X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাসে কিভাবে থাকবে রকিব কমিশন

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩১আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৩

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিদায় নিলো। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নতুন কমিশন শপথ নেবে। তার আগে প্রশ্ন আসে—ইতিহাসে কিভাবে থাকবে রকিব কমিশনের পাঁচ বছর ও তাদের ভূমিকা। নির্বাচন কমিশন একটা শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। বিচারপতি ইদ্রিছ কমিশন ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন কমিশন। ইতিহাসে দেখা যায়, বিচারপতি ইদ্রিছ কমিশন থেকে আরম্ভ করে রকিব কমিশন পর্যন্ত—এগারোটি কমিশনের কোনোটি অটুট খ্যাতি নিয়ে বিদায় নিতে পারেননি।
রকিব কমিশন নিয়ে তো মন্দ কথার অভাব নেই। আজ দেখলাম একটি প্রধান দৈনিক শিরোনাম করেছে—'নির্বাচন-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে রকিব কমিশনের বিদায়।'
সাংবাদিকতার কোন নিয়মে একটি রিপোর্টের শিরোনাম এটি হতে পারে! কারণ সেটি কলাম ছিল না। শুরু থেকে রকিব কমিশনের বিরুদ্ধে এমন কুৎসাতেই ব্যস্ত ছিল বিশেষ কিছু মিডিয়া। তার পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে রকিব কমিশনকে, সর্বোপরি সবদলের অংশগ্রহণ শূন্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই জাতিকে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল জড়িত। রাজনীতি ও নির্বাচন উভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিষয় এর সঙ্গে হার-জিত জড়িত। সুতরাং নির্বাচন কমিশন অ-বিতর্কিত থাকে কিভাবে? যে দল জিতেছে তার একটা সন্তুষ্টি আছে। যেদল জিতেতে পারলো না তারতো একটা অসন্তুষ্টি আছেই। হেরে যাওয়া দলকে কিছু অভিযোগ তুলতে হলে তো নির্বাচন কমিশনকেই অভিযুক্ত করতে হয়।

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়েছিল নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশায়। সে আশাও পূর্ণ হয়নি। আওয়ামী লীগ জিতলে বিএনপি বলে  কারচুপি হয়েছে। আর বিএনপি জিতলে আওয়ামী লীগও একই রকম অভিযোগ উত্থাপন করে। সুতরাং বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে কেউই কোনোভাবে অভিযুক্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না। এটা তার ললাটের লিখন। আর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চাও হয়নি কখনো।

বিদায়ী রকিব কমিশনের বিরুদ্ধে বড় অপবাদ উত্থাপিত হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে নিয়ে। রকিব কমিশন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার কারণে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছিল। আর বিএনপি জামায়াত বর্জন করেছিল। কোনও দল বা গোষ্ঠী নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা শাসনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনাকে দেয়নি। প্রার্থী থাকলে তাকে নির্বাচন করতেই হবে। প্রার্থী কালো, না সাদা, বিএনপির, না আওয়ামী লীগের, তা দেখার কোনও অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই।

মূলত শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই রকিব কমিশন এক পক্ষের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের  ভাবখানা এমন কমিশন তাদের পক্ষ নিনো না কেন! পুরো জাতিই তো তাদের পক্ষে রয়েছে। সারাবিশ্ব তাদের পক্ষে থাকলেও কমিশন শাসনতন্ত্রের বাইরে যেতে পারবে না। এ কথাটা তারা বুঝেও বোঝেন না।

আসলে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনকে সহযোগিতা না করলে কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা অসম্ভব। 

হামলা থেকে নির্বাচনকে রক্ষা করে নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার কোনও এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি সত্য, তবে এর  জন্য তো রকিব কমিশন দায়ী নয়। এ জন্য দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো।

তাদের উচিত ছিল নির্বাচনের আগেই আলাপ-আলোচনা করে সব কিছু ঠিক করে ফেলা। তাদের ব্যর্থতা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা বলে চালিয়ে দেওয়া এক নির্মম রসিকতা। রকিব সাহেব বহুদিন সরকারি আমলা ছিলেন। আমরা দেখেছি সব দলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল।

আজকে আরও  কয়েকটি মিডিয়া দেখলাম তার বিদায়লগ্নে নিন্দাবাক্য প্রয়োগ করে তাকে বিদায় জানিয়েছে। এ দেখে আমি লজ্জিত হয়েছি। বিদায়কালে আমি রকিব কমিশনকে বিদায় সম্ভাষণ জানাই। পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তার কোনও ভূমিকাই ছিল না। তিনি পরিস্থিতির শিকার। তিনি পাঁচ বছরব্যাপী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে একটা শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন, সে জন্য তাকে অভিনন্দন। তার কমিশনারদেরও অভিনন্দন জানাই।

এখন নতুন কমিশন গঠিত হয়েছে। হুদা কমিশন ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব নেবে। আমাদের দেশের সব দলকে অনুরোধ করব, এ কমিশনকে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত সহযোগিতা করতে। বিএনপি মৃদু মন্দ-বিরোধিতা করার পরও মনে হয় হুদা কমিশনকে মেনে নিয়েছে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশন শাসনতন্ত্র রদ করতে পারে না, শাসনতন্ত্র রক্ষা করাই তার দায়িত্ব।

সুতরাং কোন্ সরকার পদ্ধতি অধীনে আপনারা নির্বাচন করবেন, তা সময় থাকতেই নির্ধারণ করে নিন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত ৩১৯ জন নিরাপরাধ মানুষ হত্যা করেছে। সে রকম কোনও পরিস্থিতির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।

ক্ষমতার লালসায় মানুষ হত্যা নিকৃষ্ঠতম পাপ। এক নেতা বলেছিলেন, ‘খোকা ভাই দুই একজন না পড়লে তো আন্দোলন তীব্র হবে না, সরকারও পড়বে না।’ এ কি নির্মম কথা! নেতায় নেতায় কর্মী বলি দেওয়ার পরিকল্পনা! শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং শ্রেষ্ঠ সত্য সবসময় সরল হয়। আমাদের নেতারা শ্রেষ্ঠ মানুষ হোক আর শ্রেষ্ঠ সত্যের পূজারি হউক এই আমাদের কামনা।

রাজনীতি শ্রেষ্ঠতম আর্ট। এটাকে কলুষিত করার চেষ্টা না করাই উত্তম। কলুষিত রাজনীতিতে কোনও বৃহত্তম কল্যাণ থাকতে পারে না। নতুন হুদা কমিশনকেও অভিনন্দন। আমাদের প্রয়াত আতাউর রহমান খান বলতেন, আমলাতন্ত্র কুরসি কুর্নিশ করে। হুদা কমিশনের লোকগুলো সবাই আমলা ছিলেন। এখন কিন্তু তারা একটা শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের নেৃত্বত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের সত্তা সার্বভৌম সত্তা। তারা যেন পুরনো অভ্যাস মতো কুরসি কুর্নিশ না করেন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ