X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত পরিচয়পত্র

তুষার আবদুল্লাহ
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৫আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০২

তুষার আবদুল্লাহ রক্তমাখা পরিচয়পত্রটি আমার চোখের সামনে থেকে সরতে চাচ্ছে না। আমি যেদিকেই তাকাচ্ছি সেদিকেই ঝুলে আছে। যেন আকাশ থেকে কেউ সুতো দিয়ে ওই রক্তে মাখামাখি পরিচয়পত্রটি ঝুলিয়ে দিয়েছে আমার সামনে। পরিচয়পত্রটি আমার একজন সহকর্মীর। তিনি সাংবাদিক। কেন্দ্রে সাংবাদিকতা করেননি।করেছেন প্রান্তিকে। জেলায় থেকে খবর ফেরি করে বেড়িয়েছেন। আমরা যাকে বলি মফস্বল সাংবাদিকতা। প্রান্তিকে যারা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত তারা সবাই চৌকস। এমন একজন চৌকস সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল শুক্রবার প্রাণ দিলেন। বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন খবরের খোঁজে। ওই সময়েই বুলেট এসে তার মাথা ও মুখে বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত শিমুলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে তিনি মারা যান।
পুলিশের বরাত দিয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাতে জানা যায়- স্থানীয় মেয়রের শর্টগান থেকে ছোঁড়া গুলিই বিদ্ধ করেছিল শিমুলকে। শিমুলকে লক্ষ্য করে মেয়র গুলি করেছিলেন, সেই কথা বলছি না। শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি করার কোনও সঙ্গত কারণও নেই। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরোধ ও সংঘর্ষের জেরে তিনি মেয়রের পদে থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করবেন, একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এই অসভ্যতা প্রত্যাশিত নয়। তিনি যে দলেরই প্রতিনিধিত্ব করুন না কেন।
তৃণমূল থেকে জনপ্রতিনিধিদের অপ্রতিরোধ্য হওয়ার খবর এখন প্রায় নিয়মিত। শিশুদের পিঠকে সেতু বানিয়ে হেঁটে চলা থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, মাদক বাণিজ্য, লুটপাটের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের যেন এক প্রকার আত্মীকরণ হয়ে গেছে। এই আত্মীকরণে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে অর্থ। আমরা বিগত বছর উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের যে নির্বাচনগুলো হতে দেখেছি, সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে যে প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের সর্ম্পক আছে, তাদের অধিকাংশকে কোনও রাজনৈতিক দল থেকে মনোনীত হতে দেখিনি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ই একই দোষে দোষী। নিলামে বিক্রি হয়েছিল মনোনয়ন। এখন যারা পদ কিনে নিয়েছেন, তারাতো মুনাফা তুলে নেবেনই। মুনাফা তোলার মাধ্যম হচ্ছে দখল। এখন সেই দখলের লড়াই চলছে মহাসমারোহে। সেই লড়াই বা বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ গেলো সহকর্মী শিমুলের।
শিমুলের পরিচয়পত্র যে রক্তাক্ত হলো, সেই রক্ত যে আমার পরিচয়পত্রকেও রক্তাক্ত করেছে তা কি আমি বুঝতে পারছি, অনুভব করছি, বিশ্বাস করছি? খুব ক্ষীণ ভাবেও কারও ‘হ্যাঁ’ উচ্চারণ শোনা যাবে, আজকাল সেই আশাটিও করতে পারি না। কারণ সাংবাদিকরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। কেবল যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পাহারাদার পুলিশ করছে এই কাজটি তা নয়। সরকারে-বেসরকারে যে যখন সুযোগ পাচ্ছে, খবরের ফেরিওয়ালাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। প্রতিবাদের ভান, ঢঙ সবই হচ্ছে ক্ষণিকের। কয়েক মুহূর্তের প্রতিবাদ প্রজ্ঞাপণ, মানববন্ধন এসবই আনুষ্ঠানিকতা, তার চেয়ে বড় হচ্ছে নেতা হওয়ার সিঁড়ি। এবং কে কোন পক্ষের কতটা যোগ্য 'দাস' তার প্রমাণ দেওয়া। সমাজ আজ রাজনীতিক মিষ্টির স্বাদ দ্বারা বিভক্ত। মিস্টির স্বাদ নেওয়া, ভোগ করার জন্য এখন শুধুই জয়ধ্বনী। যে যার কাছে সমর্পিত তার জয়গান গাওয়া হচ্ছে। এই জয়গানের উৎসবে রক্তমাখা পরিচয়পত্র বিরান মাঠে পড়েই থাকবে। জানি না মাঘের কুয়াশা কিংবা ফাগুনের আগমনী ধুলোও তাকে স্পর্শ করবে কিনা। শিমুলের রক্তাক্ত পরিচয়পত্র দেখে আমরা কি একবার আতঙ্কতেও জেগে উঠতে পারি না? শিমুলের পরিচয়পত্রটিকে ফেস্টুন করে বলতে পারি না- আমরা আর ব্যবহৃত হবো না। আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। তোমরা সাবধান...

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ