X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াই নট 'বাংলা টেস্ট’

গোলাম রাব্বী
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:২৬আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৩০

গোলাম রাব্বী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’; না, আমরা পারি না, পারি নাই এবং কখনোই পারবো না।  কেননা- এই বাংলা ভাষার জন্য আমরা পেয়েছি রক্তে রাঙা মহান একুশ এবং এ বাংলাকে কেন্দ্র করেই আমরা পেয়েছি ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা এবং স্বাধীন-সার্বভৌম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
তাই- ১৯৫২ সালে নিজেদেরকে যারা ভাষার জন্য উৎসর্গ করেছেন, সেই মহান মানুষের সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা চাই মায়ের ভাষা বাংলাকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে, বাংলার আরও বিস্তৃতি ঘটাতে।  আমরা ‘সুশিক্ষার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ড্রিম ডিভাইজার’এর সুশিক্ষকরাসহ অবশ্যই বাংলা ভাষাবাসী সবাই চাইবো- বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, বাংলা ভাষাকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে।  আমাদের স্বপ্ন হলো- অন্যান্য দেশে চাকরি, পড়াশুনা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অবস্থান করতে চাইলে, যেমন- আইইএলটিএস, জিআরই, টোফেল বা নানান ভাষার সংশ্লিষ্ট টেস্ট দিতে হয়, তেমনি লাল-সবুজের এ বাংলায় যেসব প্রবাসী/ ভিনদেশি কাজ করবেন, তারা ‘বাংলা টেস্ট’ বা এমন টাইপের কিছু টেস্টে অংশ নিয়ে এদেশে কাজের সুযোগ পাবেন।  যেমন- সাম্প্রতিক সময়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়- বিদেশিরা বছরে বাংলাদেশ থেকে নিচ্ছে ৫০০ কোটি ডলার।  ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী- বর্তমানে এদেশে ২ লাখ বিদেশি কাজ করছে বলেও উল্লেখ আছে।  অথচ তাদেরকে কিন্তু বাংলার কোনও টেস্ট দিতে হয়নি বা হচ্ছে না; অথচ যদি আইইএলটিএস, জিআরই বা টোফেল বা অন্যন্য দেশের ভাষা টেস্টের মতো যদি  ‘বাংলা টেস্ট বা বাংলা টিএস’ নামে কিছু দিতে হতো তাহলে- বাংলাদেশ এবং আমাদের ভাষাই কিন্তু লাভবান হতো।  যেমন লাভবান হচ্ছেন আইইএলটিএস, টোফেল বা জিআরই টাইপের আয়োজকরা।  আর তখন প্রাণের ভাষার জন্য জীবন দেওয়া সেসব মহান ভাষা শহীদ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্জনকারী ভাষা বাংলা আরও ছড়িয়ে পড়বে এবং টিকে থাকবে দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে।
এখন বিষয় হলো- ‘বাংলা টেস্ট’ কী, কেন বা কিভাবে?  অথবা ‘বাংলা টেস্ট’ টাইপের মতো এমন কিছুর দরকারই বা কেন? দেখুন- আমরা তথা বর্তমানের আধুনিক-ডিজিটাল বাংলাদেশ কিন্তু শিল্প, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির বহু অঙ্গনে খুবই ভালো করছি।  বিশ্বায়নের এ যুগে নানা সূচকে এগিয়েও যাচ্ছি।  আর পোশাক এবং আইটি সেক্টরের মতো কিছু সেক্টর দিন দিনতো আমাদের নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।  এসব কারণে স্বভাবতই আমরা বাঙালিরা বা বাংলা ভাষাভাষিরাও ছড়িয়ে পড়ছি বিশ্বজুড়ে।  আর গ্লোবাল ভিলেজের এ সময়ে ন্যাচারালি আমাদের নানা শিল্প, প্রতিষ্ঠান এবং কাজকর্মে যুক্ত হচ্ছেন ভিনদেশিরাও।  আমাদের কবির কবিতায়ও রয়েছে আমরা মিলবো- মেলাবো ও নিজেরদেরকে বদ্ধঘরে না রেখে দেখবো পুরো জগৎটাকে।  সে সুবাদে আমাদের বহু আন্তর্জাতিক মানের ফার্মসহ ছোট-বড় বহু প্রতিষ্ঠান এবং প্রোজেকটে কাজ করছেন বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ।  করাটাও স্বভাবিক।  যেমন- আমরাও প্রায় বিশ্বের সব দেশেই কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও নিজেদের মেধা-যোগ্যতা দ্বারা দশদিকে ছড়িয়ে পড়বো।
কিন্তু একটা বিষয় কি আমরা খেয়াল করেছি-
যদি আমরা অন্য কোনও দেশে পড়তে যাই, কাজ করতে যাই বা চাকরি নিতে চাই, তাহলে বিষয় সংশ্লিষ্ট টেস্টের পাশাপাশি ওই দেশ সংশ্লিষ্ট ভাষারও একটি টেস্ট দিতে হয়।  যার কারণে আমাদের ওই ভাষাটা শিখতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয়, পাস নয় কেবল অনেকাংশে ভালো ফলাফলও করতে হয়।  আমরা এও বলছি না যে, ভাষার এসব টেস্ট থাকবে না।  আমরা ড্রিম ডিভাইজারসহ বাংলাভাষী অন্যরাও নিশ্চয়ই বলবেন, অবশ্যই এগুলো থাকবে।  এমনকি দেশ অনুযায়ী টেস্টের পার্থক্য এবং ভাষার টেস্ট থাকতেই পারে।  আর আমরা কিন্তু এও বলছি না যে, বিদেশি বা ভিনদেশিরা আমাদের দেশে কাজ করবে না।  অবশ্যই করবে।  ঠিক আমরা যেমন অন্য দেশে যাই, থাকি, কাজ করি, করছি এবং করবো।
তবে আমরা বলছি- অবশ্যই আমাদের মতো অন্য দেশেরও একজন যখন এদেশে কাজ করবেন, বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হবেন বা যে পদেই যুক্ত হোন না কেন, তাদের জন্য একটা ‘বাংলা টেস্টে’র সিস্টেম রাখি, তাহলে আমাদের বড় বড় কিছু সুবিধাও আসবে।
প্রথমত- আমাদের প্রাণের ভাষার চর্চা যেমন বাড়বে, তেমনি ভাষার বিস্তৃতিও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।
দ্বিতীয়ত- আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা, ভাষা হিসেবে বহুদিন টিকে থাকবে।
তৃতীয়ত- বাংলার বিস্তৃতি এবং টিকে থাকার পাশাপাশি, বাংলা টেস্ট সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন, পড়ালেখা বা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে নানা ফি বাবদ একটি বিরাট অংশের রাজস্বও কিন্তু আমরা পাবো।  এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হওয়ারও সুযোগ পাবেন বহু বাংলা ভাষাবাসী।
এবার এ সংক্রান্ত আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা বলি- দেখা যায়, এদেশের বহু প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশেই কাজে নিযুক্ত হবেন বা কাজ করবেন, তাদের জন্য কেবল ইংরেজি টেস্টেরই ব্যবস্থা রাখেন; এককথায় যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলার কোনও টেস্ট বা পরীক্ষা নেওয়া হয় না।  একটু ভাবুনতো- যদি সব প্রতিষ্ঠানই মেধাবী বা যোগ্য ব্যক্তি খোঁজার নামে কেবল বিদেশি একটি ভাষার মাধ্যমে টেস্ট নেওয়া শুরু করে, তাহলে একসময় আমাদের বাংলা কি কেউ চর্চা করতে বা ধারণ করতে চাইবে? তবে আমরা কিন্তু বলছি না- ইংরেজির টেস্ট বা অন্য জটিল-কঠিন টেস্ট থাকবে না; অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্য লোক বাছাইয়ে ইংরেজি, গণিত বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রয়োজনীয় টেস্ট থাকবে। কিন্তু এতে যেন নিজ দেশের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ইতিহাস ভাষা বাংলার টেস্টেরও একটি ব্যবস্থা রাখি। আর ভিনদেশিদের জন্যতো অবশ্যই। কেননা কবির কবিতাও মনে রাখা দরকার- দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুরায়, নিজ দেশ ত্যাজী কেন বিদেশ ন যায়…; সুতরাং- এদেশে কাজ করতে হলে অবশ্যই এদেশিয় ভাষা- বাংলার একটি মানসম্পন্ন টেস্ট কিন্তু ভাষার বিশ্বায়নের জন্য অন্তত করা যেতেই পারে, বৈকি...!
আর প্রাণের ভাষাকে কেন্দ্র করে এমন ‘বাংলা টেস্ট’নামক কিছু চালু করতে পারলে তখন ব্রিটিশ কাউন্সিল, আমেরিকান সেন্টার বা অন্যান্য দেশের কালচারার প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও মান উন্নয়নে দেশে-বিদেশে বাংলা টেস্টের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, আমাদের দেশের অনেকেই এসংক্রান্ত বই লিখবে, কেউ অনলাইন টিউটোরিয়াল বানাবে, আমাদের অনেকে বাংলা শিখানোর গুড এডুকেটর, প্রশিক্ষক বা কনসালটেন্ট হবেন, কেউ বাংলা টেস্ট সংক্রান্ত এসব অফিসে প্রশাসনিকসহ নানা পদে কাজ করবেন; ফলে চাকরির ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে; আর দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রার আরও একটি জায়গা। পাশাপাশি বাংলা ভাষা রক্ষা আর বিস্তৃতিতে নিত্য নতুন গবেষণা চলবে, ভাষা শিক্ষা ও মান উন্নয়ন সংক্রান্ত গেমস তৈরি হবে, অন্যান্য ভাষা ভিত্তিক নানা টেস্টের কথা চিন্তা করে বাংলা ভাষার টেস্ট মডিউল-প্রশ্নপত্র এবং উপস্থাপনে নিত্য নতুন স্টাইলেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে বহু বাংলা-ভাষাবাসীর। বাংলা নিয়ে প্রতিনিয়ত তখন গবেষণা চলবে, যা ভাষার আভিজাত্যকে আরও বাড়বে। তখন লাল-সবুজের অহংকার ছড়িবে পড়বে বিশ্বময়।
‘বাংলা টেস্ট’নেওয়ার এমন উদ্যোগকে কে কী বলবেন আমরা জানি না, তবে আমরা এটুকু বিশ্বাস করি, আমাদের বাংলার অহংকার সেনা বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর চৌকসদল বিশ্বের নানা স্থানে শান্তিরক্ষায় মহান দায়িত্ব পালন করে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন; তেমনি আমাদের পোশাক শিল্পও প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে সবাইকে চমকিত করে বাংলাদেশ আর বাংলাকে ব্র্যান্ডিং করছে নিরন্তর। পাশাপাশি- সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে বর্তমান প্রজন্ম বহু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে। একইভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক নানা সূচকেও আমরা প্রতিনিয়ত প্রশংসিত হচ্ছি। 
অন্যদিকে, আমাদের বড় সাহস ও প্রেরণা হচ্ছে, আমরাই বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা-ই কেবল ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছি, এই ভাষার নামেই একটি দেশ পেয়েছি- বাংলাদেশ। পেয়েছি- বায়ান্নর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
সুতরাং অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষার বিস্তার ও ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে, এদেশে যেসব বিদেশিরা কাজ করবেন, তাদের জন্য বাংলার একটি টেস্ট থাকাটা যৌক্তিকভাবেই স্বপ্ন দেখছি। আমাদের বিশ্বাস- অন্য জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ভাষাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি আমরা বাংলা ভাষাভাষী সবাই চাইবো- বাংলা ভাষারও এমন কিছু একটা থাকুক এবং চালু হোক, যার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আমরাও হবো নতুন এক ইতিহাসের অংশ।
আমরা কিন্তু বলছি না যে, ‘বাংলা টেস্ট’ই নাম দিতে হবে; এক্ষেত্রে হয়তো আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বোদ্ধা মহল নাম, টেস্টের ধরন বা অন্যান্য বিষয় নির্দিষ্ট করবেন। আমাদের স্বপ্ন কেবল ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা আর বাংলার এ সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়া। তখন আমাদের এ দেশ টেস্ট প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে পাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।
সবশেষে- ‘এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’- কবির এ কবিতায় চলুন আরও একবার বাংলা ভাষার জন্য এক হয়ে ইতিহাস গড়ি আর বলি- Why not ‘Bangla Test..?

লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা, ড্রিম ডিভাইসার। 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ