X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাওরের কান্না শুনতে কি পাও?

তুষার আবদুল্লাহ
০৮ এপ্রিল ২০১৭, ১২:২৯আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৩১

তুষার আবদুল্লাহ স্বল্প বিরতিতে এবার ভাটির দেশে যাওয়া হয়েছে দুই দফা। সুনামগঞ্জের যাদুকাঁটা নদী, বারিক্কা টিলা, লাউয়ের গড়, তাহিরপুরের শনির হাওরের রূপ দর্শন ছিল উছিলা। জলে ভরা হাওরের এক রূপ, আর মাঘ-ফাগুন-চৈত্রের হাওরের আরেক রূপ। এবার মাঘ-চৈত্র দুই মাসেই হাওরকে দেখেছি। অবারিত সবুজ আকাশকে কিভাবে ছুঁয়ে আছে, সেই সুন্দরের মুগ্ধতা আজও কাটেনি। এবার মুগ্ধ করেছে হাওরের ফোটা গোলাপ এবং অজানা অসংখ্য বুনোফুল। নিঃসর্গ গবেষকদের কাছ থেকে এবারই প্রথম জানা-হাওরে ফোটা সাদা গোলাপ এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা। হাওরে নাকি এক প্রকার স্ট্রবারি পাওয়া যায়, সেই স্ট্রবারিও এখানকার ভূমিজ। সফরে সঙ্গী যারা ছিলেন তারা অপলক চেয়ে ছিলেন হাওরের সবুজ ফসলের মাঠের দিকে। শনির হাওরের ধানের ক্ষেতে চৈতালী হাওয়ার দোলা দেখে কেউ কেউ বলছিলেন- ফলন এবার ভালোই হবে। দুই’একজনের কৌতূহল-এই অপার ফসলের মাঠে কে কী করে নিজেদের জমি চিনে নেয় ফলন ফলায়। আমি তাদের কৌতূহলের জবাব দিতে দিতে বলছিলাম সব সময় এই ফলন কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে না। কখনও কখনও আগাম বন্যা বা পাহাড়ি ঢল এসে ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নিঃস্ব হয় এই এক ফসলী এলাকার কৃষকেরা। এমন কয়েকটি আগাম বন্যায় ভাটির দেশে পেশাগত কাজে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা বিনিময় করছিলাম। কিভাবে পানির তোড়ে মুহূর্তের বিঘার পর পর বিঘা, একরের পর একর ফসলের মাঠ পানি হজম করে নেয়, সেই মুহূর্তটি বর্ণনার অতীত। একই ভাবে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কৃষক পরিবারটির যাপিত জীবনের ছিঁটে ফোঁটাই কেবল তুলে আনা যায় ক্যামরা এবং কলমে।
হাওর থেকে ফিরে গোলাপ ও বুনোফলের সৌরভে মোহিত থাকতেই নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ থেকে খবর আসতে থাকে উজানের ঢলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হাওরের ফসলের মাঠ, হাওর সংলগ্ন গ্রাম। কিশোরগঞ্জে মেঘনা, কালনী, কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্রা, ধলেশ্বরীসহ ছোটবড় সব নদীতে পানি বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। সুনামগঞ্জে একের পর এক  বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ২৫টি হাওরের ফসল। ঢলের পানি নেমে আসবে ভাটিতে প্রকৃতির নিয়মেই। কিন্তু সেই ঢল থেকে ফসল ও জনবসতি রক্ষার জন্য বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, বাঁধ মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দ আছে, চাহিদা আছে নতুন বাঁধ তৈরির। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরোধ, সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতির কারনে যথাসময়ে নতুন বাঁধ তৈরির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। পুরনো বাঁধগুলোর কাজও ছিল নিম্নমানের। ফলে পানির তোড় আটকে রাখতে পারেনি সেই বাঁধ। রক্ষণাবেক্ষণের টাকা স্থানীয় পর্যায়ে আত্মসাৎ হওয়াতে বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বাঁধ ধরে রাখতে পারেনি স্থানীয় মানুষ। কেবল বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব বা ত্রুটিই নয়, হাওর সংলগ্ন ভাটি এলাকার নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলার জন্যও আগাম বন্যা বা পাহাড়ী ঢলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। যখনই ঢল নামছে তখন লাখ লাখ হেক্টর ফসল জলে ভেসে যাওয়ার অসহায় সাক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের।

কৃষকদের উদ্বিগ্ন মুখ, তাদের চোখ দিয়ে নেমে আসা জলের ঢল আমাদের গণমাধ্যম এবার দেখাতে চায়নি নগরের মানুষদের। চিন্তক শ্রেণি নানা বিষয় নিয়ে ভাবনায় আছে, ব্যস্ত আছে। সেই ভাবনা ও ব্যস্ততা থেকে মুখ ফিরিয়ে আনা, ভাবনায় ছেদ টানতে চায়নি বোধহয় গণমাধ্যম। তাই  চৈত্রে ভাটি এলাকার মানুষের যখন সর্বনাশ, তখন গণমাধ্যমগুলোতে সেই খবর খুঁজে পেতে চোখের ঘাম ঝরাতে হয়েছে। হাওরের মানুষের কান্না শহর-নগরের চিৎকার-আস্ফালনের বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়তে পারেনি। এটি ব্যর্থতা ভাটি এলাকার মানুষেরই। জলেতে যাদের অর্ধেক জীবন, তারা কেন ষোলআনা জীবনের মানুষের সারিতে ঠাঁই পাবে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ