X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রাণ নয়, মাটির অধিকার চান সাঁওতালরা

রাশেদা রওনক খান
১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:২৭আপডেট : ১৩ জুন ২০১৭, ১৭:০৭



রাশেদা রওনক ‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রশাসনের ত্রাণ গ্রহণ করেনি সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামের সাঁওতাল সম্প্রদায়। ত্রাণ বিতরণ করতে গেলে ওই সম্প্রদায়ের লোকজন তা ফিরিয়ে দেন!’ খবরটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।  যদিও বিষয়টি আমাকে একদমই অবাক করেনি। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে বহুবার পড়েছি এই সাঁওতালদের ইতিহাস, মুগ্ধ হয়েছি তাদের সাহসিকতা আর অবিচল থাকার অঙ্গীকারের গাথা শুনে। ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ' নিয়ে অনেক ইতিহাস আছে। ঔপনিবেশিক শাসন ও দেশীয় সামন্ততান্ত্রিক শোষণের মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যে পরিচালিত এ ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ই সেই সময় ভারতবর্ষের মানুষের মনে সম্রাজ্যবাদবিরোধী আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের এবং আত্মসম্মানবোধের চেতনা জাগ্রত করেছিল। আর সে চেতনার আলোতেই উদিত হয়েছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। যতবার সাঁওতালদের ইতিহাস পড়ি, ততবারই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত হয় মনের মাঝে, বিস্ময়ও জাগে তাদের এতটা দৃঢ়তা আর সাহস দেখে। সাঁওতাল ইতিহাস পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু অনুমান করা যায় খুব সহজেই—ত্রাণ নয়, তারা তাদের অধিকার চান। মাটির অধিকার, বাঁচার অধিকার!
ত্রাণ না নেওয়ার কারণ হিসেবে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসন নাকি তাদের একমুখে দুই কথা বলছে। তারা একদিকে ত্রাণ দিতে চাইছে, অন্যদিকে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে সাঁওতালদের জমি নষ্ট করছে। তাই তারা প্রশাসনের কোনও ত্রাণ গ্রহণ করেনি। নব্য উপনিবেশবাদ, নব্য সাম্রাজ্যবাদ কিংবা চরম পুঁজিবাদ কিছুই যেন ছুঁতে পারেনি অবিচল আত্ম-অধিকারবোধের চেতনায় বিশ্বাসী এই সম্প্রদায়কে। একটু পেছনে ফিরলেই দেখতে পাব, তাদের ইতিহাস ত্রাণ গ্রহণের নয়, বরং গর্জনের, গৌরবের আর অহঙ্কারের!
ইতিহাস বলে, আজ থেকে প্রায় ১৫৯ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৫৫ সালের দিকে, আদবাসী সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ ও শান্তপ্রিয় আদিবাসী সম্প্রদায় হলো এই সাঁওতাল। সেসময় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর যোগসাজশে স্থানীয় জমিদার, জোতদার এবং মহাজনরা প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত করছিলো সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সাদামাটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে। সাঁওতালদের ওপর এতটা শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, দাসত্ব আর নারীর প্রতি অবমাননা- এসব যখন আর সহ্য করা যাচ্ছিল না, তখনই শান্তিপ্রিয় এই সাঁওতালরা ঐক্যে পৌঁছেছিল, গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। সাঁওতাল বিদ্রোহের তীব্রতা ও ভয়াবহতায় ইংরেজ শাসনের ভিত কেঁপে উঠেছিল। লর্ড ডালহৌসি কতৃক মার্শাল ল’ জারি করেও এ বিদ্রোহ দমানো যায়নি। এই বিদ্রোহে প্রতিবাদী সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল প্রাণ দেয়। সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘটিত প্রতিবাদ ।
ভারতের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসের এ এক অতুলনীয় অধ্যায়, আর এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, ১৮৬০-৬১ সালে নীল চাষীদের বিদ্রোহ, বর্তমান বাংলাদেশে ১৮৭২ সালে ঘটে যাওয়া রায়ত অভ্যুত্থান যা পাবনা ও বগুড়া জুড়ে ঘটেছিল, ১৮৭৫-৭৬ সালে দাক্ষিণাত্যের মারাঠা কৃষকদের অভ্যুত্থান, মুন্ডা বিদ্রোহ, ১৯৪৬-৪৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশের নাচোলের তেভাগা আন্দোলনসহ ইতিহাসের অন্যান্য কৃষক আন্দোলনও সাঁওতাল বিদ্রোহ থেকেই প্রেরণা পেয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ১৮৫৫ সালের দিকে সাঁওতাল বিদ্রোহ এর মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ উপিনিবেশের ক্রমাগত শাসন, শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে পরাধীন জাতিকে রক্ষার জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপন করেছিল যে সম্প্রদায়,সেই সাঁওতাল সম্প্রদায়কেই আমরা আবার শোষণের বেড়াজালে আটকে দিতে চাইছি ২০১৬ সালে!
সান্তাল হুলের ইতিহাস পড়লেই জানা যাবে কিভাবে দামিন-ই কোহ, যা ছিল ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ, সেখানে এই সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পাকুর, পূর্ণিয়া অঞ্চলে অবস্থান করলেও, সবচেয়ে বেশি সাঁওতাল বসতি স্থাপন করে ভাগলপুরের এই দামিন-ই-কো’তে।  দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বন জঙ্গল পরিষ্কারের মধ্যদিয়ে  দামিন-ই-কো’তে তারা তাদের নিজেদের মতো করে জনপদ গড়ে তুলেছিল শান্তিপ্রিয় এই সম্প্রদায়। অতীতে যে মাটিতে মানুষের বিচরণই ছিল না সে মাটিতে অতি কষ্ট আর শ্রমের বিনিময়ে ফলিয়েছিল সোনালি ফসল। নিজেদের আলাদা একটা জগত তৈরি করেছিল তারা, যেখানে ছিল না কোনও মহাজন-জমিদার-দালাল, ছিল না কোনও ঋণগ্রস্ত মানুষ, একটা স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের স্বপ্ন দেখেছিল তারা।

কিন্তু দামিন-ই-কো এর সমৃদ্ধির খবর আর সোনালি ফসলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে সেখানে যেতে থাকে ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণি। সেই পুরনো পদ্ধতিতে তারা ব্যবসার নামে  সহজ সরল সাঁওতালদের চরমভাবে ঠকানো শুরু করলো। বিভিন্ন ধরনের বিনিময় প্রথা যেমন কিছু চাল, কিছু অর্থ বা অন্য দ্রব্য ঋণ দিয়ে সমস্ত জীবনের জন্য সাঁওতালদের ভাগ্যবিধাতা ও দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে বসার পাঁয়তারা শুরু করলো মহাজনরা। কিন্তু সাঁওতালরা ঠিকই টের পেয়েছিল এই দুরভিসন্ধি!

তাই এইসব স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীর অত্যাচারের শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এদিকে তখন সেখানে ১৮৫২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাদের ওপর শোষণ-নিপীড়ন-অত্যাচারও বেড়ে গিয়েছিল। ভূমির এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে সাঁওতালরা বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে যে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে তুললো, বন্য হাতি, শুকর ও অন্যান্য জীবজন্তুর হাত থেকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করলো,  সেই জমি সমতল ভূমিতে বসবাসকারী জমিদার-জোতদার-তালুকদাররা জোরপূর্বক দখল করে নিল। সাঁওতালদের ওই জমিতে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করলো। 

শোষণের মাত্রা সেখানেই শেষ নয়, ব্রিটিশরাজ কর্তৃক মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ব্যাপারী-মহাজনরা নিরক্ষর ও সহজ-সরল সাঁওতালদের ছল-চাতুরির মাধ্যমে প্রতারিত করতে থাকে এই শান্তিপ্রিয় সাঁওতালদের। তারপরও পাথুরে জমিতে সাঁওতালদের অশেষ পরিশ্রমে ফলানো ফসল পরম মমতায় তুলে দিত মহাজনের হাতে। তবু যেন শোধ হতো না তাদের ঋণ। ঋণচক্রের হাত থেকে যেন রেহাই নেই তাদের। তারা না পারলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপর দায়িত্ব পড়তো মহাজনের ঋণ পরিশোধের।

কোনও সাঁওতাল যদি মহাজনের হাতে ফসল তুলে দিতে অস্বীকার করতো, তাহলে ওই সময় মহাজনেরা দেওঘর বা ভাগলপুর আদালতে ক্রোকি পরোয়ানার ব্যবস্থা করতো ঘুষ দিয়ে। আদালতের পেয়াদার উপস্থিতিতে তখন নিজের অসহায়ত্ব আর সর্বনাশ দেখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকতো না সাঁওতালদের। আবার এই ধরনের অমানবিকতার কোনও প্রতিকারও সাঁওতালদের হাতে ছিল না। শিক্ষিত নয় বলে ইংরেজদের বিচারালয় তাদের নাগালের বাইরে ছিল।  এছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়া তাদের ভাবনারও অতীত। এভাবে প্রতারিত হতে থাকা এই সাঁওতাল সম্প্রদায় একপর্যায়ে ব্রিটিশ চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে থাকে। এটি ছিল  ব্রিটিশবিরোধী  প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। ধীরে ধীরে এভাবে ঋণদায়গ্রস্ত সাঁওতালদের বংশগত ক্রীতদাসত্বের মতো বর্বর প্রথা প্রচলনের মাধ্যমে তাদের আজীবন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার যে চক্রান্ত, তাতে আঘাত হানার চেষ্টা করে সাঁওতালরা।

ওই সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের সীমাহীন অত্যাচার, দুর্নীতি, উৎপীড়ন এবং জমিদার-জোতদার-ব্যাপারী-মহাজনদের দুষ্কর্ম ও অত্যাচারে সহায়তা করতো। এখন ১৫৯ বছর পরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেই রূপ কতটা অপরিবর্তিত রয়েছে, তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ওই সময় সরকারি বিচার-ব্যবস্থা কিংবা আদালতে সুবিধা পেত না তারা, এখনও অবশ্য তারা কোনও মামলা করেনি। যাই হোক, বিভিন্নভাবে নির্যাতন-শোষণের বিরুদ্ধে ওই সময় সাঁওতালদের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে, তারা প্রতিবাদী হতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ থেকে বিদ্রোহের জন্ম নেয়।

এই সাঁওতালবিদ্রোহ শুধু সাঁওতালদের বিদ্রোহ বা শুধু  সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কোনও বিদ্রোহ ছিল না। এই বিদ্রোহকে অবিভক্ত ভারতের প্রথম ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে অনেক ইতিহাসবিদ দেখে থাকেন। হয়তো অসম যুদ্ধের ফল স্বরূপ এই বিদ্রোহে সাঁওতালদের পরাজয় ঘটেছিল, কিন্তু এ বিদ্রোহই ভারতবর্ষের মানুষের মনে সম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা জাগ্রত করেছিল। অথচ আজ সাঁওতালরা অবহেলিত, গুলিবিদ্ধ হয় আমাদের এই স্বাধীন দেশে! সেদিন সাঁওতাল বিদ্রোহীদের আত্মত্যাগ পাদপ্রদীপের আলোয় না এলেও আজ আবার আমাদের সামনে তারা শিক্ষা দিয়ে গেলো, জানিয়ে দিলো, তারাই আমাদের প্রতিরোধের প্রতীক, বিপ্লবের জ্বলন্ত উদাহরণ। আমরা কেউই পারি না তাদের মতো করে নির্মোহ থেকে প্রতিবাদ-লড়াই করতে! তাহলে হয়তো সাগর-রুনি কিংবা তনু হত্যার বিচার আমরা আদায় করতে পারতাম!

ফিরে আসি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৬ সালের সাঁওতাল প্রতিরোধের আলোচনায়! নব্য উপনিবেশবাদের এই চরম সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৬ সালে এসে আবার একদল অতিলোভী ব্যবসায়ী মালিকপক্ষ স্থানীয় প্রসাশনের সহযোগিতায় সাঁওতালদের শোষণের নয়া পদ্ধতি নিয়ে হাজির। বাঁধিয়ে দিলো সংঘর্ষ! এই সংঘর্ষের সময় রমেশ সরেন নামে একজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। যদিও গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রতকুমার সরকার বলেন, ‘রমেশের মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিক কারণে! গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়নি’! খবরে প্রকাশ, সংঘর্ষে নিহত আরও দু’জন হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্যামল হেমভ্রম ও  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার দান্দুপর গ্রামের মঙ্গল মাদ্রি।  ফিলিমন বাস্কে জানান, ‘এই মুহূর্তে চার থেকে পাঁচজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের গুম করা হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রংপুর হাসপাতাল থেকে বিমল কিসকো ও দুপুরে চরণ সরেনকে নিয়ে যায় গাইবান্ধা পুলিশ। ছবিতে আমরা দেখলাম কিভাবে সাঁওতালদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে ও কোমরে রশি বেঁধে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই এলাকার সাঁওতালদের অস্থায়ী ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সংশ্লিষ্ট যারাই এই ধরনের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে লিপ্ত আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এই ধরনের লোকজন সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে দেশে ও বহির্বিশ্বে। ইতিহাস কিন্তু রচিত হয়ে যাচ্ছে! এই স্বাধীন দেশে বীরের সম্প্রদায় সাঁওতালদের নিয়ে শোষণের ইতিহাস রচিত হোক, তা কারোরই কাম্য নয়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা চাই না। বিষয়টি তদন্ত করে সত্য প্রকাশ করা হোক, অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা হোক। সাঁওতালদের আর বঞ্চিত কিংবা শোষণ-নিপীড়ন নয়। এই সাঁওতালরাই দেখিয়ে দিয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার অস্তমিত সূর্যকে উদিত করার স্বপ্ন! আজ তারাই আরও একবার দেখিয়ে দিলো কিভাবে আপসহীন প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করতে হয়।

যদিও সাঁওতালরা প্রশাসনের দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় গতকাল ত্রাণ নিয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে। তিনি যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, নিশ্চয়ই এবার এই সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে এটা আশা করতে পারি। এই মুহূর্তে দেশে ভূমিহীন সাঁওতালের সংখ্যা এখন প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সাঁওতাল পরিবার গুলো তাদের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখে এখনও পশুপালন ও কৃষিকাজ করে যাচ্ছে। সেসব অঞ্চলের বনজঙ্গল পরিষ্কার করে এমনকি অনাবাদি জমিগুলোকেও চাষ উপযোগী করেছে তারা। এসব জমির প্রতি কারও কোনও আগ্রহ ছিল না, কিন্তু যেই মাত্র তারা অনেক কষ্ট করে সেগুলোকে চাষযোগ্য করে গড়ে তোলে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে যায় তখনই! ওই সময় মহাজনরা এসে তাদের ভিটে হারা করতো, আর এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের সেসব জমি দখলে নিতে চায়! এভাবেই এখন তারা নির্যাতিত হচ্ছে, স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা যেন সাঁওতালদের অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে তাদের জমি দখল করতে না পারে সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে, অধিকার আদায়ের মিছিলে তারা সবসময় আমাদের অহঙ্কারের জায়গাটুকুতেই থাকুক। তাদের প্রতি করুণা নয় বরং আত্মসম্মানবোধের, অধিকারের সবটুকু তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ