X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘আত্মঘাতী বাঙালি’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:১২আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:২২

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা কানাডার আদালত পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ হয়ে যাওযার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্নের মুখে আজ পুরো জাতি। স্বপ্নের এই সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অপমানিত হয়েছে, জাতির জনকের পরিবারের মর্যাদা হানি হয়েছে। এখন এই রায়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে সরকার, কিন্তু যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কি সেরে যাবে সহসা? বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। তার সঙ্গে এই ধরনের একটি টানাপোড়েন কখনওই কাম্য নয়।
শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে নিজ খরচে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার তার আত্ম-মর্যাদার প্রশ্নে অবিকল থেকেছে শুরু থেকে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কি পেল শেষ পর্যন্ত? এমন একটি প্রতিষ্ঠান কি করে কাগজপত্র ছাড়াই এমন ঢালাও অভিযোগ করতে পারে? দু’তিনজন মানুষের ব্যক্তি স্বার্থের বলি হয়েছে এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান? সেই দু’তিনজন ব্যক্তিই বা এমন করলেন কেন? সরকারের বিরোধিতার নামে দেশকে এমন এক ভয়ংকর জটিলতায় ফেলে দেয়া? তবে কি একেই বলে আত্মঘাতী বাঙালি? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে দেশ আজ।  
একটি মিথ্যা অভিযোগে সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার পরিবারকে হেনস্তা হতে হয়েছে। সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বিনা দোষে জেল খাটতে হয়েছে। কানাডায় তার জামাতার ব্যাংক হিসাব চেক করা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনসহ আমার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করা হয়েছে। আমরা দেখেছি যেসব পত্রিকা দিনের পর দিন এই মিথ্যা রিপোর্ট করেছে, কার্টুন প্রকাশ করেছে, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লিখেছে ও টকশো করেছে তারা আজ নিরব। তাদের আজকের জবাব কী?
যে দু’তিনজন ব্যক্তির নাম শুনতে পাচ্ছি আমরা এই ষড়যন্ত্র লিপ্ত, তাতে সাধারণ বোধ শক্তি আছে, এমন মানুষের কষ্ট হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যেমন দেশের বিরুদ্ধ নতুন করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, সহিংস হয়ে উঠেছিল, তেমনি এই বুদ্ধিজীবী মহলও তাদের ব্যক্তি স্বার্থে এমন এক ভয়ংকর দেশ বিরোধি চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলেন। সব যোগফল মেলালে বলতে হয়, ব্লগার ও লেখক হত্যা, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হত্যা, বিদেশি নাগরিক হত্যা, লাগাতার পেট্রল বোমার আগুনে দেশ জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা আর পদ্মাসেতুর মামলা সব এই ষড়যন্ত্রের অংশ এবং ঘুরে ফিরে এরা একই রাজনৈতিক শক্তি।

কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় যারা সরকারকে গালমন্দ করেছেন তাদের ক্ষমা চাইতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ছেলে ও তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রবীন নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদও একই কথা বলেছেন। আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক থেকে সেভাবে কোন প্রতিক্রিয়া পাইনি। কিন্তু সবচেয়ে নির্লজ্জ্ ভূমিকা ছিল কিছু গণমাধ্যম আর সুশীল বলে খ্যাত কিছু ব্যক্তি বিশেষের। তারা মুখে খই ফুটিয়েছেন চিৎকার করে করে। তারা কি এখন ততটা চিৎকার করে সরকারের কাছে, সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে ক্ষমা চাইবেন?  

প্রত্যাশা থাকবে বিশ্বব্যাংক পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিবে। কারণ কানাডার আদালতের রায় প্রম,আণ করে বিশ্বব্যাংক কিছু ব্যক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বালখিল্য আচরণ করেছে। দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা কাগজপত্রসহ বিশ্বব্যাংক তা কানাডার আদালতেই জমা দিতো। একটি ধারণার উপর ভিত্তি করে, কোন এক ব্যক্তির ডায়েরির পাতাকে অবলম্বন করে বিশ্বব্যাংক কী করে এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারলো, এমন প্রশ্ন আজ সর্বত্র। বিশ্বব্যাংকের নিজের ভাবমূর্তির জন্যও একটি উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।

কীর্তিমান বাঙালি নীরোদ চন্দ্র চৌধুরীর একটি বইয়ের নাম ‘আত্মঘাতী বাঙালি’। আমাদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রমাণ করে তিনি সঠিক বলেছিলেন। দেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, সহিংসতা করছে, হত্যা. ধর্ষণ ও লুটতরাজ করেছে। সেসবের বিচার যেইনা শুরু হলো অমনি, দেশের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো একাত্তরের পরাজিত শক্তি। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষে যারা কথা বলেন তারাও এদের সহযোগী হয়েছে নানা প্রক্রিয়ায়। সরকারের সাথে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়েছে জাপানিসহ বিদেশি নাগরিক হত্যা করা হয়েছে। পদ্মাসেতু আটকে দিতেও না পেরে চেষ্টা হয়েছে জাপান সরকারকে উসকে দিতে। তাই বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়েছে, কারণ জাপানের সাথে আছে দেশের বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প। কিছুটা সফলও হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। জাইকা বেশ কিছু প্রকল্পে থাকবে কি থাকবেনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দীর্ঘদিন।

পদ্মাসেতু এ মুহূর্তে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা আর মর্যদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যি বলতে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরুর পর থেকেই রাজনৈতিক ও সুশীল প্রতিপক্ষের বিরোধিতা পেয়েছেন। যারা একটি সেতুও নির্মাণ করতে পারেনি, তারা হঠাৎ বলা শুরু করলো ক্ষমতায় গেলে তারা দুইটি পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে। রাজনৈতিক বৈরিতা বোঝা যায়। কিন্তু সুশীল সমাজ? এরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক বলে পরিচয় না দিলেও, এদের একটি রাজনীতি আছে, আর  তাহলো যেকোনওভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলের বিরুদ্ধে থাকা।

বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতার পথে অন্তরায় এই চক্র, যারা বাঙ্গালি হয়েও শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বিরোধিতা করতে হবে বলে এত বড় ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে মোকাবিলা করতে গিয়ে তারা লড়াই করছে দেশের মানুষের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে।  হিসেবে এই ‘অরাজনৈতিক রাজনৈতিক’ সুশীল পক্ষটি এখন কোথায় মুখ লুকায় তা দেথার বিষয়। নাকি নতুন কোন মোড়কে আবকার তারা পথে নামবে?

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি।

 

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার বিচার২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
লরিয়াস অ্যাওয়ার্ড যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
তীব্র গরমের মধ্যে আগুনে পুড়লো চাঁদপুরের ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
তীব্র গরমের মধ্যে আগুনে পুড়লো চাঁদপুরের ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ