X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাঁওতাল, বাঙালি অথবা মানুষ

আমীন আল রশীদ
১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:০৯আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:১১

আমীন আল রশীদ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাদের গুলি করে মারা হলো, যাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে সুগার মিলের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হলো, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর মতো হাতকড়া পরিয়ে যাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো এবং অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে যাদের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়- তাদের পরিচয় কী? তারা কি সাঁওতাল, আদিবাসী, বাংলাদেশি না মানুষ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমাদের দেখা দরকার, সংবিধান এই মানুষগুলোর কী পরিচয় নিশ্চিত করেছে?
রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পরবর্তী বছরের ৪ নভেম্বর যে সংবিধান গৃহীত হয়, সেখানে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’
অবাঙালিদের তরফে এই বিধানের বিরোধিতা করা হয়েছিল তখনই; যারা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও অন্য ভাষার। বাংলা যেহেতু প্রথমত একটি ভাষা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে গড়েও উঠেছে এই ভাষার ভিত্তিতেই, কিন্তু তারপরও যখন দেশ স্বাধীন হয়ে গেলো এবং যখন এই ভূখণ্ডে বাঙালি ছাড়া আরও অনেক ভাষাভাষীর বসবাস রয়েছে, সুতরাং তাদের সবার অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেই সংবিধানের ওই বিধান তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটি না করে সব নাগরিককে বাঙালি বলে চিহ্নিত করায় পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন না, যাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রয়েছে, সাংবিধানিকভাবেই সেই জনগোষ্ঠীকে এই দেশের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা হলো।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ গ্রহণের একটি ব্যাখ্যাও সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন- ৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্ত্বাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’

বাস্তবতা হলো, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অনেক অবাঙালিও অংশগ্রহণ করেন। এমনকি উক্য চিং মারমা নামে একজন অবাঙালি বীরবিক্রমও রয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বাঙালি জাতির পাশাপাশি রক্ত ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিল সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, গারো, হাজংসহ নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ১ নম্বর সেক্টরের আওতায় সর্বপ্রথম ৫ মে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। এই দল গঠনের নেতৃত্ব দেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা। এটি পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শ্রী ত্রিপুরাকে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই কোম্পানির অধীনে গ্রুপ নং- ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪ এবং ৯৫ সংযুক্ত করা হয়।

২.

বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন বছরের মধ্যে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান সংবিধানের মূলনীতি বদলে ফেলেন। সেইসাথে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিস্থাপিত করেন। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা কমলো বলে ধারণা করা হলেও, আসলে জিয়াউর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে নয়, বরং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ফলে। আর তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ করেছিলেন বাঙালিত্বকে হেয় করে ভৌগলিক সীমারেখা বাড়ানোর জন্য। মনে রাখা দরকার, তার আমলেই দলে দলে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে পাহাড়ে পাঠানো হয় আদিবাসীদের ওপর চাপ সৃষ্টি তথা সেখানে বাঙালি বসতি গড়ার জন্য। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে জিয়াউর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে গিয়ে বাঙালি-অবাঙালিদের সমমর্যাদা নিশ্চিত করেছেন বলে মনে হলেও তিনি আসলে চেয়েছিলেন আদিবাসী বিশেষ করে পাহাড়ের অবাঙালি জনগোষ্ঠেীকে নিশ্চিহ্ন করতে।

জিয়াউর রহমানের আমলে ওই পঞ্চম সংশোধনীর পরে আরও ৯ দফায় সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি আসে ২০১০ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে যেখানে আবারও জাতীয়তাবাদে পরিবর্তন আনা হয়। ওই সময় সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তারা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেছে। কিন্তু দেখা গেলো বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে বাঙালি জাতীয়াবাদ পুনঃস্থাপিত করা হলেও সেখানে বাংলাদেশের জনগণ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ এখানে বাঙালি ও বাংলাদেশির একটা সমন্বয় ঘটানো হয় এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিয়ে এই রাষ্ট্রের অন্য ভাষাভাষী মানুষকেও নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।    

কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পরও এই অবাঙালি জনগোষ্ঠী যাদেরকে এখন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী  বলা যায় না, বরং বলতে হয় উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (অনুচ্ছেদ ২৩ এর ক), তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই একরকম পরাধীন। নানাবিধ রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার। বাহাত্তরের সংবিধানে এই জনগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা স্বীকার করে নেওয়া হলে দুই দশকেরও বেশি সময় সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হত না এবং ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সেই সংঘর্ষের আপাত নিরসন হলেও, রাষ্ট্র এখনও এই জনগোষ্ঠীর মানুষকে এ দেশের মানুষ বলে স্বীকার করে কি না-তা নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে।

এই সন্দেহ তীব্র হয় যখন গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে দেয় খোদ রাষ্ট্রীয় বাহিনী। যেখানে গুলি করে সাঁওতালদের মেরে ফেলা হয়। আবার ঘটনার পর মৃতদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। একজন মৃত মানুষের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শনেরও প্রয়োজন বোধ করে না। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অথবা কৃষক-তাদের হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হয় হাতকড়া পরিয়ে। গণমাধমে খবর হলে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় সেই হাতকড়া খুলে দেওয়ার জন্য। কারণ তাদের পরিচয় তারা বাঙালি নন, আদিবাসী নন, তারা সাঁওতাল। এবং এ কারণে সম্ভবত তারা মানুষ নন।

৩.

সংবিধানে যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়, তখন অন্য ভাষার নাগরিক, যারা সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্রের নাগরিক, তারা নিজেদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির বা সংখ্যালঘু বলে মনে করতে পারেন। ফলে গোবিন্দগঞ্জে সুগার মিলের জমি থেকে যখন সাঁওতালদের গুলি করে উচ্ছেদ করা হয়, তখন প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রের আরও হাজার হাজার একর জমি যেখানে অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে, সেসব জমিও কি তাহলে গুলি চালিয়ে উদ্ধার করা হবে? হয়তো হবে না। কারণ অবৈধ দখলদারদের একটা বড় অংশই আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান। তাদের উচ্ছেদ করার ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থাকলেও, সরকারের কোনও ইচ্ছা নেই। কিন্তু সাঁওলাদের উচ্ছেদ করা সহজ। কারণ তারা সংখ্যালঘু। কারণ জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায় তারা এই দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক নয়।  

প্রশ্ন হলো, জাতীয়তাবাদ কেন প্রয়োজন? সাতচল্লিশে দেশভাগ হয়েছিল এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। সেটি ছিল বৃহত্তর দুটি ধর্মের জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন। কিন্তু এরপরই সামনে আসে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন। ভাষার প্রশ্নে সেই জাতীয়তাবোধ জাতীয়তাবাদের রূপ নেয় এবং বায়ান্নতে এর জন্য রক্ত দিতে হয় বাঙালিকে। ফলে এই ভাষার পথ ধরেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও তীব্র হয় এবং সেই সিঁড়ি বেয়েই মুক্তি সংগ্রাম। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সেই জাতীয়তাবাদ যখন সংবিধানে ঠাঁই নিলো, তখন আমাদের পূর্বপুরুষেরা সচেতনভাবেই এই ভূখণ্ডের অবাঙালি জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করলেন। মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র রাখা হলেও সামাজিক সাম্য আর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন আমাদের দেখানো হয়েছিল, বস্তুত বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে সেখানে একটা বড় আঘাত হানা হয়। কারণ এর ফলে পাহাড়ে বা সমতলের অবাঙালি বাংলাদেশিরা নিজেদের মূলধারার বলে ভাবতে পারলেন না। ফলে এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যখন সংখ্যাগুরুদের হাতে মার মার খায়, যখন তাদের জমি দখল করা হয় তখন এট মনে হতেই পারে যে, এই কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।

জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র গঠিত হলো, সেখানের শাসকরা কখনোই ওই অর্থে জাতীয় ঐক্য সুসংহত করায় মনোযোগী হতে পারেননি। বরং সব সময়ই একটা বিভেদের দেয়াল খুব পরিষ্কার ছিল। ‘সংখ্যাগুরু’ ‘সংখ্যালঘু’ শব্দযুগল রাষ্ট্রীয়ভাবেই স্বীকৃত। ফলে যখন গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল আর নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তখন তারা জাতীয়তাবাদের শিকার কি না, সেই  প্রশ্নও উঠতে পারে।

ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট এবং সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিশ্ববাসী উগ্র জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ দেখেছে। সম্প্রতি গ্রিস সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সর্তক দিয়ে বলেছেন, কট্টর জাতীয়তাবাদ মানুষকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার বড় উদাহরণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তিনি বলেন, এ ধরনের জাতীয়তাবাদ প্রতিরোধ করা উচিত। 

তবে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু; বাঙালি কিংবা আদিবাসী অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাম যাই হোক, সবার আগে সবার পরিচয় যে মানুষ, সেই সত্যটি আমরা স্বীকার করছি কি না-সেটিও এখন বড় প্রশ্ন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে যেমন বলা হয়েছে যে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী’- তখন সুগার মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের গুলি করে উচ্ছেদ সংবিধানের এই ধারার অবমাননা কিনা- সেই প্রশ্ন তোলা এখন প্রতিটি গণতন্ত্রমনা মানুষের কর্তব্য।

লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ