X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্ল্যাকবোর্ড চাই...

তুষার আবদুল্লাহ
০৪ মার্চ ২০১৭, ১৩:৪৭আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৭, ১৩:৪৯

তুষার আবদুল্লাহ ব্ল্যাকবোর্ড দরকার। সঙ্গে একটা খড়িমাটি বা চক। ব্ল্যাকবোর্ড হতে হবে আবার আমার স্কুলের ক্লাসরুমের মতো। যদ্দুর মনে পড়ে বিশ ফুট প্রশস্ত ছিল। উচ্চতায় পাঁচ ফুট হবে। ক্লাসের বিরতিতে চক হাতে লিখতে শুরু করতাম। মনে জমে থাকা কতো কথা। যেই কথা বাড়িতে কেউ শুনতে চাইতো না। স্কুলে শিক্ষকদের সামনে তোলা যেত না। বন্ধুরাও কান দিত না। আমি সেই কথাগুলো লিখতে থাকতাম। ক্লাসে হাসলে কেন শাস্তি পেতে হবে, অভিভাবকরা কেন সন্তানের সামনে মিথ্যে বলে, অন্যকে নিয়ে গীবত করে, একই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবহার কেন স্বচ্ছলতার বিচারে বেশ কম হবে, সহপাঠীরা কেন স্কুল পালিয়ে নেশা করবে, অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে? এই ভাবনাগুলো ব্ল্যাকবোর্ডে নিজের মতো করে কত লিখেছি।
কখনও সহপাঠীরা পড়তো, শিক্ষকরাও পড়তেন। কোনও শিক্ষক বলতেন আমার ভাবনা ঠিক আছে, আবার ব্ল্যাকবোর্ড নষ্ট করার অপরাধে কোনও কোনও শিক্ষক বেত্রাঘাতও করেছেন। এখন ব্ল্যাকবোর্ড নেই, করপোরেট হোয়াইট বোর্ড চলে এসেছে। সেখানে রঙিন মার্কার দিয়ে লিখতে হয়। রঙিন মার্কারে আমার সাদাকালো ভাবনা লেখা যাবে না। সেখানে করপোরেটের গুণগান করতে হয় রঙ মিশিয়ে।
কিন্তু আমিতো খড়িমাটি দিয়ে লিখতে চাই- বইমেলায় এখন আর লেখক ঘিরে আড্ডা হচ্ছে না। আমলা-নেতা আর তাদের মোসাহেবদের ভিড়ে হারিয়ে গেছেন লেখক। প্রকাশকরা লেখককে নয়, লেখকই প্রকাশকদের তুলে ধরেছেন। লেখকরা হয়ে উঠছেন মডেল। বইমেলায় তাদের বিড়াল হণ্টনের চিত্র প্রদর্শিত হয় বোকাবাক্সে। রাজনীতি এখন সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্য। এখানে ভোট আর ক্ষমতার নিলাম বেশ জমকালো ভাবেই আয়োজিত হয়। জনতা, ভোটার, তাদের একদিনের রাজা হওয়ার দিন ফুরিয়ে গেছে। অবিসংবাদিত বা দিক নির্দেশক রাজনৈতিক বলে যারা ছিলেন নমস্য, তারা শুধুই ক্ষমতাভোগের ক্রেডিটকার্ড রূপে ব্যবহৃত। মানচিত্র কারও স্বপ্নে নেই, বিশ্বাসে নেই। সবার হাতে এখন ভোগের রেসিপি।
সব কিছুই ভোগ করে ফেলতে চায় মানুষ। শৈশবে গ্রামের এক রামছাগলের কথা শুনেছিলাম ঘাস, খড় থেকে শুরু করে কাগজ, সিগারেট, লোহা-তামা সবই খেয়ে নিতো সে। মানুষ এখন তাই করছে। নদী খাচ্ছে, মাঠ খাচ্ছে, গাছ খাচ্ছে, অফুরান খিদে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে সর্বভূক মানুষ। ভোগের থালায় দ্বিতীয় কোনও হাত বা হাতের ছায়া পড়লেই চিবিয়ে হজম।

ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে চাই, আমাদের শিক্ষা এখন সুপারশপে। শিক্ষা এখন ভোগের কৌশল শেখায়, নিজেকে পণ্য হিসেবে তৈরি করার ব্যাকরণ শেখাচ্ছে। বাজারে সরবরাহ করার জন্য পণ্য তৈরি হচ্ছে পাঠশালাগুলোতে। মানুষ এখন নিজের প্রতিকৃতির চেয়ে মুখোশ পড়ে থাকাতেই স্বাচ্ছন্দ পায়। শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখকরা নিজেদের ক্ষমতার পোষ্য ভেবেই গর্ববোধ করেন। লিখতে চাই বাতিঘরগুলো নিভে গেছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার সেখানে। মাকড়শা ইজারা নিয়েছে ঘরগুলোর। গ্রাম চুরি হয়ে যাচ্ছে। মেকি নগরায়ন, শহরের মিথ্যে জৌলসের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছে গ্রাম। শুদ্ধতা বলে কিছু নেই না বাতাস না বচন। কী করে বলি সময়টা আজকাল অসহ্য। সইতে পারছি না, তবু সয়ে যাওয়ার লড়াই।

লিখবো ব্ল্যাকবোর্ড পেলে। লিখবোই। যদি কেউ এসে মুছে দেয়, দেক না। মুছে দেওয়ার পরও, কিছু দাগতো ব্ল্যাকবোর্ডে রয়েই যায়। শুদ্ধ পাঠক, পড়ে নিবে সেই দাগ নিজের বর্ণমালায়...

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ