X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

একদিন বলতে হবে, দুর্নীতিও চোখে পড়ার মতো

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৪১আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৪৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আগামী ৯ ডিসেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সংহতি (ইউএনসিএসি) ঘোষিত এ দিনটি ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সুশাসনের প্রধান অন্তরায় এই দুর্নীতি। আমাদের আয় বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান। তবু দুর্নীতি যারা মাপে যেমন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, তাদের হিসাব মতো বিশ্বের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান বেশ পাকাপোক্ত।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনকে আমরা দেখছি খানিকটা সক্রিয় হতে। আমলা ও রাজনীতিককেও জেলে ঢোকানোর নজির স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এখনই তাতে আনন্দ করার কারণ নেই। টেকনাফের বদি খুব অল্প সময়েই আবার বেরিয়ে এসেছেন জেল থেকে।
যে বিষয়টি চিন্তার কারণ, তা হলো আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে আমাদের সমাজের যে মাথাব্যথা থাকার কথা, তা আর নেই তেমন একটা। বরং দুর্নীতিবাজই বেশি সমাদৃত। আমাদের কাছে বেশি আলোচনার বা গর্বের হলো উন্নয়ন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, তবে উন্নয়ন মানেই দুর্নীতিকে মেনে নিতে হবে? যদি তা-ই হয়, তাহলে দুর্নীতি সম্পর্কে সমাজের নৈতিক অবস্থান বা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এভাবে পাল্টে যাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী ফল কী দাঁড়াবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর জটিল। তবে এটুকু খুব সহজে বোঝা যায় যে, সব রকমের দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা সৎ মানুষের মর্যাদা সমাজে কমছে। সমাজ তাকে হয় ব্যর্থ মনে করে, নয়তো তাকে ভাবে তার যোগ্যতা নেই। যেনতেনভাবে, যেকোনও খারাপ উপায়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়াই এখন বড় যোগ্যতা আর দক্ষতা। এমনটা না করতে পারলে নিজের স্বজনরাও নাকি তাকে সম্মান করে না!  

দুর্নীতি সম্পর্কে সমাজের নৈতিক অবস্থান এভাবে ভেঙে যাচ্ছে। আর এই নষ্ট করে দেওয়ার খেলায় অনেকেই পারদর্শী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূল্যবোধ তৈরির ব্যাপারে কিছু প্রচেষ্টা আছে ঠিকই, তবে সমাজের অনীহাও অনেক। প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত বিত্ত প্রদর্শনের এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় সব হারিয়ে ফেলছি আমরা।

উন্নয়ন হলে কিছু বৈষম্যও মেনে নিতে হয়। নিম্নআয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটেছে। দেখা দরকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুফল কতটা পাচ্ছে। সম্পদ যেন ক্রমেই একটা ক্ষুদ্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের অর্জনের পরও দিনে এক ডলারের কম আয় করে এমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দেশে এখনও ৪৩ শতাংশ।

আর এই বৈষম্যের কথা ভুলে গিয়ে এমনভাবে বলা হচ্ছে যেন, উন্নয়ন মানেই দুর্নীতি মেনে নিতে হবে। উন্নয়ন ও দুর্নীতি হাতে হাত ধরে চলার পর সামান্য উন্নয়ন হলেও দুর্নীতি ব্যপ্তিলাভ করে বেশি। এই পরিস্থিতির দিকে নজরদারিটা না থাকলে অনেক উন্নয়নই মহাসড়ক থেকে বিপথে চলে যেতে পারে।

রাস্তা হলে, স্কুল হলে, হাসপাতাল হলে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে মানুষ এসব দুর্নীতি নিয়ে ভাবে কম। ফলে দুর্নীতির একটা সামাজিক বৈধতা দাঁড়িয়ে যায়। উন্নয়ন ও নীতির দৌড়ে উন্নয়নের দিকেই পাল্লা ভারী। আর এটাই ভোটের রাজনীতির সমীকরণ মনে করেন রাজনীতিকরা। তবে উন্নয়ন করেও ভোট না পাওয়ার নজির আছে অনেক এবং এদেশেই আছে। তাই সুশাসনের প্রধান অন্তরায় এই দুর্নীতি।

সম্প্রতি দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি চাল নিয়ে যা হচ্ছে, তাকে বলা যায় বিত্তবানদের দুর্নীতি। এই ধরনের কাজ সরাসরি দরিদ্রদের স্বার্থের পরিপন্থী। দারিদ্র্য নিয়েই যদি দুর্নীতি হয় তাহলে উন্নয়ন কি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে?

সরকারি দলের বড় ও পাতি নেতারা যদি ষড়যন্ত্র করে গরিবদের প্রাপ্য নিজেদের ঘরে নিয়ে যান এবং তার নগ্ন প্রদর্শনীও চলতে থাকে তখন জনগণ চুপ করে থাকলেও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে প্রতিশোধ নেওয়ার। এ ধরনের কাজে কিছুটা ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। কিন্তু যদি দরিদ্র পরিবারের একটা বড় অংশই প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় আর এর জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনা হয়, তাহলে জনকল্যাণের নামে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়। সেই দুর্নীতি শেষ বিচারে উন্নয়নের পথেও বাধা হবে।

যেমন করে আমরা রাস্তাঘাট করছি, ফ্লাইওভার করছি, নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করছি, তাতে একদিন সবাই বলছে উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু একের পর এক ব্যাংকের টাকা লোপাট করে দেওয়া, অর্থ বিদেশে পাচার করা, সরকারি পরিদফতরে ঘুষের বাণিজ্যের লাভ করা দেখে মনে হচ্ছে একদিন বলতে হবে এদেশের দুর্নীতিও চোখে পড়ার মতো।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ