X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ শেখ হাসিনার ভারত সফর

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪৬আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪৮

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা দুটি প্রতিবেশী দেশ, তাদের উভয়েরই আছে উন্নয়ন স্পৃহা। তারা যদি দ্রুত উন্নয়নের পথে এগোয় তবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। বাংলাদেশ এবং ভারত তেমনি দুই প্রতিবেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে যে, তাকে শুধু কোনও একটি বিশেষ চুক্তির নিরিখে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশের একটি মহল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আসন্ন রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে প্রসঙ্গই বারবার সামনে নিয়ে আসছে। আসছে ৭-১০ এপ্রিল প্রধামন্ত্রীর এ সফরের সময়সূচি নির্ধারিত আছে।
২০০৮ এর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা দিল্লি গিয়েছেন, এসেছেন মনমোহন সিং এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রতিটি পর্যায়েই দুটি দেশ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়েছে নতুন নতুন পথে যা বহুবছর সম্ভব হয়নি। সম্পর্কের এই উষ্ণতা দুই দেশের মানুষ অনুভব করছে, যে সম্পর্ক ২০০১-২০০৬ মেয়াদে একেবারে বৈরিতায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা উচ্চারিত হচ্ছে একটি রাজনৈতিক মহল থেকে। অথচ এরাই চীনের সাথে পূর্ণ সামরিক চুক্তি করেছিল। দুটি দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র সামরিক খাতের চাইতে অন্য অনেক ক্ষেত্রে বড় হয়ে উঠছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগকে নিবিড়তর করে তুলে পরস্পরের বড় বাজার, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বর্ধিত চাহিদার ফায়দা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যখন বিশ্ববাজারে একটি বড় আর্থিক অঞ্চল হিসেবে দাঁড়াতে তৈরি হচ্ছে, তখন এই বিতর্ক অর্থহীন।

যুগের পর যুগ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে যা হয়নি গত আট বছরে তার থেকে অনেক বেশি হয়েছে। স্থল সীমান্ত চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি এসবের মধ্যে অন্যতম। আশা করা যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে তিস্তার পানি চুক্তিও হবে। তবে এই চুক্তি কেন হচ্ছে না বলে যারা চিৎকার করছে, তারা তাদের আমলে কী সাফল্য পেয়েছিলেন সেই আত্ম-জিজ্ঞাসা খুব জরুরি। ভারত বিরোধিতা যাদের রাজনৈতিক ট্রাম্প কার্ড তারা হয়তে খেয়াল করে দেখবেন যে, বাংলাদেশ যোগাযোগ ও সহযোগিতার বিস্তার ঘটিয়েছে চীন ও জাপানের সঙ্গেও। এশিয়া অঞ্চলের তিন শক্তিধর অর্থনীতির সঙ্গে এই নিবিড়তাকে দেখতে হবে চিরাচরিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে।

বাংলাদেশ আর ভারতের রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। আমাদের মাটির জন্য আমরা জীবন দিয়েছি, তেমনি জীবন দিয়েছেন ভারতীয়রাও। দুই দেশেরই বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তির কারণে ১৯৭৫-এ পাকিস্তানিরা আবার বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে যে পথে নিয়ে গিয়েছিল এরা, তাতে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়েছে বারবার। সময় এখন নতুন করে দৃষ্টি দেওয়ার আর সে চেষ্টাই করছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নেতৃত্ব।

শেখ হাসিনার গত আটটি বছরের শাসনামলে আলোচনার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রসঙ্গটি বড় গুরুত্ব পেয়েছে। অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের প্রসঙ্গটি বার বার ফিরে এসেছে। সামান্য কয়েকটি পণ্য বাদ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানিকৃত কোনও পণ্যের ওপর ভারত আমদানি শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্ত করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সীমান্তে ভারত বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদি শক্তিকে দমনই করেনি,  ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার অর্থ হলো, উভয়পক্ষই আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে উদগ্রীব। সেখানে প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা রাজনৈতিকভাবে উচ্চারণ করার মানে হলো স্বচ্ছ জলকে ঘোলা করার অপকৌশল।    

শেখ হাসিনার সফরের সময় দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক ২০-২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তবে তিনটি ইস্যু, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির কী হবে এবং চীন-বাংলাদেশের চলমান সম্পর্ক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর  কোনও প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়েই প্রধানত দুই দেশের মিডিয়া ও সুধী সমাজে সরব আলোচনা। চীনের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নানা স্তরে বিস্তৃত। বলতে গেলে, পাকিস্তানের পরে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই চীনের বড় অস্ত্র ক্রেতা। বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ভারত থেকে সরকার পুরনো অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন, চীন থেকেও পুরনো অস্ত্রই কিনছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি যে সাবমেরিন এসেছে সেগুলোও বেশ পুরনোই। প্রতিরক্ষা বিষয়টি স্পর্শকাতর। এখানে নানা ভাবনা চিন্তা করেই এগুতে হবে বাংলাদেশকে। নিশ্চয়ই সেই ভাবনা আছে শেখ হাসিনার। তবে একথা বলতেই হয়, কৌশলগত কারণে সামরিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ সূত্র কখনও একটি একক দেশ হতে পারে না। অস্ত্র আমদানির সূত্র বহুমুখী করার লক্ষ্যে চীনের মতো ভারতের সঙ্গেও থাকতে পারে সহযোগিতা।  

প্রধানমন্ত্রী যখন নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত করার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, কিন্তু আক্রান্ত হলে সমূচিত জবাব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে চায়’ তখন তার নিজের এবং সরকারের ভেতরকার শক্তি আঁচ করা যায়। বাংলাদেশ এখন একটা যুদ্ধ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসবাদের কবলে জাতিকে নিক্ষিপ্ত করেছে যারা তারাই বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ককে সবসময় তিক্ততায় রাখার পক্ষে কথা বলে যায়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, উদারতার পথে অগ্রসরতাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। সেখানে সরকারের দৃষ্টি চাই সবার আগে। আর সেখানেই ভারতের সঙ্গে আমাদের আর্থিক সম্পর্কের গুরুত্ব। এই সম্পর্ক গত কয়েক বছরে দ্রুত হারে বেড়েছে। বাণিজ্যের পাল্লা এখনও ভারতের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে থাকলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ বাড়ছে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়লে এই প্রক্রিয়া আরো গতি পাবে।

এখনও বাণিজ্যিক সফরের জন্য ভিসাসহ বেশ কিছু বিষয়ের জট ছাড়ানো বাকি আছে। আশা করছি দুই দেশের সরকারই এই বিষয়গুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। ভারতীয় ভাবনায়ও পরিবর্তন আসা দরকার। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এককালীন আর্থিক সাহায্য নয়, বাংলাদেশকে আন্তরিক ভাবে সাহায্য করবার ইচ্ছাটি যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে মোদি সরকারকে। এখনই সেরা সময়। শেখ হাসিনা এবং তার দলই পারে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে। ভারত-বিদ্বেষী চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় যাতে না হয়ে ওঠে ভারতের তরফে আন্তরিক সদিচ্ছা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎকে নতুন করে লিখতে পারে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ