X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারত সফর নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
০৬ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪২আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪৪

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান কখনোই ভুলবার নয়। ভারতীয় সৈন্যদের আত্মাহুতি আমাদের আজও চির কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত করে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সুদীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। সবসময়ই পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর আলোচনা ও সমাধান হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে শ্রমতী ইন্দিরা গান্ধী মিত্রবাহিনীকে ভারতে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা  ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই গঙ্গা পানিচুক্তি সম্পন্ন করেন। এবার আইনি প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমুদ্রসীমার সমাধান করেছেন। এমনকি স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়ে দুই দেশের ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। তারা নাগরিকত্ব ও পরিচয় পেয়েছে।
২০১৪ সালে ভারতের ক্ষমতায় আসে বিজেপি, ১৫ তম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন দুইদিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির বাংলাদেশ সফরে বহুল কাঙ্ক্ষিত স্থলচুক্তির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বিপাক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। নরেন্দ্র মোদি তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে  শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ এর ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। নরেদ্র মোদি শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গেই উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনে একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আজ গুরুত্বপূর্ণ তার প্রমাণ মোদির সফরে আমরা পেয়েছিলাম।
সাম্প্রতিক সময়ে আর্ন্তজাতিক মহলে আমাদের প্রশংসাও অন্যতম প্রমাণ বহন করছে। এটি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য যে উভয় সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গিয়েছিলেন। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। ভারতে তখন সরকারে ছিল কংগ্রেস সরকার। এবার মোদি সরকার। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থের হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন এবং সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেস দলের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর  ভারত সফর নিয়ে নানান আলোচনা বিতর্ক চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে কোনও চুক্তি হলে তা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই হবে, দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছুই করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলবে, নিজের বিবেক যদি ঠিক থাকে, দেশপ্রেম থাকে, আমার দেশের ক্ষতি অন্তত আমাদের দ্বারা হবে না’।  সফর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, সফরে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা হবে, সেগুলো প্রকাশ করা হবে; কিছুই গোপন রাখা হবে না। 

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের আগে মানুষকে ভুল বোঝাতে চাইছে বিএনপি। সেই চিরাচরিত ভারত বিরোধিতার রাজনীতির নামে নানান বক্তব্য দিচ্ছে। বিএনপি কোনোদিনই ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারেনি। কোন একটা সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে গঙ্গা পানিচুক্তি করতে পারেনি। ছিটমহল নিয়ে কোন কথা বলেনি। সমুদ্রসীমা নিয়ে যে কোনও সমাধান সম্ভব তা মনে হয় বিএনপির নেতৃত্বের রাডারে ধরাই পড়েনি কোনদিন। এখন প্রতিদিন তারা জাতিকে দেশের স্বার্থ গেলো গেলো বলে চিৎকার করছে। খালেদা জিয়া নবম সংসদে বিরোধী দলে থাকতে ভারত যান বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে, দেশ নিয়ে তাদের কোনও ভাবনা ছিল না, ক্ষমতার জন্য গিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর কোনও ধরনের প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে নরেন্দ্র মোদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দিতে ভারতীয় দূতাবাসের অফিস খোলার আগেই গিয়ে বসেছিল বিএনপির নেতারা। খুশিতে নিজেদের পার্টি অফিসে তারা মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। বিএনপি প্রচার করেছিল, বিজেপি নেতা অমিত শাহ নাকি খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন যা পরে অমিত শাহ নিজেই অস্বীকার করেন।

২০১৪ সালে মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসেন। খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের সাথে দেখা করার জন্য দীর্ঘসময় হোটেল লবিতে বসে ছিলেন যা দুইবাবরের প্রধানমন্ত্রীর আচরণ নয়, এতে দেশের ভাবমূর্তি হেয় করার শামিল। যদিও পরে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বাংলাদেশে আসলে বেগম জিয়া মোদিকে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি শোনাতে চাইলে খালেদা জিয়াকে ১০ ট্রাক অস্ত্র, প্রণব মুখার্জীতে সাক্ষাত না দেওয়া ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিএনপির সহযোগিতার বিষয়ে প্রশ্ল করলে কোনও জবাব মোদিকে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী। আসলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারতের পক্ষে আর ক্ষমতার বাইরে গেল ভারতের বিরোধিতা করে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এই ভারত বিরোধিতা ও আওয়ামী লীগকে ভারতে দালাল বানানোর নাটক চলে আসছে।

জানা গেছে, প্রতিরক্ষা  সহযোগিতার বিষয়ে এই সফরে সমঝোতা স্মারক সই হবে। তবে চুক্তি হতেও পারে বলে তিনি জানিয়েছেন, কিন্তু বিষয়টি কী তা স্পষ্ট নয়। এতে বোঝা যায়, কী সামরিক চুক্তি হবে বা আদৌ হবে কিনা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, চুক্তি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে সরকারের মন্ত্রী জানিয়েছেন, যাই হোক সমঝোতা বা চুক্তি সবই জনগণ জানতে পারবে।

এই সরকার অন্য কোনও দেশ যেমন চীন, জাপান বা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোন চুক্তি বা সমঝোতা করলে বিএনপি কোনও শব্দ করেনি। এখন কেন এই বিরোধিতা? এই বিরোধিতার সাথে যোগ হয়েছেন আমাদের তথাকথিত কিছু জ্ঞানী ও সুশীল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই সরকার কখনই কোনও দেশবিরোধী কাজ করেনি। যারা বিরোধিতা করছে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ এবং উগ্রতার প্রকাশ। বিএনপিরও উচিত এই পরিসংখ্যান করা যে তারা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কী কী করেছিল, যদিও সেই হিসেব কষলে  তাদের ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী হবে।

বিএনপি হয়ত ভুলে গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। কিন্তু বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। সারাবিশ্ব শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, পারস্পারিক যোগাযোগ ও মেধার আদান-প্রদান ছাড়া টিকে থাকা মুশকিল। ভারতও অনুধাবন করছে, যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশকে তাদের পাশে প্রয়োজন।  আবার আমাদের আরো উন্নতির জন্য, এগিয়ে যেতে সকলের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রেখে কাজ করতে হবে। বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যের বর্তমান অবস্থা যেমন আমাদের গর্বিত করে তেমনি এই সাফল্যধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে আমাদের সুসস্পর্কে নতুন মাইলফলক যুক্ত হবে এবং বিএনপির বিরোধিতার রাজনীতির কফিনে আরেকটি পেরেক লাগবে।

লেখক: পরিচালক, সিআরআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ