X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আতাতুর্কের দেশে

আনিস আলমগীর
২২ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:০২আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৫৩

আনিস আলমগীর যখন স্কুলে পড়ি তখন অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁর ‘ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র’ পড়ে দেশটিতে সফরের আকাঙ্ক্ষা জেগে ছিল। কামাল আতাতুর্ক নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আমাদের প্রজন্মকে দেশটি সম্পর্কে আরও উৎসাহী করে। আর অতি সম্প্রতি সুলতান সুলেমানের কাণ্ডতো চলছে দেশজুড়েই, মনে হচ্ছে দেশটি বাংলাদেশিদের কাছে আতাতুর্কের দেশের চাইতে এখন সুলেমানের দেশ হিসেবে বেশি পরিচিত। ফলে দেশটি সফরের উপলক্ষ যখন এলো একবাক্যে হ্যাঁ করেছি। তবে ইস্তাম্বুল নয়, আমার সফর শুরু হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের আনতালিয়া দিয়ে।
তুরস্ক সরকার এখানে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রায় ৪৫টি দেশ থেকে ১২৫ জন সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন। টিভি সাংবাদিকতা, প্রোডাকশন, নেতৃত্ব, ব্রডকাস্টিং, ক্যামেরা-লাইটিং, ডকুমেন্টরি, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, মার্কেটিং, প্রশাসনিক দিক- মোটকথা টিভি সম্পর্কিত সব বিষয় এই কর্মশালার বিষয়। আর জানা টিআরটি বা টার্কি রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন করপোরেশনের কার্যক্রম।
যেখানে আমরা আছি, আনতালিয়া নামটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাঠকের হয়তো চোখে পড়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রিসোর্ট শহর আনতালিয়া এবং কেমের শহরকে উদ্দেশ্য করে একটি পাহাড়ি অঞ্চল থেকে দুই/তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল। এই হামলার কারণও জানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং কুর্দিশ বিদ্রোহীদের হামলার স্বীকার হচ্ছে তুরস্ক। ধারণা করা হচ্ছে এটা তাদেরই কাজ।

আনতালিয়া মূলত রিসোর্ট এলাকা, দেশের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। এটাকে বলা হয় প্যারাডাইস অন আর্থ বা পৃথিবীর স্বর্গ। গত বছর এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-২০ সম্মেলনও, যেখানে ওবামা-পুতিন  বৈঠক করেছেন।

ইউরো-এশিয়ান দেশ তুরস্ক দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আনাতোলিয়া উপদ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত। চারপাশে এর আট প্রতিবেশী। গ্রিস, বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ইরান, ইরাক এবং সিরিয়া। তুরস্কের এই আনাতোলিয়া ইতিহাস বিখ্যাত হলেও স্থানীয়রা দেখলাম আনাতোলিয়া নামটি সঙ্গে পরিচিত নয়। ওরা এটাকে ডাকে আনাডোলু। আনাতোলিয়া বসফরাসের পূর্বে, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই অঞ্চলটিকে এশিয়া মাইনর হিসেবে অভিহিত করা হতো। মানে ছোট্ট এশিয়া।

১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে অটোমান বা ওসমানিয়া সম্রাজ্য শুরু হয়েছিল আনাতোলিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকাকে নিয়ে। এই সম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ হচ্ছে ১৬ শতাব্দী, বিশেষ করে সুলতান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট বা আজকের বাংলাদেশি টিভি দর্শকদের কাজে পরিচিত সুলতান সুলেমানের আমল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিধ্বস্ত করে তুরস্কের সাম্রাজ্য, পরাধীন করে তুরস্ককে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই আনাতোলিয়াকে কেন্দ্র করে কামাল পাশা তুরস্ককে রক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই পক্ষের এক পক্ষ ছিল তুরস্ক জার্মানি আর অপর পক্ষ ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি। তাদেরকে বলা হত মিত্র শক্তি। পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মিত্র শক্তিতে যোগদান করেছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির কয়দিন আগেই তুরস্ক মিত্র শক্তির হাতে পরাজয় বরণ করেছিলো।

তখন তুরস্ক বা ওসমানিয়া খেলাফতের খলিফা ছিলেন খলিফা ওয়াহিদ উদ্দীন। মিত্রশক্তির সঙ্গে পৃথক সন্ধিও স্থাপন করেছিলো তুরস্ক। ভার্সাই চুক্তি হয়েছিলো জার্মানির সঙ্গে। ভাসাই চুক্তিতে তুরস্ককে পক্ষ করা হয়নি। তবে ভার্সাই চুক্তি সম্পাদনের সময় কামাল পাশা উপস্থিত ছিলেন। ভিয়েতনামের বিপ্লবীনেতা হো চি মিনও ভার্সাই চুক্তি সম্পাদনের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি এর আগে থেকেই প্যারিসে অবস্থান করছিলেন।

তুরস্কের কামাল পাশা এবং ভিয়েতনামের হো চি মিনকে কেন ভার্সাই চুক্তি সম্পাদনের সময় উপস্থিত রাখা হয়েছিলো তার কোনও বিস্তারিত খবর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখেনি। অবশ্য হো ছিলেন ফরাসিদের জানদুশমন আর কামালতো মিত্রশক্তির সব পরিকল্পনাকে বানচাল করে দিয়েছিলেন। ওসমানিয়া খেলাফতের খলিফা ওয়াহিদ উদ্দীন ছিলেন মিত্রশক্তির হাতের পুতুল। তাকে দিয়ে অনেক কিছু করানো সম্ভব ছিল কিন্তু কামাল পাশা ছিল পথের কাঁটা। সুলতানের অনেক কথাই তিনি শুনতেন না।

তুর্কি সাম্রাজ্য ভাগ করে ফরাসিরা আর ব্রিটেন নিয়ে গেছে। বলকান যুদ্ধের সময় হাতছাড়া হয়েছে বলকান এলাকা। এখন নিতে চায় তুরস্কের মূল ভুখণ্ড। বসফরাস প্রণালী আর ইস্তাম্বুল প্রতি প্রচণ্ড লোভ রাশিয়ার। কৃষ্ণ সাগর থেকে ভূমধ্য সাগরে যেতে বসফরাস প্রণালী খুবই প্রয়োজনীয় সংযোগ রাশিয়ার জন্য। ইতালিও চায় ইস্তাম্বুল। ককেসাস অঞ্চলে মিত্রশক্তি একটি আর্মানি প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেছিলো, কথা ছিল আনাতোলিয়া আর্মানি প্রজাতন্ত্রকে দিয়ে দেওয়া হবে। আনাতোলিয়ার তুর্কিদের সঙ্গে আর্মেনিয়ানদের কখনও সম্পর্ক ভালো ছিল না। এ নিয়ে আনাতোলিয়ার তুর্কিদের উদ্বেবেগের সীমা ছিল না।

সুলতান ও ইংরেজদের সন্দেহভাজন হওয়ায় কামাল পাশাকে ইস্তাম্বুল থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তখন সামরিক বাহিনীর ইন্সপেক্টর জেনারেল নিযুক্ত করে কামাল পাশাকে আনাতোলিয়ায় প্রেরণ করা হয়। কামাল পাশা আনাতোলিয়া এসে তুর্কি সৈন্যবাহিনীকে সুসংগঠিত করেন এবং কৃষকদেরকেও ইংরেজদের হাত থেকে তুরস্ককে রক্ষা করার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন।

তখন ফরাসি ও ইংরেজ সেনারা বিশ্বযুদ্ধে একনাগাড়ে ৪ বছর যুদ্ধ করে রণক্লান্ত হওয়ায় তারা আর কোনও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইংরেজ আর ফরাসিদের পক্ষে যুদ্ধ চালানো সম্ভব হয়নি। ইংরেজ আর ফরাসিরা সৈন্যবাহিনী ভেঙে দেয়। আর গ্রিককে তুরস্ক দখলের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জজ উৎসাহ প্রধান করে। তখন গ্রিক আর তুরস্ক বাহিনীর মাঝে যুদ্ধ হয়। গ্রিক স্মার্না দখল করে। আনাতোলিযার সামরিক বাহিনী কামালের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় তারা আর কখনও ইংরেজ ও খলিফার কোনও আদেশ মান্য করেননি।

খলিফার অনুগত আলেমেরা তখন খলিফার নির্দেশে ‘খলিফা সেনা’ গঠন করে এবং তা নিয়ে কামাল পাশার বিরুদ্ধে ময়দানে প্রতিরোধের তৎপরতায় অবতীর্ণ হন। কামাল ও তার বাহিনীকে কাফের ঘোষণা করে। খলিফার পক্ষ থেকে কামাল পাশা ও তার বাহিনীকে বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়। আলেমেরা তা সারাদেশ ব্যাপী প্রচার করে। দৃশ্যত তখন তুরস্কে গৃহযুদ্ধই আরম্ভ হয়েছিলো। ধর্মীয় কোনও শক্তি কামালের পক্ষে ছিল না। তারা কামালকে ইংরেজ ও খলিফার পরামর্শে ধর্মত্যাগী বলে ঘোষণা করে।

কামাল ও তার বাহিনীকে হত্যা করা ফরজ বলে ফতোয়া প্রদান করা হয়। তখন কামাল পাশা ও তার বাহিনী কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলো। একদিকে ধর্মীয় প্রতিরোধ আর অন্যদিকে গ্রিকদের  সঙ্গে যুদ্ধ। ১৯২০ সাল পর্যন্ত কামাল পাশার বাহিনী বহু যুদ্ধে গ্রিকদের হাতে পরাজিত হয়েছিলো। এমত অবস্থায় সামরিক সাহায্য নিয়ে রাশিয়া কামালের পক্ষ অবলম্বন করে এবং কামাল পাশার বাহিনীকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করে।

সাকরিয়া নদীর তীরে যে যুদ্ধ হয় সে যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে কামাল-বাহিনী গ্রিক বাহিকে প্রচণ্ড বাধা প্রদান করে এবং দীর্ঘস্থায়ী একযুদ্ধের পর গ্রিক বাহিনী পরাজিত হয় এবং পালিয়ে যায়। সাকারিয়া নদীর তীরের এ যুদ্ধে গ্রিকরা পরাজিত হওয়ার পরই সবকিছুর দিক পরিবর্তন হয়ে যায়।

ফ্রান্স কামালকে স্বীকার করে নেয় এবং সন্ধিস্থাপন করে সোভিয়েতও কামালের সঙ্গে অন্য একটি সন্ধি স্থাপন করে। ইংরেজরা ইস্তাম্বুলে খলিফাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। অবশেষে ১৯২৩ সালের জুলাই মাসে লুজো সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। তখনও রাশিয়া ও ফ্রান্স কামাল পাশাকে সমর্থন করে। ইস্তাম্বুল ছেড়ে ইংরেজরো চলে যায়। খলিফাও লন্ডনে ব্রিটিশ জাহাজে করে পালিয়ে যায়। তুরস্কের সর্বত্র কামাল বাহিনীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৩ সালে তুরস্কে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠালাভ করে। কামাল পাশা প্রেসিডেন্ট হন। আনকারায় রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে তুরস্ক তার সম্পূর্ণ  সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেলে। মূল তুরস্কের ভাগ ভাটোয়ারাও প্রায় নিশ্চিত করে পেলেছিলো ফ্রান্স ও ব্রিটেন। তখন খলিফা ছিলেন ইংরেজের হাতের পুতুল। তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো বিভিন্ন সন্ধি-চুক্তিতে দস্তক্ষত করার জন্য। কামাল আতাতুর্কের অভ্যূদয় না হলে আজকের তুরস্কের কোনও অস্তিত্বই থাকতো না।

মুসলিম নেতাদের তথা আলেম সমাজ ছিলেন খলিফা ও ইংরেজদের পক্ষে এ কারণে পরবর্তী সময়ে কামাল আতাতুর্ক তাদের সঙ্গে কোনও সমঝোতাই করেননি। ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন শুধু তুর্কি জাতিকে নিয়ে এক জাতির একটা রাষ্ট্র গঠন করতে। সে জন্যই গ্রিকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তিনি আনাতোলিয়ার সব গ্রিককে গ্রিসে পাঠায়েছিলেন আর গ্রিসে বসবাসরত সব তুর্কিদেরকে আনাতোলিয়ায় নিয়ে এসেছিলেন। গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এটা ছিল বিরাট মানব-বিনিময়। প্রায় ১৫ লক্ষ লোক এ পরিকল্পনার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

২১ নভেম্বর মিডিয়া কর্মশালায় টিআরটি চেয়ারম্যান সে উদাহরণ দিয়ে তুর্কিদের সহনশীলতা আর গ্রহণ-বর্জনের উদারতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য তার বক্তৃতার  বড় অংশজুড়েই ছিল গত মধ্য জুলাই এরদোগানকে ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে হটানোর বিষয়টি। সাংবাদিকরাও আগ্রহী ছিলেন অসফল ক্যু-এর নানা দিক জানতে।

যাক, আতাতুর্ক অর্থ পিতা। বিশ্বের দুইজন জাতির পিতা নিজ দেশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সময়ব্যাপী যুদ্ধ করেছিলেন। একজন হচ্ছেন কামাল আতাতুর্ক আর আরেকজন হলেন আমেরিকার জজ ওয়াশিংটন।

আশা করছি, তুরস্কের সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে একটি লেখা লিখবো।

(আনতালিয়া, তুরস্ক থেকে)

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ