X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতির ধর্ম

তুষার আবদুল্লাহ
১৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:৫১আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:০২

তুষার আবদুল্লাহ আমরা বাড়ি ফিরে যাইনি। উৎসবকে মাঝপথে, অসম্পূর্ণ রেখে কি ঘরে ফেরা যায়? কোনোভাবেই না। তাই ১৪২৪’র প্রথম দিনটিতে আমরা প্রায় মধ্যরাত অবধি উৎসবে মেতে ছিলাম। এই যে বলছি ‘আমরা’ মেতে ছিলাম, এই ‘আমরা’ কারা? বাংলা নামের ভূ-খণ্ডের সন্তানরাই হচ্ছি সেই ‘আমরা’। উৎসব সেই আমাদের। এই আমাদের ধর্ম কিন্তু একটাই- বাঙলা। কারণ এই জনপদের যারা ভূমিপুত্র-ভূমিকণ্যা তাদের জীবন-চারনের অভ্যাসইতো ধর্ম। মুসলমান যে ভাবে খাদ্যগ্রহণ করে, যে খাবার খায়, যেভাবে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তার একটি আলাদা স্বাতন্ত্র্য আছে। অন্য জনপদের মুসলমানদের অভ্যাসের সঙ্গে তফাৎ স্পষ্ট। একই ভাবে সনাতন হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনুসারীদের যে অভ্যাস তাই এই জনপদের মানুষের ধর্ম।
একক ভাবে, বা একক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ধর্ম আছে। সেই ধর্মের প্রতি তাদের নিজেদের অনুরাগ, বিশ্বাস আছে থাকবে, একই ভাবে অন্য ধর্মের জীবন আচরণের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের যেই অভ্যাস, তাই এই অঞ্চলের মানুষের ধর্ম। সেই ধর্মকে সংস্কৃতি বা কৃষ্টি বলে জানি। শুক্রবার সারাদেশে সেই কৃষ্টি ধর্মের উৎসব উদযাপিত হয়ে গেলো।
ভোর থেকে বেলা এগারটা অবধি টেলিভিশনের পর্দায় সারাদেশের উৎসব দেখেছি। অহংবোধ হয়েছে যখন দেখেছি চট্টগ্রাম চারুকলার শিক্ষার্থীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে পথে নেমে এসেছিল। তাদের উদযাপনে যে কালো রঙ দেওয়া হয়েছিল, উৎসবের রঙের কাছে তা পরাজিত হয়েছে। আনন্দ পেয়েছি রাজশাহী চারুকলার শোভাযাত্রা দেখে। সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ, বরিশালের উদযাপন দেখে মোহিত হয়েছি। সেদিক থেকে রোদের তাপ নাকি নিরাপত্তার বেড়াজাল, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চোখ রাঙানিতে পথে কম নেমেছিল মানুষ? স্বস্তির জায়গা ছিল উৎসব এলাকাগুলোতে মোটরসাইকেলের যন্ত্রণা ছিল না। মানুষ নির্বিঘ্নে পথচলতে পেরেছে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ও কড়া নজরদারীতে বখাটেপনা রোধ করা গেছে এটা বলতে পারি। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু এবং শেষে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী চোখকে অস্বস্তি দিয়েছে। মনে করিয়ে দিয়েছে বৈরি সময়ে আছি আমরা। বিরুদ্ধ সময় পাড়ি দিচ্ছি আমরা।
যখন নিজে পথে নেমে এলাম, তখন উপলব্ধি হলো- বিরুদ্ধ সময়ে আছি আমরা এটা ঠিক। তবে সেই বৈরি স্রোতে আমরা নিজেরা নেমে পড়িনি। আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। উৎসব ময়দানের খবর হলো- দেখেছি সকল ধর্ম ও মতের মানুষ একযোগে উৎসবে মেতে আছে। পথ চলছে পাশাপাশি। কোথাও কোথাও হাতে হাত রেখে চলতেও দেখেছি। এক সঙ্গে বসে আড্ডায় মেতে উঠতে দেখেছি কতজনকে। যদি পোশাক বা উপকরণ দিয়ে ধর্মকে সনাক্ত করা হয়, সেই অবস্থান থেকেও বলতে পারি এই উৎসব ছিল সম্মিলিত মানুষের।

বিকাল পাঁচটার মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। নিরাপত্তার স্বার্থের ছুঁতো তুলে বলা হয়েছিল সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে সূর্যাস্তের আগে। রাষ্ট্র সেই মতো বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল পাঁচটার মধ্যেই। উৎসবের মানুষেরা সেই বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাবে, সেই ভাবনা মেলেনি। বরং গোধূলী লগ্ন থেকে উৎসবের মাঠে ভীড় জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। উদযাপনের মানুষেরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে উৎসবের অলি-গলিতে।

এই যে উৎসবে সংস্কৃতি ধর্মে বিশ্বাসীরাই শরিক হয়েছিলেন। তাদের প্রফু্ল্লতা, উৎসবে মুখর হয়ে থাকা আমাকে, আমাদের এক নতুন শক্তি বা বলের জোগান দিয়েছে। সেই শক্তি সংস্কৃতির শক্তি। যে বৈরি বা বিরুদ্ধ সময় আমরা অতিক্রম করছি, সেই সময়ে এই সংস্কৃতি ধর্মের মানুষদের এক কাতারে দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইবাদতের মাঠে হাজির সকলে। এখন কেবল শৃঙ্খল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া প্রয়োজন। সংস্কৃতির ইবাদত দিয়েই অশুভ, এবং সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধ করতে হবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ