X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্যাশা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৪৭আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৫৬

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বঙ্গভবনে এখন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিছুটা ব্যস্ত। কিছুটা মিডিয়ার লাইমলাইটে। ইতোমধ্যে বৈঠক শেষ করেছেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। একটি বিএনপি, অন্যটি জাতীয় পার্টি। বিষয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।
এই সংলাপ দেখে পুরোনো দুটি সংলাপের কথা মনে পড়ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে কমনওয়েলথ্ থেকে আসা স্যার নিনিয়ানের আলোচনার কথা মনে আছে অনেকেরই। তবে তার চেয়েও বেশি মনে আছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও বিএনপি’র মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূইয়ার মধ্যকার সেই বিখ্যাত সংলাপের কথা। দুটো সংলাপই কোনও ফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান খুব কমই হয়েছে।
এমন এক বাস্তবতায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নেওয়া উদ্যোগকে বিচার করাই শ্রেয় হবে। রাষ্ট্রপতি পদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই বিভিন্ন মহল থেকে প্রত্যাশার বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু কতটুকু পারবেন তিনি? কিংবা কতটুকু করবেন আসলে?
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে সেই বিতর্কের অবসান হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই ব্যবস্থার দাবি থেকে সরে এসে বিএনপি’র পুরো মনোযোগ এখন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের দিকে। একটি দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন সবার চাওয়া। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই এ বিষয়টিতো কোনোদিন গুরুত্ব দেয়নি। আজ বিএনপিসহ ২০ দল ভালো নির্বাচন কমিশনের দাবি করছে, কিন্তু তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন এ বিষয়টি এখন যেভাবে ভাবছে সেভাবে না ভেবে আজ্ঞাবহ কমিশনই চেয়েছিল। আজ পর্যন্ত একটি আইন করা সম্ভব হয়নি কমিশন গঠনের জন্য। এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক দলগুলোরই, বিশেষকরে বড় দুই দলের।  

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে। নতুন যে কমিশন গঠিত হবে, তারা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সেই নির্বাচন ২০১৮ বা ২০১৯, যে বছরেই হোক না কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে আরেকটি নির্বাচন করা কঠিন যেটিতে বিএনপি অংশ নেবে না। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষেও আরেকটি নির্বাচন বর্জন করা সম্ভব হবে না। বর্জন করে বিএনপি সহিংস আন্দোলন করেও সরকারকে টলাতে পারেনি। এটি বাস্তবতা। তাই আগামী নির্বাচন উভয়ের জন্যই বড় পরীক্ষা। দেশে দীর্ঘদিন সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক অচলাবস্থা নেই। বিএনপি ও তার মিত্র জামাতে ইসলামী পেট্রোল বোমাসহ বড় ধরনের সহিংস আন্দোলন এখন আর করতে পারছে না। তবে সামগ্রিকভাবে সবখানেই অস্বস্তি আছে। তাই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সবার আকাঙ্ক্ষা। আর সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নেই প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য কমিশনের।

রকিবুদ্দিন কমিশন চলে যাচ্ছে। এই কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হয়েছিল। কিন্তু বিতর্ক কখনও পিছু ছাড়েনি এই কমিশনকে। যারা বর্তমান সংলাপে আশার আলো দেখছেন তারা মনে রাখবেন নিশ্চয়ই যে, এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। ওই সংলাপের আলোকে তিনি একটি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হয়েছে বা তাকে বিতর্কিত করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় আলোচনায় ছিল। আর এটি করতে গিয়ে বিচার ব্যবস্থাও বিতর্কিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি কখনও তেমন গুরুত্ব কখনও পায়নি। এখন পেতে শুরু করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অতি সম্প্রতি ১৩ দফা প্রস্তাবসংবলিত নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ প্রস্তাবনা পেশ করেন। এসব দফার মূলকথা হলো, সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন।

আমাদের রাজনীতিতে মুখ দেখাদেখি বা কথা বলা বন্ধের যে সংস্কৃতি আছে, তার মাঝে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই সংলাপ কিছুটা হলেও নতুন বার্তা দেয়। কিন্তু চূড়ান্তভাবে কতটা ফলদায়ক সে নিয়ে সংশয় আছে। আর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সার্বভৌম ক্ষমতা ও প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা আজীবনের। প্রায় সব সময়ই কমিশন এখানে তিক্ত বিতর্কাধীন। খালেদা জিয়া ১০ জন সম্মানীয় ব্যক্তির একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। যে রাজনৈতিক অশান্তির আবহের মাঝে কাজ করতে হয়, তাতে আগামীতে কোনও যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে এসে দায়িত্ব নিতে চাইবেন কিনা সন্দেহ আছে।

রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেছেন। বঙ্গভবন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অনুসন্ধান কমিটি গঠন ও নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়ক হবে। কিন্তু এর মধ্যেই দেখলাম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রয়াত জিল্লুর রহমান যখন তাদের ডেকেছিলেন, তখন তারা গিয়েছিলেন, তখন তাদের মনমতো হয়নি। সালিশ মানি, তালগাছটা আমার—এই যদি বিএনপির নীতি হয়, তাহলে এ সংলাপ সফল হবে না। ’

এই সংশয় আর অবিশ্বাসই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তবুও ভালো কিছুর প্রত্যাশা করেই জীবন এগিয়ে চলে। জীবন দ্বান্দ্বিক। রাজনীতি দ্বন্দ্বমূলক। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু শুধু দ্বন্দ্বই থাকবে, আর কিছু থাকবে না, জনজীবনের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে কেবল সংঘাত চলবে, আর কিছু চলবে না— এমন চিন্তা সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা নয়। বাংলাদেশের জনজীবন দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতির বশীভূত। আর সেটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনীতি নয়, ক্ষুদ্র দলতান্ত্রিক রাজনীতি।

আমাদের রাজনীতি এক নিরন্তর লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে। এখানে সব সমস্যার সমাধান খোঁজা হয় রাজপথে। এমন একটি খ্যাপা মানসিকতা পরম যত্নে বাংলার বুকে বপন করা হয়েছে। সহিংসতাই এই সমাজ এবং তার আশ্রিত রাজনীতির পরম ধর্ম হয়ে উঠেছে। মানুষ শান্তি চায়। চায় বলেই যেকোনও ধরনের আলোচনাকে স্বাগত জানায়। সরকারকে বদলাতে হবে, বদলাতে হবে বিরোধীদেরও। যে কমিশন হবে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে সেই প্রত্যাশা যেমন থাকবে, তেমনি কমিশনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করাই হবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে স্বাভাবিক ও সঙ্গত আচরণ। 

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
মিয়ানমারের বিমান হামলায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
মিয়ানমারের বিমান হামলায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
ইনজুরিতে আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেসির  
ইনজুরিতে আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেসির  
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ