X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পথের ধুলো মনের ধুলো

তুষার আবদুল্লাহ
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৩আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৪




তুষার আবদুল্লাহ শহর এখন ধূলিময়। ধুলোতে মাখামাখি মানুষ, বৃক্ষ, পশুপাখি, দালান-কোঠা। এক বিবর্ণ চেহারা নিয়ে আছে সবাই। এখন মাঘ মাস চলছে। ফাল্গুন হয়ে বৈশাখ বাউকুমটা বাতাস ঘুরতে থাকবে। বাউকুমটা বাতাসে আমাদের হবে ধূলিস্নান। যখন বলছি ধূলিস্নানের কথা, তখন সেটা অবশ্যই গ্রামের মেঠোপথে হতে হবে। আমরা যখন মেঠোপথ বা অবারিত ফসলের মাঠ দিয়ে যাই, তখনও ধূলি ঝড়ে পড়ি, বাউকুমটা বাতাসের চক্রে আটকে যাই। সেই ধূলি যেন আমাদের শরীরের রঙের সঙ্গে মিশে যায়। আমরা কখনও কখনও সেই ধূলি একবারে ঝেড়ে ফেলতেও চাই না। ইচ্ছে করে আর একটু সময় ধুলো জড়িয়ে থাকুক। যাদের বড় হয়ে ওঠা বা যোগাযোগ আছে গ্রামের সঙ্গে, তারা নিশ্চয়ই একে বাড়াবাড়ি ভাববেন না। কারণ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই তারা জানেন এই ধুলোর স্বাদ কত মিষ্টি। গ্রামের ধুলো সুমিষ্ট এ জন্য যে, আমরা সেই ধুলোর পুত্র-কন্যা। শহরে যে ধুলো উড়ছে, সেই ধুলো, এখনকার মানুষ ও জীবনের মতোই কৃত্রিম। উড়ে এসে শরীর আঁকড়ে ধরলে তাকে আপন মনে হয় না। আমরা আঁতকে ওঠে, শিউরে ওঠে নোংরা হওয়ার ভয়ে। শহরের ধুলোর স্বাদ নেওয়ার সাধও জাগে না আমাদের। কারণ তাকে আমরা আবর্জনা বলেই জানি। এখন শহরে যে ধুলো তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে শহরবাসীর পরিচয় নতুন নয়। নানা নির্মাণ সামগ্রী পথে ফেলে রেখে আমরা ধুলো তৈরি করছি। রাস্তা খুঁড়ে দীর্ঘ সময় উন্মুক্ত রেখে তৈরি করছি ধুলো। শহরকে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে ধুলোর সৃষ্টি শহরে, সেই ধুলোতো অসহনীয় হবেই। রাজধানীসহ সব শহরের ধুলোও এক সময় সহনীয় ছিল, যখন সেই ধুলো ছিল সবুজের প্রশ্রয়ে। ঢাকাতে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ধুলো-বালি কিছুটা সইয়ে নেওয়া গেলেও, দিনকে দিন তা সহ্য মাত্রার বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ সেখানেও নির্মাণের বিশৃঙ্খল উৎসব চলছে। সবুজ নিজেই সেখানে বিপণ্ন। ধুলোকে আশ্রয় দেবে সে কী করে? শঙ্কার জায়গা হচ্ছে অপরিকল্পিত এবং বিশৃঙ্খল নির্মাণ-উন্নয়ন এখন গ্রামমুখী। ফলে সেখানকার যে স্বাদু ধুলোর কথা বলছিলাম, তা কতদিন আর মিঠে থাকবে বলা মুশকিল।

পথের ধুলোর ঝাপটা চোখে মুখে এসে পড়লে তা দৃশ্যমান থাকে। কিন্তু মনের ধুলো? আমাদের মনটাও এখন ধুলোময়। নানা সংকট, অসহিষ্ণুতা, রক্ষণশীল চিন্তা, সাম্প্রদায়িক ভাবনা, দলীয় সংকীর্ণতার ধূলিকণা এসে আমাদের মনের ভেতর পুরু আস্তর তৈরি করেছে। সেই আস্তর ভেদ করে মুক্ত ও শুদ্ধ চিন্তার কাছে আমরা পৌঁছতে পারছি না। বরং দিনকে দিন আবর্জনাময় ওই ধুলোগুলোকে যেন স্বেচ্ছায় আমরা মনে মেখে নিচ্ছি। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। বিভিন্ন পেশার রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। কোনও পেশার মানুষই সেই পেশার ব্যুৎপত্তির কথা ভাবছেন না। তারা দেখছেন ওই পেশার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা বা রাজনীতির কতটুকু সেবা করতে পারেন। শিক্ষকদের কাছে ক্লাস রুমের চেয়ে জনসভা এবং রাজনৈতিক টকশো এখন প্রিয়। সাংবাদিকরা করপোরেট এবং রাজনৈতিক দাস হয়ে বসে আছেন। আমাদের শিশু-কিশোরদের আমরা আর দেখতে পাচ্ছি না। তারাও যে শহরে গ্রামে আমাদেরসহ নাগরিক, আমরা সেটি বিবেচনায় রাখছিনা। ফলে আমাদের সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে।তাদের মধ্যে শিশুতোষ বিস্ময়-কৈশোরের উদ্দীপনা দেখিনা। তারা সমবয়সীদের হত্যা করছে।
আমরা বিনোদন কাকে বলে, সংস্কৃতি কাকে বলে, এর সংজ্ঞা এবং উদাহরণ ভুলে গেছি। আমরা একেবারেই ভুলে গেছি আমরা যে আসলে ক্লাস রুম থেকে বাজারে চলে এসেছে। বাজারে যখন ঘুরে বেড়াবো, বাজারকেই যখন জীবন ভাববো, তখন চোখে-মুখে আর মনে ধুলোতে পড়বেই। আর সেই ধুলো কখনও স্বাদু হতে পারে না।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ