X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সিরিয়া হামলা

তসলিমা নাসরিন
০৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪০আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪২

তসলিমা নাসরিন ট্রাম্প বলেছিলেন ‘আমেরিকা প্রথম’। আমেরিকার স্বার্থ ছাড়া আর কিছু দেখতে চান না তিনি, আর কিছু বুঝতে চান না। কিন্তু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলা করেছেন বলে সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন ট্রাম্প। এখন হঠাৎ সিরিয়ার অসহায় মানুষদের আসাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন কেন তিনি! সিরিয়ার মুসলিমদের তো তিনি ‘মুসলিম ব্যান’-এর লিস্টেই রেখেছেন। যাকে ঘৃণা করো, তার জন্য ভালোবাসা এত উপচে উঠছে যে। সত্যিই কি  ট্রাম্প নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যের স্বার্থ দেখছেন? হোয়াইট হাউসে ঢুকে ইসলামি সন্ত্রাসী আইসিসের বিরুদ্ধে বলেছিলেন ট্রাম্প, সেই আইসিস এখন ট্রাম্পের পক্ষে জয়ধবনি দিচ্ছে। কারণ আইসিস চায় আসাদের ওপর হামলা হোক। আসাদ আইসিসের শত্রু।
ট্রাম্প আর পুতিনের মধ্যে অসাধারণ বন্ধুত্ব। এদিকে আবার আসাদ আর পুতিনও বন্ধু। পুতিন যখন আসাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সিরিয়া থেকে আসাদের শত্রু আইসিসকে হঠাতে চাইছেন, তখন ট্রাম্প গিয়ে আসাদকে গদি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বোমাবাজি শুরু করে দিলেন। ট্রাম্প ছিলেন আইসিস বিরোধী, পুতিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন ট্রাম্প, এটিই স্বাভাবিক ছিল। এখন কি দুই বন্ধু পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন? ধনীরা সাধারণত নিজেদের সম্পর্কটা ওপরে ওপরে যাই দেখতে হোক না কেন, ভেতরে ভেতরে ঠিক রাখেন। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ লেগে থাকবে, তত ধনী দেশগুলোর অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট হতে থাকবে। যে ঝগড়াঝাটি মেটাতে যুদ্ধের প্রয়োজন হয় না, যে সংঘাতের মোকাবিলা সম্ভব, তার জন্যও দেখি যুদ্ধের দামামা বাজে। একবিংশ শতাব্দিতেও দেখতে হয় নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু। সিরিয়ার এক ভুক্তভোগী বলেছেন, ‘রাসায়নিক হামলায় মৃত আশিটি মানুষ দেখেই বিমান হামলা চালানো হবে, ওই বিমান হামলায় তো আমরা হাজার হাজার মরবো’। সত্যি কথা। আসাদ ভয়ঙ্কর, তার চেয়ে শতগুণ ভয়ঙ্কর ট্রাম্প। সাদ্দাম ভয়ঙ্কর ছিলেন, তারও চেয়েও শতগুণ ভয়ঙ্কর ছিলেন বুশ। ইরাকের অতীত এবং বর্তমান ঘাঁটলেই তো দেখি।

আমি নিজের দেশের রাজনীতিই বুঝি না, পৃথিবীর রাজনীতি তো আরও বুঝি না। আমি শুধু জানি আসাদের অত্যাচার আমি সইতে পারি না, আইসিসের নৃশংসতা পারি না, ইউরোপ আমেরিকা ইসরায়েল বা অন্য কোনও দেশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে নিরপরাধ মানুষ মারলে সে মৃত্যুও সইতে পারি না। খুনোখুনি না করে কারও দুঃশাসন বন্ধ করা যায় না? এই প্রশ্নটি আমি নিজেকে বারবার করি,  করি আর লক্ষ করি আমি অসহায় আর অনাথের মতো একা।

আজ সকালে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ কী ‘সিরিয়া প্রথম’ হয়ে উঠলেন এই প্রশ্ন করাতে আমার এক আমেরিকান বন্ধু বললেন, ট্রাম্প ‘ট্রাম্প প্রথম’-এ বিশ্বাস করেন, আর কিছুতে নয়। বন্ধুটি ভুল বলেছেন বলে মনে হয় না। ট্রাম্পের সিরিয়া হামলাটা মূলত রাগে এবং আবেগে। ট্রাম সম্ভবত আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি বিদেশ নীতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানেন না। আসাদ এবং আসাদ বিরোধী সন্ত্রাসীদের সম্পর্কের জটিলতা বোঝার আগ্রহ ট্রাম্পের আছে বলে মনে হয় না। তবে যাই বলি, ট্রাম্প তাঁর আবেগকে অনুসরণ করলে সর্বনাশ করতেন। বাঁচিয়ে দিয়েছেন ম্যাকমাস্টার আর জিম মাটিস, তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আর প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি। তাঁরাই সিরিয়ার ওপর আমেরিকার আক্রমণকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। ট্রাম্পের ওপর ছেড়ে দিলে এর মধ্যে নিশ্চয়ই একটা বধ্যভূমি বানিয়ে ফেলতেন।

২০০৩ এ যেভাবে ইরাকে অবৈধভাবে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা, ট্রাম্পের হামলাও সেভাবে ঘটেছে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছো কেন, সুতরাং তোমাকে যে করেই হোক মারবো।

২০১১ থেকে সিরিয়ায় ৪ লাখ মানুষ মরেছে, তাদের প্রায় সবাই কিন্তু সাধারণ অস্ত্রে মারা গেছে, রাসায়নিক অস্ত্রে নয়। রাশিয়া আর আমেরিকা দু’দেশই সিরিয়ার মানুষদের মৃত্যু ঠেকাতে চাইছে, তারপরও কিন্তু মানুষ মারা যাচ্ছে। শান্তি চাইছে, শান্তি পাচ্ছে না। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না একবার হামলা করেই আমেরিকা চলে যাবে, নাকি আসাদকে সরিয়ে তারপর বিদেয় হবে। ট্রাম্পের জাতিসংঘের দূত নিকি হ্যালি বলেছেন, আরও আক্রমণ করা হবে যদি আসাদ আবারও রাসায়নিক হামলা করে।

এই আক্রমণ দ্বারা ট্রাম্প তুরস্ককে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি তুরস্কের সঙ্গে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যের আসাদ-বিরোধী আরব দেশগুলোকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি তাদের সঙ্গে আছেন। রাশিয়াকেও একটু চাপের মধ্যে রাখা গেলো, আর যারা বলে বেড়াচ্ছে ট্রাম্প রাশিয়ার পুতুল, তাদেরকেও বুঝিয়ে দেওয়া গেলো তিনি মোটেও পুতুল নন। সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছেন ট্রাম্প, নিজের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে করেছেন। সিরিয়ার অসহায় মানুষদের বাঁচানোর জন্য নয়। সিরিয়ার গরিব, বাদামি, তার ওপর মুসলিম মানুষদের জন্য  ট্রাম্পের আসলে কোনও সহানুভূতি নেই, আমরা তার প্রমাণ বহুবার পেয়েছি। 

লেখক: কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ