X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেবল স্মৃতিচারণার দিন নয়

মহিবুল হাসান চৌধুরী
২৬ মার্চ ২০১৭, ২৩:৫৮আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১১:১৭

 

মহিবুল হাসান চৌধুরী ২৫ মার্চ কেবল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণার দিন নয়। ‘কালরাত্রি’ নামে পরিচিত দিনটি এখন দাফতরিকভাবেই ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একেবারে অগ্রভাগে থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারা পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে এই দিনটিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করার তাগিদ বোধ করেছে। কেউ হয়তো জানতে চাইতে পারেন, কালরাত্রির ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতার মধ্যে এর আবার দরকার পড়লো কেন?
হুম, এটার প্রয়োজন ছিল। কেননা ইতিহাস সংরক্ষণের প্রশ্নে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দেশ চলেছে। আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ আরেকটা পদ্ধতিতে। সংসদীয় পদ্ধতিতে এ দিনটির স্বীকৃতি অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল।
অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখুন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং তারও আগে আমরা নিজামি-মুজাহিদ-সাকার মতো ব্যক্তিদের সরকারের মন্ত্রী হিসেবে পুরস্কৃত হতে দেখেছি।
এই মানুষগুলো সবসময়ই দালাল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। তারা ছিল আত্মস্বীকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধী। ১৯৭১ সালের হত্যাযজ্ঞে যুক্ত ছিল তারাও।
নির্লজ্জভাবে তারা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা, আমাদের  সংবিধান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আমাদের নাগরিক সমাজকে প্রত্যাখ্যানের স্পর্ধা দেখিয়েছে। এই দেশের মানুষের জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাস না থাকা সত্ত্বেও তারা এ দেশের নেতাদের কাছ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করেছে।

প্রকাশ্যে তারা আমাদের ইতিহাস, আত্মত্যাগ আর লড়াই নিয়ে উপহাস-ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে। এখনও একটি রাজনৈতিক দল এই ব্যক্তিদের ঠাঁই দিচ্ছে। তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তাদেরকে শুধু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ক্ষমতাই দেওয়া হচ্ছে না; বরং তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে। সেই দলটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছাড়া আর কেউ নয়। দলটি  প্রায়ই দাবি করে থাকে, আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের প্রতিষ্ঠাতার সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু তাহলে আমাদের স্বাধীনতার চেতনার প্রতি তাদের অঙ্গীকার নেই কেন!

আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র যুদ্ধপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত করেই ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা শেষ করবে না।

নতুন প্রজন্মের জন্য নির্মম গণহত্যার যে ইতিহাস সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য গণহত্যার দিন হিসেবে ২৫ মার্চের গণহত্যার ইতিহাসের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আবশ্যক। সেই গণহত্যর কথা বলছি যা আমাদের এই বাংলাদেশের ইতিহাস, এর ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে আজও হুমকি।

গণহত্যার যথার্থ ঐতিহাসিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিএনপি এবং তার মিত্ররা এই দিনটিতে আমাদের ইতিহাসের পাতা থেকে মুছেও দিতে পারে, আমরা বিস্মিত হব না। বহু ঐতিহাসিক ঘটনায় তারা এমনটা করেছে।

ইতোপূর্বে তারা যে আচরণ করেছে; এমনকি এখনও করে চলছে তাতে করে আমাদের বাজে কিছু আশঙ্কা করার মতো কারণ রয়েছে। সামান্য রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য তারা যে কোনও কিছুই করতে পারে।

সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন। একইসঙ্গে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠিন প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকান। আমাদের উদ্বেগের কারণ আছে।

সরকারের অবস্থানকে তারা ‘সাজানো নাটক’ আখ্যা দিয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি। অথবা বিরোধী রাজনীতির বাস্তবতায় তাদের ভাষার স্বর; অর্থাৎ তারা যে ভাষায় কথা বলে। উগ্রবাদীদের ব্যাপারেও তাদের মৌন সমর্থন রয়েছে। এটাই তাদের প্রতি আমাদের উদ্বেগের কারণ।

এই রাজনৈতিক দলটি তাদের অর্জনের জন্য অতীতেও বহু আপস করেছে। এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানেও তাদের অবদান রয়েছে। এটা অতি ডানপন্থী গোঁড়া মৌলবাদীদের রাজনীতির মূল ধারায় নিয়ে এসেছে যারা এখন তালেবান স্টাইলের একটা সরকারের জন্য আহ্বান জানাতে পারে।

এ সমস্ত কারণে আমরা একটা রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ইতিহাসকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এতে আমাদের নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।

ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ইতিহাসের অনুপস্থিতি, জাতির স্বর্ণোজ্জ্বল অতীতকে ভুলে যাওয়া, পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের দোসরদের হাতে নিপীড়নের ইতিহাসকে ভুলে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের মোহমুক্তি ঘটাবে।

উদ্দেশ্যহীন একটা প্রজন্ম সহজেই চরমপন্থীদের শিকারে পরিণত হয়। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আমাদের আত্মত্যাগের যে জাতীয় ইতিহাস তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিএনপি’র সাম্প্রতিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক অবস্থানে আমাদের এমনটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে, তাদের পরিবর্তন হয়েছে।

তাদের সর্বশেষ মেয়াদের ক্ষমতায় ধর্মভিত্তিক রক্ষণশীলদের উত্থানে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। এ সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত, প্রগতিশীল শক্তির ওপর নির্যাতন এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।

আজকের হেফাত তাদের অতীত পাপের ফসল। আজকের জেএমবি তাদের অতীত তোষণ নীতির ফল। আমাদের এসব ভুলে গেলে চলবে না।

তাদের অতীত অপকর্মের আরও খতিয়ান রয়েছে। আমরা যদি তাকিয়ে দেকি, তারা এখন কী বলছে এবং কী করছে? এতে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সব কারণই রয়েছে।

আমরা সেই রাজনৈতিক দল, যাদের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। দেশটা ক্ষমতালোভী এলিটদের হাতে গিয়ে পড়বে না। সেটা ঠেকাতে আমরা আমাদের পক্ষে যা কিছু সম্ভব সবই আমরা করব। কোনও পরিণতির কথা চিন্তা না করেই এটা করতে হবে। আমরা এই দেশকে আরেকটি পাকিস্তানে পরিণত করার ঝুঁকি নিতে পারি না।  

লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট। আইনি প্রতিষ্ঠান দ্য লিগ্যাল সার্কেল-এর একজন অংশীদার।

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ