা সব সময়ই অভিযুক্তই পান। সব মানছি, আমার খালি একটা ছোট্ট প্রশ্ন, তাহলে বুশরাকে কে ধর্ষণ করলো, কে খুন করলো?
একমাত্র সন্তানকে হারানোর শোকে তিন বছরের মধ্যেই মরে গেছেন বাবা। ১৬ বছর ধরে মেয়ের ছবি বুকে চেপে বিচারের আশায় আছেন লায়লা ইসলাম। তার বিচারের বাণী কি নিভৃতেই কেঁদে যাবে? আসামী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি হলো, গভীর রাতে কোন দুর্বৃত্ত এসে বুশরাকে ধর্ষণ ও খুন করেছে, তার কোনও চাক্ষুস সাক্ষী নেই। খুব ঠিক কথা। ধর্ষক তো আর পাশে সাক্ষী রেখে ধর্ষণ করবে না। আসলেই তো কেউ দেখেনি। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে যে ধরনের সাক্ষ্য আইনগতভাবে দরকার, সে সাক্ষ্য এখানে নেই।’ খুব ঠিক কথা- জোরালো সাক্ষ্য না থাকলে আপিল বিভাগ তো আর কিছু ধারণা আর মিডিয়া ও দেশজুড়ে তোলপাড়ের ভিত্তিতে কাউকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন না।
চাক্ষুস সাক্ষী নেই বলেই বুশরা ধর্ষক ও খুনি পার পেয়ে যাবে? ঘাটতিটা কোথায়? আসল ঘাটতি গোড়ায় মানে তদন্তে। পুলিশ যদি ঠিকমত তদন্ত না করে, সাক্ষী জোগাড় না করেই মামলা কোর্টে তুলে দেন, আসামীরা তো খালাস পাবেনই। গল্পে-সিনেমায় দেখি চাক্ষুস সাক্ষী না থাকলেও অপরাধীরা কোনও না কোনও ক্লু রেখে যায়। সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা তুলে আনেন সত্য। কিন্তু সিনেমা আর বাস্তব এক নয়। অবশ্য বাংলাদেশের পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। একই সঙ্গে তাদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, বিরোধী দলকে দৌড়ের ওপর রাখতে হয়, মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে হয়, ক্রসফায়ার করতে হয়, পোস্টিঙের টাকা তুলতে ঘুষ খেতে হয়। ফাঁকে ফাঁকে তদন্তও করতে হয়। তাদের অত সময় কই অপরাধীর ফেলে যাওয়া ক্লু ট্র্যাক করে করে সত্য উদঘাটনের। কিন্তু পুলিশ যে চাইলেই পারে, তার প্রমাণও ভুরি ভুরি।

জনকণ্ঠের সামনে মধ্যরাতে এমপিপুত্র রনির বেপরোয়া গুলিতে দুই নিম্নবিত্তের মৃত্যুর ক্লু লেস ঘটনার রহস্যও তো এই পুলিশই উদঘাটন করেছে। তবে সে জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, প্রয়োজনে তদন্তের জন্য আলাদা সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। নইলে বুশরার মায়েদের আহাজারি বাতাসেই মিলিয়ে যাবে যুগের পর যুগ।

পর্যাপ্ত সাক্ষ্য না পাওয়ায় আপিল বিভাগ অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। ভালো কথা। কিন্তু আদালত কি পারেন না, বুশরার হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিতে? নিরপরাধীর মুক্তি পাওয়াটা যেমন আইনের শাসন, তেমনি প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করে তাকে বিচারের আওতায় আনাটাও তো আইনের শাসনের জন্যই জরুরি। সাক্ষ্য নেই, আসামী বেকসুর। ব্যস, খেল খতম। আমাদের আর কারও কোনও দায়িত্ব নেই?

আবারও সিনেমার কথায় ফিরি। ভারতের একটি হিন্দি সিনেমার নাম 'নোবডি কিল্ড জেসিকা'। সিনেমায় এক তরুণ রাগের মাথায় জেসিকা নামের এক তরুণীকে খুন করে। জেসিকার বোন দিনের পর দিন লেগে থেকেও ন্যায়বিচার পায়নি। খুনি তরুণের ক্ষমতাশালী পিতা অর্থ আর ক্ষমতা দিয়ে আইন কিনে নেয়। নিম্ন আদালতে মামলা যখন শেষ, তখন এক সাংবাদিকের দৃষ্টি পড়ে ঘটনায়। তিনি লেগে থেকে বের করে আনেন সত্য। সাজা হয় খুনির। তেমন সাংবাদিকই বা কই। সিনেমা আর বাস্তবে যে যোজন যোজন ফারাক।

লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ