X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁকো নাড়াস নে ট্রাম্প

তসলিমা নাসরিন
১৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:০৩আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:০৫

তসলিমা নাসরিন ঘটনা হলো, সিরিয়ার ওপর ৫৯টা তোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, কোরিয়ার উপসাগরে ‘আরমাডা’ নৌবহর পাঠিয়ে, আর আফগানিস্তানে ‘সব বোমার মা বোমা’ ছুঁড়ে গোটা পৃথিবীটাকে একটু নড়ে চড়ে বসাতে চেয়েছেন ট্রাম্প। জবাব আর কেউ না দিলেও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন দিয়েছেন। সামরিক প্রদর্শনীতে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হাজির করে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, আমেরিকায় বোমা ফেলার ক্ষমতা আছে তাঁর সেনাবাহিনীর। ওদিকে, উন্নত পরমাণু বোমা পরীক্ষার কথা বলতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। নেভাদার মরুভূমিতে উন্নত পরমাণু বোমা ‘বি৬১-১২’ নিয়ে পরীক্ষা সফলও হয়েছে। এসব বোমা হামলা, পরমাণু বোমা পরীক্ষা যত না বাশার আল-আসাদ আর আইসিসের জন্য, তার চেয়ে বেশি সম্ভবত চীন আর উত্তর কোরিয়ার জন্যে। ওদের ভয় দেখাতেই।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে তিনটি রকেট গিয়ে পড়েছে জাপানের কাছে সাগরে। তাতে রেগে মেগে আগুন আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া। মিত্র দেশ চীনও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র  পরীক্ষা ভালো চোখে দেখেনি। আবার ট্রাম্পের নৌবহর পাঠানোরও সমালোচনা করেছে চীন। চীন যদি উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে আমেরিকাই ব্যবস্থা নেবে বলেও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল সুং স্কোয়ারে সামরিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল উত্তর কোরিয়া সরকার। কিম জং উনের  সহযোগী চো রিয়ং হো সেদিন জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী সব ধরনের আক্রমণের জবাব দিতে তৈরি। খুব ভুল বলেননি। ওই প্রদর্শনীতে দু’টি নতুন ‘ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল’-এর আবরণ হাজির করেছে কিমের সেনাবাহিনী। ‘ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল’, বিজ্ঞানীরা বলেন, সহজেই আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে।

উত্তর কোরিয়া কী পারে, কতটুকু পারে, এ নিয়ে শেষ খবর যা জানা যায়, তা হলো, বিষাক্ত সারিন গ্যাস ভরা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। ষষ্ঠ পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যও প্রস্তুত দেশটি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়া যে-কোনও দিন জাপানের ওপর সারিন গ্যাস হামলা চালাতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া  বলছে, উত্তর কোরিয়ার কাছে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টন রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে। ২০১২ সালের একটি রিপোর্টে আমেরিকাও জানিয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার ভাণ্ডারে প্রাণঘাতী নার্ভ গ্যাস রয়েছে।

কিম জং উন পারমানবিক বোমা পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন শুনে ট্রাম্প টুইট করেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া ইচ্ছে করে গণ্ডগোল বাঁধাতে চাইছেন’। কিম জং উন গণ্ডগোল বাঁধাতে চাইছেন বুঝলাম, ট্রাম্প কী চাইছেন? ট্রাম্পও কিন্তু গণ্ডগোল বাঁধাতে চাইছেন।

ট্রাম্প যে পদ্ধতিতে উত্তর কোরিয়াকে ভয় দেখাতে চাইছেন, তা ভালো পদ্ধতি নয়। তুমি যদি সত্যিই উত্তর কোরিয়াকে চাও কোনওরকম পরমাণু যুদ্ধে না যেতে, তা হলে তার দিকে নৌবহর পাঠানোর কোনও দরকার ছিল না। নৌবহর পাঠালে লাভের চেয়ে বরং খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ভয় পেয়ে মন্দ কাজ বন্ধ করার লোক নন কিম জং-উন। 

উত্তর কোরিয়া যেহেতু কথা শোনার দেশ নয়, আর চীন যেহেতু উত্তর কোরিয়ার বন্ধু, চীনকে ধরেছে আমেরিকা, ‘উত্তর কোরিয়ার লাগাম ধরে রাখো’। চীন মাঝখান থেকে পড়েছে বিপদে। কিছুটা অনুযোগ করছে বটে, বলছে বটে, ‘ভাই আমেরিকা মাথা ঠাণ্ডা করো’। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রেখে কবে কাজ করেছে আমেরিকা? আমেরিকার মনে রাখা উচিত, কিম জং-উন সাদ্দাম হোসেনও নন, কর্নেল গাদ্দাফিও নন। কিম জং-উনকে ওদের মতো মরতে হবে না। কিমের কাছে আছে পারমাণবিক বোমা। সত্যিকার ‘মাস ডেস্ট্রাক্সন উইপেন’।

তাই ট্রাম্পকে বলি, সাঁকো নাড়াস নে ট্রাম্প।

ট্রাম্প আর কিম জং-উন দুজনেই মাথা-খারাপ লোক। কিন্তু একার সিদ্ধান্তে ট্রাম্প পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করতে পারবেন না, কংগ্রেস আপত্তি জানালে ট্রাম্পের একার সিদ্ধান্তে কিছু হওয়ার নয়। কিন্তু কিমের বেলায় তা নয়। কিম জং-উন গণতন্ত্র মানেন না। তিনি স্বৈরাচারী লোক। তার যা ইচ্ছে, তিনি তাই করেন। যেখানে ইচ্ছে সেখানে বোমা ছুঁড়তে তিনি পারবেন। তার মন্ত্রী সভার কেউ বাধা দিলে অবলীলায় তিনি তাকে মেরে ফেলবেন। এরকম ফেলেছেনও অনেক। নিজের আত্মীয় স্বজনকেও ক্ষমা করেননি। এই কিম যদি জানেন আমেরিকা তাকে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তিনি কিন্তু আমেরিকায় বোমা ফেলতে যাবেন। একবারও ভাববেন না আমেরিকার নিরীহ ক’জন প্রাণী মরবে, আমেরিকার বাইরের কত সহস্র নিরীহ প্রাণীর মৃত্যু ঘটবে। মাথা-খারাপ লোক অন্যকে নিয়ে ভাবেন না। এখন ট্রাম্পকেই বুঝে চলতে হবে। ট্রাম্প উত্যক্ত করলে কিম কোন দিকে বোমা ছুঁড়তে থাকবেন কেউ জানে না। পৃথিবীর কোন দিকটা তিনি ধ্বংস করবেন, কোনও অঞ্চল্টা আস্ত রাখবেন তা সম্পূর্ণই নির্ভর করে তার ওপর। 

এখন সাঁকো নাড়ালে যদি পাগল খেপে যায়, সাঁকো নাড়ালে চলবে না। উত্তর কোরিয়া অস্ত্র মারণাস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার মতো থাকুক। সামরিক প্রদর্শনীতে ওসব দেখাক। কিন্তু ওসব যেন ব্যবহার করার ইচ্ছে না করে কেউ।

মানুষ এই সভ্যতা তিল তিল করে গড়েছে, কারও অধিকার নেই একে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেওয়ার। কিম যদি হামলা চালান, তবেই তাকে প্রতিহত করতে আমেরিকার দাঁড়ানো উচিত। আগ বাড়িয়ে উত্তর কোরিয়ার জলে নৌবহর পাঠানো, এদেশে ওদেশে বড় বড় বোমা ফেলে নিজের ক্ষমতা বোঝানো, সাঁকো নাড়িয়ে পাগল খেপানো একেবারেই উচিত নয়। এতে ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলার আশঙ্কা অনেক বেশি।

লেখক: কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ