X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যমুখী মানুষ

তুষার আবদুল্লাহ
১১ মার্চ ২০১৭, ১৩:১৪আপডেট : ১১ মার্চ ২০১৭, ১৩:২৫

তুষার আবদুল্লাহ গঙ্গামতির চরে দাঁড়িয়েছিলাম সূর্যের অপেক্ষায়। পূর্বদিকটায় লাল আভা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলেও সূর্যের দেখা পাচ্ছিলাম না ভোর ছয়টাতেও। চারপাশে ভিড় করা মানুষেরা কেউ বলছেন এইতো আর পাঁচ মিনিট পর, কেউ বলছেন সাত মিনিট পর সূর্য উঁকি দেবেই। দুই-একজন আবার হতাশা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন- সূর্য ওঠে গেছে অনেক আগেই। মেঘের জন্য আজ আর সূর্যোদয় দেখা যাবে না। কিন্তু পূর্বাকাশে যে এক খণ্ড মেঘও নেই। সবাই যখন আমরা সূর্যমুখী, তখন এক মধ্যবয়সী এসে দাঁড়ালেন পাশে। তিনি গঙ্গামতি চরেরই বাসিন্দা। বললেন, পূবে তাকিয়ে আছেন, একবার পশ্চিমে তাকিয়ে দেখেন না। ফিরে তাকালাম পশ্চিমের দিকে। তাকাতেই মুহূর্তে বিস্ময়, মুগ্ধতায় হতবাক আমি। সোনা রং সমুদ্রের ঢেউ, বালুকা বেলায় ছড়িয়ে থাকা স্বর্ণালী আভা, আর তীরে ওঠে আসতে থাকা কাঁকড়াদের মিছিল থেকে কী করে চোখ সরিয়ে পূবে নেই।
পূর্বে যে সূর্য ওঠার কথা সেই কথাতো ভুলেই বসে আছি। ওই মধ্যবয়সী মানুষটাই আবার বললেন- দেখেন ওই সূর্য উঁকি মারছে। আমি চট করে পূবে ফিরতে পারলাম না। পশ্চিমের সুন্দর আমাকে মোহিত করে রেখেছিল। যখন পূবে ফিরলাম তখন সূর্য খানিকটা উপরে ওঠে এসেছে। মধ্যবয়সী মানুষটা আমার হাত স্পর্শ করে বললেন- খালি সূর্যের দিকে তাকায় থাকলে হবে? উল্টা দিকেও তাকাতে হয়। সূর্যের ক্ষমতা আছে আলো দেওয়ার, তাপ দেওয়ার, আমরা তাই সবাই ক্ষমতামুখী তাইনারে ভাই? সত্যিই এভাবেতো ভেবে দেখিনি। আমরা সবাইতো ক্ষমতার দিকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই আমরা ক্ষমতার তাপ নিতে, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে কাঙালিপনা করি। নিজেকে যতোটা নিঃস্ব করে দেওয়া যায় নৈতিক ভাবে, তার চূড়ান্ত অবনমন করেও চাই ক্ষমতার তাপ শরীরে নিতে। ক্ষমতার তাপ দেহে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে নিতে চাই সূর্যস্নাণের স্বাদ। আমাদের পেশাজীবী সমাজ ভালো পদায়ন, পদোন্নতির জন্য কেমন সূর্যমুখী হয়ে ফুটে থাকে সারাক্ষণ। রাজনীতিতেও কসমস ফুলকেও দেখা যায় সূর্যমুখীর লেবাস নিতে। গঙ্গামতির চরের ওই মধ্যবয়স্ক মানুষটির কাছ থেকেই জানা- সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে শুধু পূবের সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করলেই পূর্ণ সুন্দরকে দেখা হয় না জানা হয় না। এই সূর্য এক সময় মধ্য গগণেও এসে স্থির হয়, তারপর ধীরে ধীরে অস্ত যায়। সেই অস্তগামী সূর্যও রূপবতী। সুতরাং পূর্বের বিপরীত দিকটাও যে আলো ছড়িয়ে আছে, সেখানেও মানুষের ক্ষমতার অনিবার্য গন্তব্য, এই সত্য যদি অনুধাবন করা না যায় তাহলে সুন্দর পূর্ণতা পায় না। এই যে সূর্যকে অনুসরণ করে চলা মানুষ যখন আবার সূর্যাস্তের রূপে ডুবে যেতে থাকে, তখন কিন্তু পূর্ব আরেক সুন্দরের আয়োজন নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু সূর্যমুখী মানুষ সেই সুন্দরের দিকে ফিরে তাকাতে চায় না। মানুষ সূর্যেরই বন্দনায় দিনাতিপাত করতে থাকে।

মানুষ বরাবরই সূর্যের উপাসক। অর্থাৎ ক্ষমতার। যখন কোনও সূর্যরূপি তাপ হারিয়ে ফেলে, তখন মুহূর্তেই তার উপাসনা বন্ধ। বরং সূর্যের কলঙ্ক খুঁড়ে খুঁড়ে নিয়ে এসে তা ছড়িয়ে দেওয়াই মানুষের ধর্ম। এই ধর্মে মানুষ নতুন করে দীক্ষা নেয়নি। সৃষ্টি থেকেই মানুষ সূর্যের পেছনে ছুটেছে। ক্ষমতার পেছনে ছুটেছে। তবে সেই ছুটে চলার মধ্যে, সেই দীক্ষা এবং নিবেদনের মধ্যে পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ছিল। কিন্তু এখন সেই নিবেদনের মর্মার্থ নগদ প্রসাদ ভোগ করা। যেখানে প্রসাদ সেখানেই চেটেপুটে খেয়ে নেওয়া। সূর্যের আলোতে তাই এখন কেউ আলোকিত হচ্ছে না। সূর্যের আলোর এক ভেতরে যে অন্ধকার লুকিয়ে থাকে, সেখানেই নিমজ্জিত হচ্ছে সূর্য বা ক্ষমতার ভক্তকূলেরা।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ