X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে শেখা

নাদীম কাদির
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৩আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০০

নাদীম কাদির এই সময়ে যখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে চিত্কার করছি, তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর আরও বেশি কিছু করা দরকার। অন্যদের দোষারোপ এবং ক্ষতিপূরণ চাওয়ার চাইতে বরং তাদের নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই এটা প্রয়োজন।
আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বনভূমিগুলো ভূমিদস্যুদের কবলে চলে যাচ্ছে কিংবা এখানকার গাছপালা কাঠ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অন্য অনেক আইনের মতো এক্ষেত্রেও আমাদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা উচিত। কারণ এসব ঘটনা আমাদের দেশকে ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশ একটি জনবহুল রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন, জনগণকে দায় হিসেবে না দেখে তাদের সম্পদে পরিণত করতে। বেঁচে থাকা এবং বৈধভাবে ব্যবসার জন্য তাদের সুপথ দেখাতে আমাদের উচিত আইনের কঠোর প্রয়োগ করা। বিষয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে আমাদের নিজেদেরই সৎ হতে হবে।
ইউরোপ সফরে আমি দেখেছি, এ মহাদেশের দেশগুলো কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করেছে।
প্রকৃতি তাদের জন্য শুধু সম্পদই নয়; বরং এটা তাদের কাছে পবিত্রও। আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রতিটি পরিকল্পনাই এমনভাবে নেওয়া হয়েছে যাতে প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব হয় খুবই ক্ষীণ।
ফিনল্যান্ডের ক্ষুদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর কুওপিও। আমি যখন সেখানে অবতরণ করি ওই সময়ে সেখানকার আবহাওয়া ছিল তুষার এবং ঝড়ো আচ্ছাদিত। তাপমাত্রা ছিল ১০-এর নিচে। ছোটভাই ইকবাল আমাকে এয়ারপোর্ট টার্মিনালটি ত্যাগের আগে এমন আবহাওয়া প্রত্যক্ষ করতে উৎসাহিত করলো।
পাহাড়ের ওপর গাছগুলোকে ঢেকে যাওয়া তুষার দেখে আমি আক্ষরিক অর্থেই ভয় ও বিস্ময় অনুভব করেছি। মজার বিষয় হচ্ছে, ক্রিসমাস ট্রি’সহ অন্য গাছগুলো বাঁকা না হয়ে সবগুলো গাছই সোজা দাঁড়িয়েছিল।
ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাটগুলো কোথায়? গাছপালা না কেটে শৈল্পিক কাঠামো নিয়ে পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলো। একটা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে তুষারের বুকে সবুজ বৃক্ষরাজির প্রশংসা করছিলাম। সেখানে ফিনল্যান্ডের এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, 'এই এলাকায় প্রতিটি গাছ কাটার জন্য পাঁচটি গাছ লাগাতে হয়। ফলে এটা অনুর্বর বা অনুৎপাদনশীল হয়ে যায়নি।'
তিনি বলেন, 'আমাদের জমির ৭০ শতাংশই বনভূমিতে আচ্ছাদিত। ফলে আমাদের এখানে বাতাসে দূষণের পরিমাণ কম।' তার কাছে জানতে চাইলাম, 'এই বৃক্ষরোপণ কি সরকার করে? নাকি ব্যক্তিগতভাবে নাগরিকরাও করেন?'

উত্তরে তিনি বললেন, 'প্রত্যেকে...আমরা আমাদের দেশকে, আমাদের প্রকৃতিকে ভালোবাসি। ফলে স্থানীয় কাউন্সিলের অনুমতির পর যদি আমি একটা গাছ কাটি তাহলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে নতুন গাছ লাগিয়ে দেই।'

আমি খেয়াল করেছি, অনেক পাহাড়ের চূড়ায় গাছের গুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। তবে এটিকে বেষ্টন করে আছে নতুন গাছ। বিস্ময়কর ব্যাপার। কেউ অভিযোগ করছে না কিংবা বাংলাদেশের মতো সেখানে কথিত পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কোনও ‘মানি মেকিং’ প্রচারণাও নেই। রাস্তায় আওয়াজ করার বদলে তারা আসল কাজটা করতে শুরু করা উচিত।

বাসযোগে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি’তে ভ্রমণ করছিলাম। দেখলাম সেখানকার মাটি সবুজ। এটা আমার চোখকে শীতল করে দেয়। জিগ-জ্যাগিং-এর মতো ফিনল্যান্ডের গ্রামীণ এলাকাজুড়েও রয়েছে মসৃণ রাস্তাঘাট। হেলসিংকি’তে আকাশছোঁয়া ভবনের মাঝেও যে কেউ দেখতে পাবেন কিভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটিকে অধিকতর সবুজ রাখা হয়েছে।

আমাদের ঢাকার মেয়রদের রাজধানীর জন্য জরুরিভিত্তিতে সবুজ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং এর বাস্তবায়ন করা। অন্য শহরগুলোর জন্যও এটা প্রযোজ্য। আমরা এখন এটা জানি যে, ফুল ছিঁড়তে নেই। আমি এটা নিশ্চিত যে, বুঝেশুনে কেউ গাছপালা উপড়ে ফেলবে না। এটা দূষণকে পরিচ্ছন্ন করবে। এর পাশাপাশি কংক্রিটের ভবনের মধ্যেও আমাদের কিছু সৌন্দর্য উপহার দেবে।

বাসাবাড়ি কিংবা অফিস; সব ধরনের স্থাপনায় ছাদবাগান এবং সামনে বৃক্ষরোপণ অবশ্যই বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

শেষে, ফিনল্যান্ডের মানুষের সততার একটা গল্প বলি। পুইজো টাওয়ার থেকে কুওপিও শহরের স্কাই ভিউ দেখতে টিকিট কিনেছিলাম। কিন্তু পরে চূড়ায় গিয়ে দেখতে চাই এর দরজা বন্ধ। সঙ্গে প্রতিকূল আবহাওয়ার সংকেত।

সেখানে একটা রেস্টুরেন্টে কফি পানের পর নিচে নেমে এলাম। ওই নারীকে বললাম, এই টিকিট এখন অনর্থক। কারণ আমি এটা দেখতে যেতে পারছি না। আমি বললাম, তার বলা উচিত ছিল এটা বন্ধ কেন?

ভদ্রমহিলা হাসিমুখে দুঃখপ্রকাশ করলেন। বললেন, এই টিকিট হচ্ছে টাওয়ারে প্রবেশ করার জন্য। খারাপ আবহাওয়ার কারণে দরজা বন্ধ থাকার কথা সম্পর্কে যেহেতু তিনি আমাকে বলেননি; ফলে আমার অর্থ ফেরত দিলেন। তিনি এটা করেছেন। ধন্যবাদ তাকে।

ফিনল্যান্ডে এ ধরনের সততা সাধারণ ব্যাপার। আমাদেরও নিজেদের বলা দরকার, আমরা কেন নই?

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ