X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু—এই থিউরি ভুল

তসলিমা নাসরিন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:১৪আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:১৪

তসলিমা নাসরিন ভারতের কট্টর হিন্দুরা ট্রাম্পকে চোখ কান বুজে সমর্থন করে। টুইটারে যখনই আমি ট্রাম্পের সমালোচনা করেছি, একপাল ট্রাম্প-সমর্থক হিন্দু আমাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি দিয়ে চলে গেছে। ট্রাম্প দরিদ্র বিরোধি,পঙ্গু বিরোধি, কালো বিরোধি, বাদামি বিরোধি, হলুদ বিরোধি, নারী বিরোধি, শরণার্থি বিরোধি, তারপরও তারা ট্রাম্পকে পছন্দ করছে, পছন্দ করার একটিই কারণ,  ট্রাম্প মুসলিম বিরোধি। মুসলিমরা  যাদের চক্ষুশূল, তাদের ভোটে ট্রাম্প জিতেছেন। ট্রাম্প  কবে  মুসলিমদের ধরে ধরে  শায়েস্তা করবেন – সেই অপেক্ষায় আছে  ট্রাম্পের ভক্তরা। তবে ট্রাম্পের ভক্তবৃন্দ  ক’টা মুসলিমকে এখন অবধি খুন করেছে জানি না,  তবে  খুন করেছে  এক  ভারতীয় হিন্দুকে।  শ্রীনিবাস কুচিভোটলাকে। অলোক মাদাসানিকেও গুলি করা হয়েছিল। মাদাসানি আহত হয়েছেন এবং লাকিলি  বেঁচে গেছেন।  খুনীর নাম আদম পিউরিন্টন। অস্টিন্স বার এন্ড গ্রীল নামের এক বার- কাম-রেস্তোরাঁয়  বসে আদম ওদের বলছিল, আমেরিকা তাদের দেশ নয়, তারা যেন বিদেয় হয়    আমেরিকা থেকে। আদম যখন চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিল, তাকে রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্দুক নিয়ে  ফিরে এসে সে গুলি করে ভারতীয় হিন্দুদের।   এই ঘটনার পর আমেরিকার অভিবাসি   হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে যাওয়ার পর থেকে যেভাবে  আমেরিকার মুসলিমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ঠিক সেভাবে এখন ভুগছে হিন্দুরা। আমেরিকার  বাদামি হিন্দুরা এখন  অনুমান করতে পারছে তাদের  চেহারায় আর   বাদামি  মুসলিমদের চেহারায়  পার্থক্য নেই, আর থাকলেও তা  আমেরিকার সাদা  খৃস্টানদের    সবার বোঝা সম্ভব নয়।  ওরা তো মুসলমানের পাগড়ি আর শিখ দের পাগড়ির মধ্যেও পার্থক্য করতে জানে না। নাইন ইলেভেনের পর কতগুলো শিখকে মুসলমান ভেবে ওরা খুন করেছে, হিসেব আছে?
মুসলিমবিরোধি হিন্দুরা যদি মনে করে ট্রাম্প তাদের বন্ধু, কারণ ট্রাম্প মুসলিমদের শ্ত্রু,  তবে ভুল করছে তারা।  ট্রাম্প তাদের বন্ধু হতে পারে না। কারণ ট্রাম্প কালো-বাদামি-হলুদ বিরোধি লোক। ট্রাম্প বর্ণবাদি। ট্রাম্প পছন্দ করেন সাদার প্রভুত্ব। ধনীর প্রভুত্ব। ট্রাম্প নারী স্বাধীনতা বিরোধি। পঙ্গু বিরোধি। ট্রাম্প মানবতাবিরোধি। ওপরে ওপরে হিন্দুর সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখালেও ট্রাম্প আসলে তাদের বন্ধু নয়। একজন বর্ণবাদি সাদা লোক কোনও বাদামি লোকের  বন্ধু হতে পারে না।   বাদামি লোক অমুসলিম হলেও পারে না। মেক্সিকানরা তো অমুসলিম, তাদের বন্ধু হতে তো ট্রাম্প পারলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর   এতকালের বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ককে নষ্ট  করার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করেছেন ট্রাম্প।  বেছে বেছে ট্রাম্পপন্থীরা শুধু মুসলিম অভিবাসিদের  ক্ষতি করবে, কিন্তু অন্য  অভিবাসির ক্ষতি করবে না তা হয় না। কঠোর ইমিগ্রেশন নীতিতে শুধু মুসলিমরাই বাধাগ্রস্ত হবে না, অমুসলিমরাও হবে। হচ্ছেও।
ট্রাম্প জেতার দশ দিনের মধ্যে মানুষের প্রতি ঘৃণাজনিত  অপরাধ প্রচুর বেড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যে অপরাধের সংখ্যা  দিনে ১ থেকে ৯ এর মধ্যে থাকতো, সেটা হয়ে গেল ট্রাম্প জেতার পরদিন ২০০, আর বাকি ন’দিনে ৮৬৭। ট্রাম্প জেতার পর নিউইয়র্কে অপরাধের সংখ্যা   ১১৫ গুণ বেড়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার মুসলিমবিদ্বেষী  দলের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধ ৬৭% বেড়েছে। আমেরিকার মুসলিম-বিদ্বেষের কারণ খুঁজতে গেলে মূলত যা পাওয়া যায় তা হলো, আমেরিকার মাটিতে ঘটা   মুসলিম সন্ত্রাসীদের  সন্ত্রাস।  
ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প আর তার স্বামী জারেদ কুশনার উভয়ই ইহুদি। জারেদকে বিয়ে করার সময় ইভাঙ্কা ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছে। ট্রাম্প নিজে ইজরাইল পন্থী।  কিন্তু নির্বাচনের পর  যাদের ওপর হামলা করেছে ট্রাম্প সমর্থক বর্ণবাদিরা, তাদের প্রায় অর্ধেকই ছিল ইহুদি।  কেউ একজন বলেছিলেন না,  ঘৃণা আসলে যাদের ঘৃণা করা হয়েছে তাদের যত না ক্ষতি করে, তার চেয়ে বেশি করে ঘৃণাকারীদের? 
মুসলিম বিরোধি বর্ণবাদি  দলের সংখ্যা  গত বছর বেশ বেড়েছে। বেড়েছে বলেই ট্রাম্পের মতো একজন অরাজনীতিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। না ইহুদিদের, না হিন্দুদের, না বৌদ্ধদের, না শিখদের উপকার হবে ট্রাম্প দ্বারা। ট্রাম্পের কারণে মুসলিমদের ক্ষতি হবে হয়ত বেশি, কিন্তু অমুসলিমদের লাভ কিছু হবে না। যে লোক মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না, নারীকে অসম্মান করতে যাঁর বাধে না, সে লোক কোনও সম্প্রদায়ের জন্যই মঙ্গল আনতে পারেন না। যে লোকের মনে থিকথিক করছে নিজের প্রতি অহঙ্কার আর অন্যের প্রতি ঘৃণা – সে লোক তোমার শত্রুর শত্রু হলেও তোমার বন্ধু হতে পারে না।

লেখক: কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ