X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এই সময়ের রাজনীতি

আনিস আলমগীর
২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৬আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৪

আনিস আলমগীর মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেখতে গিয়েছেন। তার এ সিদ্ধান্তের জন্য তাকে সাধুবাদ। ওবায়দুল কাদের একটা ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খাঁন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে উপস্থিত হয়ে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ভালো কাজ কালজয়ী ইতিহাস রচনা করে।
রাজনৈতিক নেতারা সবাই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে উদগ্রীব। বাংলাদেশে রাজনীতি এত ব্যাপক যে আর কোনও নিরপেক্ষ লোক অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। যাহোক, এমন পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ লোক না হোক অন্তত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার দৃঢ়চেতা লোককে দিয়ে কমিশন গঠন করা দরকার। এ বিষয়টা যেন সরকার উপেক্ষা না করেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ হয়তো অনেক আত্মতুষ্টিতে আছে কিন্তু বিএনপি যখন রাজনীতির মাঠে কোমর ভেঙে পড়ে আছে তখন তার এক অখ্যাত প্রার্থী লাখের কাছাকাছি ভোট পায়- সেটি কি কিছুই নয়? আমি ধন্যবাদ জানাই বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে তারা এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রণে ভঙ্গ দিয়ে মাঝপথে চলে যাননি। ১৯৩৫ সাল থেকে যে জাতি নির্বাচনের মাধ্যমে তার শাসক নির্বাচন করে আসছে তাকে অন্য পথে চালাতে চেষ্টা করা কঠিন ভুল।
সরকার যেখানে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মুলা ঝুলিয়ে রেখেছিল সেখানে জোরজবরদস্তি করে সরকার হটানোর চেষ্টাতো অবান্তর ছিল। ১৯৯৬ সাল আর ২০১৩ এক ছিল না। ৯৬ সালে বিএনপিকে একটা নতুন নির্বাচন দেওয়ার পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে সরকার থেকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হয়েছিলো। কারণ সব দল তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটা পটভূমিকা তৈরি করতে পেরেছিলো। তা না মানা বিএনপির জন্য কঠিন ছিল। না মানলে তারা ইজ্জতের বস্ত্র হারাতো। সেই তুলনায় ২০১৩ সালের বিএনপি জামাতের আন্দোলনটা বাড়ম্বর ছিল।
অহেতুক বাড়ম্বর জাতি সহজে মানতে চায় না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিএনপি কোনও বন্ধুও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বিজয়ীরা সব নিয়ে যায় যেখানে বিজিতরা কিছুই পায় না। অনুরূপ ভুল পরিক্রমায় কোনও সুসংগঠিত দলও পতিত হলে তাকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে কালক্ষেপণ করতে হয়। বিএনপির চলছে এখন এমন একটি ক্রান্তিকাল। এই ক্রান্তিকালে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে সংগঠনই বিলুপ্তির পথ ধরবে। সুতরাং বিএনপিকে এখন বিচক্ষণ হতে হবে।
খালেদা জিয়াকে মিডিয়ার উস্কানি সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের গণমাধ্যমগুলো সরকারের কোনও ত্রুটিতে বিরোধীদল মারমুখী আন্দোলনে না দেখলে বলে বসে বিরোধীদলের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। বিরোধীদল কিছুই করতে পারলো না। এমন কোনও উস্কানিতে বিএনপির না যাওয়াই উত্তম। কারণ স্বাধীন দেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক দিন আন্দোলন করতে হয় না। সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনই চূড়ান্ত বিষয়।

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের পর বেগম জিয়া মুখ খুলেননি। এটি খুবই যথাযথ কাজ করেছেন। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ অনেকে অনেক কথা বলেছেন কিন্তু কোনও কথাই যথাযথ কথা ছিল না। বাজে কথার দোকানদারী।

নারায়ণগঞ্জের নিবাচনে আইভী জিতেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। সাখাওয়াত হেরেছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচন করলেও না জেতার সম্ভবনাই ছিল বেশি। গত নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অপমানবোধ করেছেন, আশাহত হয়েছেন- সুতরাং এবার তিনি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়েছিলেন। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত অপরিচিত হলেও প্রচুর ভোট পেয়েছেন। অবশ্য সবই মার্কার ভোট।
বেগম জিয়ার পক্ষে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোটের হিসাব-নিকাশ ও নীতি নির্ধারণের জন্য এবং কৌশল নিরূপণের জন্য এই নির্বাচনটা খুবই সহায়ক হবে। তিনি আগেও বেশ কয়েকটা নির্বাচন নিজেই পরিচালনা করেছেন। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সম্পর্কে সূক্ষ্ম কারচুপির বা স্থুলকারচুপি যে যাই বলুক না কেন গণমাধ্যমের মানুষ হিসেবে বলতে পারি যে নির্বাচনটা সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হয়েছে। অনুরূপ একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন থেকে বুদ্ধিমান নেতারা আগামী সাধারণ নির্বাচনের কৌশল স্থির করলে আমি মনে করিয়ে হয়ত ঠকবেন না।
আওয়ামী লীগের জন্য কিন্তু এ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনও কৌশল নির্ধারণ সঠিক হবে না। কারণ এ নির্বাচনে দলের চেয়ে আইভীর ভূমিকা বেশি প্রসারিত বলে মনে হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের পৌরসভার নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কিন্তু শামীম ওসমানের মরহুম পিতা শামসুজ্জোহা সাহেবের ঘরানার লোককে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আইভীর পিতা মরহুম আলী আহাম্মদ চুনকা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে আলী আহাম্মদ চুনকা বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন।
গতবারের মেয়র নির্বাচনেও আইভী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। আমি অনেক ভোট দেখেছি কিন্তু প্রচারণার সময় প্রার্থীকে পুষ্প ছিটিয়ে স্বাগত জানাতে দেখেনি। এ বিষয়টা আইভীর বেলায় লক্ষ্য করেছি। কিন্তু আইভী বা তার পিতা মরহুম চুনকা কেউই নির্বাচিত হওয়ার পর দল ছেড়ে যাননি। তারা আওয়ামী লীগই ছিলেন। বঙ্গবন্ধু চুনকাকে নির্বাচিত হওয়ার পর নাকি বলেছিলেন বাপের বেটা চুনকা।
শেখ হাসিনাও গত মেয়র নির্বাচনের পর নাকি আইভীকে বাপের বেটি আইভী বলে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। আইভীর পরিবারই নারায়ণগঞ্জ শহরের আদিলোক। সাখাওয়াতের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ আর খান সাহেব ওসমান আলী সাহেবের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। এ বিবেচনায়ও আইভী যে কিছু ভোট পায় না তাও নয়।
চোখের পলকে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের বিচক্ষণও এসে উপস্থিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রাচীন দল তার রয়েছে কৌশলী সভানেত্রী। তাকে পরামর্শ দেওয়া সাজে না। তবে কখনও কখনও হাতিরও পা পিছলায় সে জন্য বলা।

কুমিল্লার শহর আওয়ামী এলাকা বলে মনে হয় না। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও নির্ধারিত ছিল। সীমানা ঠেলাঠেলিতে স্থগিত রয়েছে। আমার মনে হয় কুমিল্লা শহরের নির্বাচনটা নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ একটা বৈরি এলাকায় তার জনপ্রিয়তা যাচাই করা দরকার। তার ফলাফল দেখে তখন সংগঠন শক্তিশালীকরণ, ভোটের কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। এ বিষয়টা দেশের মানুষের উপলব্ধিতে পৌঁছাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী খুবই ব্যস্ত মানুষ সুতরাং সব কিছু নিজের গোচরে রাখা সম্ভব নয়। জেলায় জেলায় কিন্তু সাংঠনিক কাজ কিছুই হচ্ছে না।

নির্ধারিত সময় নির্বাচন হলে টানা ক্ষমতায় থাকার একদশক পূর্ণ হবে। আমাদের দেশের ভোটারদের ‘এন্টি ইনকামভেন্সি’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেতানোর পরও ব্রিটেনবাসী ১৯৪৫ সালের নির্বাচনে চার্চিলকে ভোট দেয়নি। আওয়ামী লীগকে তৃতীয় ধাপে ক্ষমতায় থাকলে হলে কর্মী বাহিনীকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতির কাজ আরম্ভ করতে হবে। আগামীকাল থেকে করবো এ কথা বলার কোনও অবকাশ নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ