X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরের নিমন্ত্রণ: ২০১৭

তুষার আবদুল্লাহ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১৭আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:২৪

তুষার আবদুল্লাহ জাদুকাঁটা নদী সংকীর্ণ হয়ে আছে। অপেক্ষা আষাঢ়-শ্রাবণে নিজের রূপে ফিরে আসার। এখন তার দুই কূলে যে চর জেগে আছে, সেখানেই দাঁড়িয়াবাঁধা খেলছিল লাউড়ের গড় গ্রামের কিশোররা। বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে আমি ওদের খেলা দেখছিলাম। ফিরে যাচ্ছিলাম নিজের ফেলে আসা দিনে। ঢাকাতেই বাসার পাশের খালি জমিতে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়াবাঁধা খেলার স্মৃতিতে কুয়াশা জমে আছে। সেই দিন নেই। কবেই চলে গেছে। উঁচু দালান উঠেছে সেই জমিতে। কিন্তু মনটা এখনও কেন ঘাসের কাছাকাছি? সময় যাচ্ছে, আমি যাচ্ছি নিশ্চিত কোনও গন্তব্যের দিকেই। কিন্তু তারপরও যেদিনটি ছেড়ে যাচ্ছে, তার প্রতি আমাদের মায়া পড়ে থাকে। ভাবি চলে যাওয়া দিনটির মতো সুস্বাদু দিন বুঝি আর আসবে না। আসছে দিন নিয়ে সংশয়ে থাকি, উদ্বেগে থাকি। আসলে প্রতিটি দিনইতো নতুন র‌্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে আসে। তাকে বছরের পরিসরে বেঁধে রাখি হয়তো অংক কষার সুবিধার্থে।
দাঁড়িয়াবাঁধা খেলায় যখন বিরতি তখন নিচে নেমে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলি। জানতে চাই কেমন গেল বছর? যেন আকাশ থেকে পরী এসে নামলো। আমার প্রশ্নে ওরা বিস্মিত। আসলে আমরা শহরের মানুষগুলো যেভাবে অংক করে চলি, গ্রামের মানুষ সেই অংক করে জীবন চালাতে রাজি নয়। কিশোররা জানালো ভালোই গেছে তাদের দিন। তবে এবার কেন যে এই পৌষেও শীত পড়ছে না তা নিয়ে তারা চিন্তিত। নদীতে, হাওড়ে নদীতে কেন মাছ পড়ছে না আগের মতো, এনিয়ে ওরা উদ্বিগ্ন। জানতে চেয়েছিলাম নতুন বছর কেমন দেখতে চায় ওরা- সবাই হেসে ফেলে একসঙ্গে। দুনিয়ার সব দিনই নাকি সমান। নতুন-পুরাতন বলে কিছু নাই। কিশোরদের কাছ থেকে বিন্নাকুলি বাজারে আসি। লাউ, শিম, টমেটো নিয়ে বসেছে কৃষকরা। সামনের চায়ের দোকানেও কৃষকদের ভিড়। এখানে কৃষক-জেলারই বিক্রেতা, আবার তারা ক্রেতাও। তাদের কাছেও দেখলাম বছরের নতুন-পুরাতন বলে কোনও প্রত্যাশা নেই। জেলেদের একজন উল্টো আমার কাছেই জানতে চাইলো- জাল আছে আমার নতুন দিনে জলে নামতে পারবেন কিনা তিনি।
জাদুকাঁটাকে ফেলে রেখে আসা কষ্টকর। তবু ফিরেতো আসতেই হবে। যেমন ২০১৬ কে পেছনে রেখে আমরা ২০১৭'র কাছে যাচ্ছি। রাজধানীমুখি হতে হতে একই প্রশ্ন নিয়ে চলছি। সিলেট শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্টে বসে কফি খেতে খেতে কথা হচ্ছিল শহরের একজন পুরাতন নাগরিকের সঙ্গে। তার মলিন মুখ। বছরটি নাকি সিলেটের জন্য ভালো যায়নি। কলেজ ছাত্রী খাদিজাকে কোপানোর কথা বললেন তিনি। এমন মন খারাপ করা ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লাতে, চট্টগ্রামে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে, ঢাকায়। আমাদের বোনরা ভালো ছিল না। আতঙ্ক তাদের চারপাশে ভূত হয়ে ঘুরেছে। আমি, আমরাও কি স্বস্তিতে ছিলাম। যে রেস্টুরেন্টে কৈশোরের এক বন্ধুর ডাকে গিয়ে কফি খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, মুগ্ধ হয়েছিলাম লেকের পাড়ের ওই রেস্টুরেন্টের পরিবেশে। সেই হলি আর্টিজানে কী বিভৎস হত্যাকাণ্ডই না ঘটলো। সকালের নাস্তার টেবিল থেকে যে ছেলেটি উঠে গিয়েছিল ক্লাসে যাবে বলে, সেই ছেলেটি নিখোঁজ হয়ে গেলে। জঙ্গিবাদ যে কোনও ঘুলঘুলি দিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়লো আমরা টের পাইনি। আমাদের বোনরা দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, এই গল্প যখন মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মকে শোনাচ্ছি, তখন দেখতে হলো ২০১৬তে বোনেরা জঙ্গিবাদের জন্য আত্মহুতি দিচ্ছে।

আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কতো রকমারি ভোট দেখলাম। সেখানে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে তুলে আনতে পারলাম কই? ভোটে দেখলাম লিফলেট নয়, টাকা ওড়ে। ‘নেতা’রা লুকিয়ে পড়লেন, আমদানি হওয়া ‘স্যার’দের দাপটে। টাকা উড়েছে শিক্ষাতেও। টাকা দিয়ে সনদ কেনার বাণিজ্য চলছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে স্বর্ণালী ফলাফল করার পরেও আমাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষা স্তরে গিয়ে কৃতকার্য হতে পারছে না। এই অভিজ্ঞতাগুলোকে আমরা এড়াতে পারিনি ২০১৬তেও। রাজধানীর পথে পথে যানজট, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অরাজকতাতো বছর বিদায়ের শেষ লগ্নেও উপভোগ করতে হবে!

একরাত্রিতে জীবন বদলে যাবে। আমার পরিবারের অসুস্থ সদস্য কোনও হাসপাতালে গিয়ে নিশ্চিত সেবা পেয়ে কি ফিরবে? আমি তো কন্যাকে নিয়ে সারারাত হেঁটে বেড়াতে চাই শহরের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। আমার কন্যা আর আমি কি সেই আনন্দ ভ্রমণের সুযোগ পাবো একরাত পরেই। আসলে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে, এক রাতের উল্লাসে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র জীবন বদলে যায় না। জীবন বদলায় অভ্যাসে। তাই অন্তত একরাত পর যে নতুন ভোর আসছে, সেই ভোর থেকে সুন্দর অভ্যাসগুলোতো শুরু করতে পারি?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ