X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট দূরে, ভোট অদূরে

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩২আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৪২

তুষার আবদুল্লাহ অগ্রহায়ণের নবান্ন উৎসবে পিঠা-পুলির সৌরভে মেতে ওঠার আগেই, ভোট উৎসবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে ভোট হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। কিন্তু দূর ভবিষ্যতের ভোটের গন্ধটাও কিন্তু নাকে এসে বেশ লাগছে। দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। ২০১৯'এ নির্বাচন হবে এমন কথা সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে এই বলার মাঝে কেমন যেন রহস্যময় মিষ্টি হাসি লুকিয়ে আছে। কখনও কখনও সেই হাসির ঝলকটাও চোখে পড়ছে। সেই ঝলক বলে দেয় ২০১৭’র শেষ বা ২০১৮'র শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে চমক দেখাতে পারে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। এখন তারা যে কোনও উপায়ে ভোটের মাঠে  নামতে চায়। আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে কোনঠাসা করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিএনপিকে সাইডলাইনে বসিয়ে দিয়ে নিজেরাই ভোটের প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমে পড়েছে আগে ভাগে। দলের কাউন্সিলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল নির্বাচন বান্ধব কমিটি গঠন। তৃণমূলে বা ভোটের মাঠে গতি আনতে পারবে এমন সাংগঠনিক শক্তি তৈরি করা। আপাতদৃষ্টিতে এই মুহূর্তে বলা যায় আওয়ামী লীগ ভোটের কক্ষপথে ঠিক ভাবেই আবর্তিত হচ্ছে।
ভোটের জন্য মুখিয়ে থাকা বিএনপি তাদের কাউন্সিলে কমিটি ঠিক যুৎসই মতো করতে পারেনি। গুছিয়ে নিতে পারেনি দলকেও। এখনও এলোমেলো নেতৃত্বে চলছে বিএনপি। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ যখন থেকে নির্বাচনের জন্য দল গোছাতে শুরু করেছে, তখন থেকে বিএনপিও বলতে শুরু করেছে তারা নির্বাচনে যাবে। এখনও মুখে মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বায়না ধরে থাকলেও, ভেতরে ভেতরে নাকি তারা যেকোনও ভাবেই শর্তহীন নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। অর্থাৎ তারা ফিরে আসতে চায় সংসদীয় রাজনীতির প্রক্রিয়াতে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় যখন নির্বাচন কমিশন পুনগঠনের প্রসঙ্গ এলো, তখন বিএনপিও নড়েচড়ে বসেছে। তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন শনিবার ইসি পুনর্গঠনের ফর্মুলা দিলেন। ফর্মুলাতে চমক বা নতুনত্ব না থাকলেও, এর মধ্যে দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বা এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির ফিরে আসার আগ্রহটি আরও জোরদার হলো।
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সামনেই বিএনপি চেয়ারপারসন ফর্মুলাটি তুলে ধরেন। এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানের নজরকাড়া বিষয়টি ছিল, বহুদিন পর বিএনপির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের এতো বড় সমাবেশ দেখা গেল। মাঝখানে সরকারি দলের চাপের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ ছিল, মাঠে আসেনি, দলের কর্মসূচিতেও অনেক মুখের অনুপস্থিতি ছিল। জানিনা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি নির্বাচনি হাওয়া তাদের প্রকাশ্য হওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। তবে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সুশীল বা সাবেক আমলাদের দুই-একজনকে প্রথমবারের মতো বিএনপির ব্যানার তলে প্রকাশ্য অবস্থান নিতেও দেখা গেল। এই লক্ষণগুলো বলে দিচ্ছে ভোট আসছে, বিএনপি’র কাছেও তার ইঙ্গিত আছে।

সেই ইঙ্গিতের সবুজ ঝাণ্ডা আওয়ামী লীগও উড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সকল সাংগঠনিক সভায়, দলের বা সরকারের কর্মসূচিতেও বলা হচ্ছে ভোট আসছে, ভোটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহবানও আছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নানা দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করছে। সরকারকে সব দলের অংশগ্রহণে  নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে  ইতিবাচক মনে হচ্ছে। সরকার বিএনপিকেও আহবান জানাচ্ছে অতীতের মতো ভুল না করতে। নির্বাচনে আসতে। তবে দুই দলই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত সংসদীয় দলও এই বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে, তারা কথা বলেছে দুই পক্ষের সঙ্গেই। আপাতভাবে দেখা যাচ্ছে এবারের নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে আওয়ামী ও বিএনপির মধ্যে খুব একটা মতবিরোধ হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। যদিও বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ফর্মুলা দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য। নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সংবিধান অনুসারে। সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের এই পাল্টা বক্তব্যও আনুষ্ঠানিক। এক ধরনের অন্দরের আলাপ –আলোচনার পরই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কারণ দুইদলই নির্বাচনমুখী। অবশ্য নির্বাচন কমিশন নিয়ে দুই দল যে ফর্মুলাই দেখাক না কেন, কমিশন কতটা পারফরমেন্স দেখাবে, সেটা এই রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছের ওপরই নির্ভর করে অনেকটা। তবে সাহসী ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন কিন্তু দুইপক্ষের জন্যই উপকারী হয়। ব্যক্তিত্বহীন নির্বাচন কমিশনের দায় বিরোধী দলের চেয়ে সরকারকেই নিতে হয় বেশি। 

আপাতত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।  এই নির্বাচনে সরকারীদলকে যেমন উদারতা দেখাতে হবে, তেমনি বিএনপিকে দেখাতে হবে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা। তাদের দিক থেকে এই দুই গুণ দেখা গেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দূর বা নিকট ভবিষ্যত, যখনই হোক না কেন- তা কতোটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং উৎসব মুখর হবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
আজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছরআজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ